ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইনশূন্য রাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আইনশূন্য রাষ্ট্র

রাষ্ট্র আইন ছাড়া চলে না। আইন-কানুন, নিয়ম-নীতির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে, পরিচালনে সরকার দরকার হয়। আর এই সরকার দেশ চালানো তথা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আইন প্রণয়ন করার কথা বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রে গণবিরোধী আইনও প্রণীত হয়। সামরিক আইনও আইন। জংলি আইনেরও নিজস্ব বিধিবিধান রয়েছে। এসবের ইতি-নেতি যাই থাক না কেন কিন্তু আইনশূন্য পরিস্থিতিও দেখা দিতে পারে। অথচ সরকার রয়েছে, প্রশাসন রয়েছে, সকল বাহিনীও রয়েছে। কিন্তু আইনশূন্য রাষ্ট্র যদি সরকারপ্রধান ঘোষণা করে তার নিজের দেশকেই, তবে বিস্ময় জাগা স্বাভাবিক। বিদ্যমান আইন স্থগিত থাকলে অন্যরকম আইনের উত্থান হতেই পারে। কিন্তু এশীয় মহাদেশের দেশ ফিলিপিন্সের সরকারপ্রধান তথা প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে যখন নিজেই ঘোষণা দেন, সহিংসতার কারণে দেশজুড়ে ‘স্টেট অব ল’ লেসনেস’ ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছেন। বোমা হামলার জেরে তিনি ফিলিপিন্সজুড়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছেন। যাকে ফিলিপিন্সের আইনে বলা হয় আইনশূন্য পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, এটা সামরিক আইন নয়। জনগণ ও জাতির বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে না ওঠা পর্যন্ত এটি সামরিক আইন নয়। এ দেশকে রক্ষা করা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব বলে তিনি মনে করেন। তবে বিশেষ সতর্কতা জারির অর্থই হলো; সহিংসতা দমনে প্রেসিডেন্ট প্রয়োজন মনে করলে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামাতে পারবেন। তবে এটিকে জরুরী অবস্থাও বলা হচ্ছে না। প্রেসিডেন্টকে এই ঘোষণা দিতে হলো, যখন তিনি তার নিজ শহর দাভাওতে অবকাশযাপনকালে বিলাসবহুল হোটেলে সভা করছিলেন। দুতের্তের এটা নিজ শহর। গত ২২ বছরের বেশি তিনি এই শহরের মেয়র ছিলেন। তার পুত্র পাওলো দুতের্তে বর্তমান মেয়র। ওই শহরে অসম্ভব জনপ্রিয় দু’জনেই। গত মে মাসে দুতের্তে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মাদক চক্র নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়ে ৩০ জুন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গত দু’মাস সংঘবদ্ধ মাদকচক্রে জড়িত প্রায় দুই হাজার লোকের মৃত্যু হয়। অধিকাংশই পুলিশী অভিযানে। এজন্য বিশ্বের মাদক ব্যবসায়ীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ। এভাবে হত্যাকা- বন্ধে জাতিসংঘ আহ্বান জানালেও দুতের্তে হুমকি দিয়েছেন, তিনি জাতিসংঘের সদস্য পদ থেকে সরে আসবেন। প্রয়োজনে আরেকটি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করবেন। এসবই মূলত কথার কথা। মাদকাসক্তির মাত্রা ফিলিপিন্সে ব্যাপক বেড়েছে বলে মনে করছেন প্রেসিডেন্ট। এমনিতেই দেশজুড়ে নানা সংস্কারে হাত দিয়েছেন। কিন্তু মাফিয়াচক্র তাকে সহ্য করবে খুব বেশিদিন, তা মনে হয় না। যে কারণে যে হোটেলে তিনি অবস্থান করছিলেন, তার কাছাকাছি একটি বাজারে বিস্ফোরিত বোমায় ১৪জন নিহত ও অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছে। নিñিদ্র নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে এভাবে বোমা হামলা সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে বলা যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অপরাধ, মাদক ও বিদ্রোহ দমনে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী তাদের উদ্যোগ দ্বিগুণ করছে। তবে রাষ্ট্রটির দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ মিন্দানাওয়ে মুসলিম মরো বিদ্রোহীদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে লড়াই হয়। মরোদের অনেকের বিরুদ্ধে আইএস সংযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিদ্রোহীরা অপহরণ করে জিম্মি বানিয়ে লাখ লাখ ডলার আদায় করছে। তাছাড়া তাদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সংযোগ রয়েছে। যা অস্ত্র প্রাপ্তিতে সহায়ক হয়। প্রশ্ন ওঠে নিজ শহর দাভাওকে মাদকমুক্ত করতে যার দুই দশক লেগেছে, তিনি কত দ্রুত পুরো ফিলিপিন্সকে মাদক অপরাধ ও বিদ্রোহমুক্ত করতে পারবেন, তা এখন দেখার বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির মতো অপরাধে ফিলিপিনোরা জড়িত থাকার ঘৃণ্য অপরাধের বিচার হবে, এমন আশা বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই করে। দুতের্তে তার কার্যক্রমের বিষয়ে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে পারবেনÑ এমন প্রত্যাশা আমাদেরও।
×