ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প কি ডুবতে বসেছেন!

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ট্রাম্প কি ডুবতে বসেছেন!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান প্রার্র্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের পরাক্রম দেখাতে গিয়ে প্রথম দিকে যে চমক ফেলেছিলেন তা ক্রমে ক্রমে ফিকে হয়ে গেছে। যতই দিন যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের তুলনায় ততই তিনি ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতায় পিছিয়ে পড়ছেন। তাকে নিয়ে খোদ রিপাবলিকান শিবিরই এখন প্রমাদ গুনছে। কারণ কি? কারণ, সমীক্ষায় দেখা গেছে ট্রাম্প এবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক অপরিহার্য বাস্তবতা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছেন। এবারের নির্বাচন ব্যতিক্রমী এই দিক দিয়ে যে আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে এই প্রথম দুই প্রধান দলের দুজন সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রার্থীদের একেকটি ভুলের মাসুল অতি বিশাল। স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় সেই মাসুল দ্বিগুণ এমনকি তারও বেশি। ট্রাম্প সেটা হৃদয়ঙ্গম করেননি। ট্রাম্প কি কি ভুল করেছেন তা দেখতে গেলে গোড়া থেকে শুরু করা যেতে পারে। রিপাবলিকান প্রাইমারিতে তার উত্থানের পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক সব বক্তব্য দিয়ে এবং প্রতিপক্ষদের প্রতি অপমানজনক সব মন্তব্য করে মিডিয়ার নজর কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা। প্রাইমারিতে হয়ত এটা চলতে পারে কিন্তু আসল নির্বাচনী লড়াইয়ে নয়। আসল নির্বাচনী লড়াইয়ে এই একই কৌশলগুলো বিশাল দায় হয়ে বুমেরাংয়ে পরিণত হয়। কারণ এখানে বৃহত্তর ভোটার গোষ্ঠী ওভাল অফিসের জন্য দুজনের কে বেশি উপযুক্ত তা বিবেচনা করে দেখতে থাকে। ট্রাম্পের লাগামছাড়া মন্তব্যগুলোর একটা হলো ২০১৫ সালের জুলাইয়ে আইওয়াতে এক অনুষ্ঠানে তিনি ২০০৮ সালের রিপাবলিকান প্রার্থীই জন ম্যাককেইনের সামরিক জীবন সম্পর্কে কটূক্তি ছুড়ে মেরেছিলেন। বলেছিলেন, ‘তিনি শত্রুর হাতে ধরা পড়েছিলেন বলেই ওয়ার হিরো বনে গিয়েছিলেন। আমি সেই ধরনের লোকই পছন্দ করি যারা ধরা পড়েনি।’ মন্তব্যটির জন্য ট্রাম্পকে ক্ষমা চাইতে বলা হলে ধমকের সূরে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ওয়ার হিরোর প্রতি এমন আচরণের জন্য রিপাবলিকান শিবিরে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। তুমুল বিতর্কের পর তিনি ফক্স এংকর মেগিন কেলি সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন : ‘আপনারা লক্ষ্য করতে পারেন তার চোখ থেকে রক্ত বেরুচ্ছে তার যে কোন জায়গা থেকে রক্ত বেরুচ্ছে।’ বাহ্যত এই উক্তিটা ছিল মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়ে। হিলারি সমর্থকরা এই বেঁফাস মন্তব্যকে যথার্থভাবে কাজে লাগিয়ে প্রচার করেছিল এর মধ্যে ট্রাম্পের সেক্সিজমের পরিচয় পাওয়া যায়। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে ২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারটি ধসে পড়ার সময় তিনি জার্সি সিটির হাজার হাজার মুসলমানকে আনন্দ উল্লাস করতে দেখেছেন এবং দৃশ্যটি টেলিভিশনেও দেখা গেছে। বাস্তবে এমন কোন দৃশ্য টিভিতে দেখানো হয়নি। ট্রাম্প নিজের বক্তব্য কখনও সংশোধন করেননি। বাস্তবতার সঙ্গে তার সম্পর্ক যে কত শিথিল হিলারি সমর্থকরা এই ঘটনাকে তারই দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রচার করেছে। ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গদের হাতে নিহত শ্বেতাঙ্গের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্তভাবে দেখিয়ে মিথ্যা পরিসংখ্যান বার বার টুইট করে গেছেন। গোঁড়া শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের পোস্টও তিনি বি টুইট করেছেন। এগুলো তার বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ আনার কাজে লেগেছে। এক সমাবেশে ট্রাম্প শারীরিক অক্ষমতার শিকার এক রিপোর্টারকে হাতের অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ব্যঙ্গ করেছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা গুণগুলো এই দৃশ্যটিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর সমালোচনার একটা হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগায়। ট্রাম্প একবার তার এক দেওয়ানী মামলার বিচারক সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন যে বিচারকের বাবা-মা মেক্সিকোর নাগরিক ছিলেন বলেই তার কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না। ইন্ডিয়ানায় জন্মগ্রহণকারী এই বিচারক গণজালো কুরিয়েলের সমর্থনে রিপাবলিকানরাই এগিয়ে এসেছিল। প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার পল রিয়ান বলেছিলেন যে ট্রাম্পের এই উক্তি বর্ণবাদী মন্তব্যের আদর্শ দৃষ্টান্ত। কিন্তু তার পরও ট্রাম্প সেই মন্তব্য চালিয়ে গেছেন। ডেমোক্র্যাট কনভেনশনে খিজির খান ট্রাম্পের সমালোচনা করায় ট্রাম্প প্রশ্ন তুলেছিলেন খানের স্ত্রী গাজালা খানের কি ইসলামের অধীনে কথা বলার অধিকার আছে? জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত এক জনমত জরিপে শতকরা ৭০ ভাগ উত্তরদাতা ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন। কারণ এই খান দম্পতি হলেন ইরাকে আত্মঘাতী বোমাবাজের হামলায় নিহত মার্কিন বাহিনীর এক মুসলিম ক্যাপ্টেনের বাবা-মা। ওই ক্যাপ্টেনকে মরণোত্তর খেতাবে সম্মানিত করা হয়েছিল। তাদের নিয়ে এমন কটাক্ষ বা ব্যঙ্গোক্তি ভালভাবে নেয়নি ভোটাররা, যাদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ ও এভানজেলিকালরাও রয়েছে। ট্রাম্প মেক্সিকান ও অন্যান্য অভিবাসীকে ধর্ষক ও খুনী আখ্যা দিয়েছিলেন। অতি সম্প্রতি তিনি আবারও ঘোষণা করেছেন যে ক্ষমতায় গেলে তিনি সমস্ত অবৈধ অভিবাসীকে দেশছাড়া করবেন। অভিবাসীর আগমন ঠেকাতে তিনি মেক্সিকোর গোটা সীমান্তে উঁচু প্রাচীর তুলে দেবেন এবং প্রাচীর নির্মাণের সমস্ত খরচ মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায় করবেন। অভিবাসীর ভোট হারানোর জন্য আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। ট্রাম্পের উল্টোপাল্টা বক্তব্য, তাঁর জনসমর্থন ক্রমাগত কমতে থাকা, বিরোধীদের শাণিত ভাষায় আক্রমণ এবং একের পর এক কৌশলগত ভ্রান্তি রিপাবলিকান শিবিরকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। রিপাবলিকান জাতীয় কমিটি এখন ভাবছে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচার কাজে যদি নিজেকে সংশোধন না করেন তাহলে দলের সম্পদ ও সাংগঠনিক শক্তিকে তার পেছনে অপচয় করার চেয়ে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট নির্বাচনের পেছনে ব্যয় করাই হয়ত শ্রেয় হবে। এখন রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাগ করা বাদে আর সবকিছুই করতে পারে এমন আশঙ্কা তার নির্বাচনী শিবিরকে তারা করে ফিরছে। ট্রাম্প নিজেই নিজের সাবোটাজ সেভাবে করে চলেছেন তাতে রিপাবলিকানদের শুধুমাত্র দেখে যাওয়া ও দুঃখ-বেদনায় সঙ্কুচিত হওয়া ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই। রিটেইল ব্যবসার অন্যতম অধীশ্বর আর্ট পোপ বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না জর্জ ওয়ালাসের পর থেকে এ ধরনের কা-কারখানা আর কখনও দেখেনি। ট্রাম্পের কারণে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হারতে চলেছি। এখন সব কিছুই যেন না খুইয়ে ফেলি।’ চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×