ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান

রূপনগরী আমাত্রিস এখন অন্ধকারে

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রূপনগরী আমাত্রিস এখন অন্ধকারে

রূপনগরী আমাত্রিস-ইতালির লাজিও প্রদেশের এক ছোট্ট শহর। গত বছর করা এক জনমত জরিপে নগরীটি তার অপার সৌন্দর্য নিয়ে উঠে আসে ইতালির অন্যতম সুন্দর নগরীর তালিকায়। দুদুটি সিসমিক ফলট লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ইতালির এই ছোট্ট শহরটি সেই মধ্যযুগ থেকে অসংখ্য বার ভূমিকম্প প্রতিরোধ করে টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছে ২৪ আগস্ট মাত্র ৬.২ মাত্রার এক ভূমিকম্পে। ইতালির ভূস্বর্গ আমাত্রিস আজ এক বিধ্বস্ত শোকের নগরী। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক ভূমিকম্পে নিহত ২৯২ জনের মধ্যে ২৩১টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে আমাত্রিস থেকে। এর মধ্যে কেবল শহরের অধিবাসীই নয়, ইতালির অন্যান্য শহর থেকে আসা পর্যটকসহ বিদেশী নাগরিকও রয়েছে। বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে ১১ জন রুমানিয়ান ও তিনজন ব্রিটন এর পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। মৃতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিখোঁজ ১০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে যারা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন বলে বিশ্বাস। তাদের উদ্ধারে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন উদ্ধার কর্মীরা। গত ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার বিধ্বস্ত আমাত্রিসে মৃতদের স্মরণে এক রাষ্ট্রীয় শোকানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ইতালির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পোপ ফ্রান্সিসের একজন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি মৃতদের প্রতি সম্মাননা জানান, সেই সঙ্গে উদ্ধার কাজে, ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকম সহযোগিতা ও শহরটির পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন তারা। রুমানিয়ার প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত থেকে শোক জ্ঞাপন করেন। পাহাড় চূড়ায় তড়িঘড়ি করে নির্মিত শোক মঞ্চে আরও সমবেত হন নিহতদের স্বজনরা। প্রিয়জনের সারিবদ্ধ ৩৮টি শবাধারে তারা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ছবি স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ঘটনায় নিহতদের নাম পাঠ করা হয় সেই সঙ্গে অনুষ্ঠান চলাকালীন উড়ানো হয় সাদা বেলুন। সভার জন্য প্রথমে আমাত্রিস থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরবর্তী রেইটি শহরকে নির্বাচন করা হলে নির্মাণ কর্মীদের বয়কটের হুমকি ও স্থানীয় অধিবাসীদের ক্ষোভ বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রেনযি পরিকল্পনা পরিবর্তনের নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দেয়া সংস্কারের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি নির্মাণ শিল্পে মাফিয়া প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে দরিদ্রদের জন্য নির্মাণ ও সংস্কার ব্যবস্থায় অনিয়ম ও দুর্নীতির থাবা বিস্তার করায় ধ্বংসের পরিমাণ এবং মৃতের সংখ্যা এত বৃদ্ধি পেয়েছে। তদন্তকারীরা অতি সম্প্রতি সংস্কার-কৃত বেল টাওয়ার এর সংস্কার কাজকে ঘিরে তাদের তদন্ত পরিচালনা করছেন, যেটি ধসে একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আদালতের নির্দেশে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি স্কুল ভবনকেও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। এই ভবনটির সংস্কার সমাপ্ত হয়েছিল ভূমিকম্প প্রতিরোধ করে টিকে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। সেই সঙ্গে সংস্কার ও পুনর্গঠন কার্যক্রম মাফিয়া প্রভাব মুক্ত রাখার দাবিটিও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে । রূপনগরী আমাত্রিস আজ ধ্বংসস্তূপ, বেঁচে থাকা মানুষগুলো স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁবুতে, আছেন মানবিক সাহায্যের অপেক্ষায়। কেবল রাষ্ট্র নয় পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ সবধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের দিকে। সবার সহানুভূতি আর অনুপ্রেরণায় বিপন্ন মানুষগুলো আবার উঠে দাঁড়াবেন, জীবন তার নিজস্ব নিয়মে এগিয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায় নির্মাণ ও সংস্কার শেষে আমাত্রিস কি ফিরে পাবে তার হারানো সৌন্দর্য? নাকি পৃথিবীর রাঙ্গা রাজকন্যাদের মতো রূপ নিয়ে সে চলে যাবে দূরে? সূত্র : টাইম
×