ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ হায়দার বয়াতি

এই না হলে পাকিস্তান ক্রিকেট!

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এই না হলে পাকিস্তান ক্রিকেট!

এক ইংল্যান্ড সফরে পাকিস্তানের মুদ্রার দুই পিঠই দেখা হয়ে গেল। দুর্দান্তভাবে চার টেস্টের সিরিজ ২-২এ ড্র করে প্রথমবারের মতো টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে ইতিহাস গড়েছে মিসবাহ-উল হকের দল। অথচ ওয়ানডেতে চরম নাজুক অবস্থা পাকিদের। টানা চার হারে এরই মধ্যে ৪-০তে সিরিজ খোয়ায় আজহার আলির দল। ৪২ বছরে ইংল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে সিরিজে জয়হীর পাকিস্তানের। যদিও শেষ ম্যাচ জিতে ‘হোয়াইটওয়াশ’র লজ্জা এড়াতে সক্ষম হয় তারা। বিপরীতে টেস্টে নতুন এক ইতিহাস গড়েছে মিসবাহ-বাহিনী। ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিক আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিং চালু হওয়ার পর এই প্রথম এক নম্বরে উঠে আসে পাকিস্তান। অর্ধযুগেরও বেশি সময় ঘরের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারছে না পাকিস্তান, এরপরও তাদের এই সাফল্য অসাধারণ। অনুভূতি জানাতে গিয়ে সেটিই বলেছেন সেনাপতি মিসবাহ। আর ঐতিহাসিক অর্জনের জন্য অধিনায়কে বিশেষ কৃতিত্ব দিয়েছেন সাবেক কোচ ও তারকা ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনুস। ব্যাট হাতে-নেতৃত্বে মিসবাহর অবদান অনেক। অবদান রয়েছে সাদা পোশাকে ব্যাটিং-বোলিংয়ের দুই প্রধান অস্ত্র ইউনুস খান আর ইয়াসির শাহরও। অধিনায়ক মিসবাহ বলেন, ‘এটা আকস্মিক কিছু নয়। এই সাফল্য টেস্ট নিয়ে পাকিস্তানের পরিকল্পনার ফসল। দল হিসেবে কয়েক বছর আগেই আমরা যে ছক কষেছিলাম, ১ নম্বর হওয়াটা তারই পুরস্কার। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ডের মতো সেরা সব দলকে পেছলে ফেলে এই অর্জন অনেক গর্বের।’ দেশে ক্রিকেট না থাকার পরও অব্যাহত সমর্থনের জন্য পাকিস্তানীদের বিশেষ ধন্যবাদ দেন মিসবাহ। ২০১৪ সালের অক্টোবর হতে ৬ নম্বর থেকে শীর্ষে উঠে আসার পথে নিজেদের শেষ ৬ সিরিজের একটিতেও হারেনি পাকিরা। জয় ৪ ও ড্র ২ । ১৭ ম্যাচের ১০টিতেই জিতেছে মিসবার দল, ড্র ৩! সত্যি অসাধারণ। হিসেবটা এক বছর পিছিয়ে ধরলে জয়-পরাজয় ১৩:৯। এ সময়ে ব্যাট হাতে অভিজ্ঞ ইউনুসের গড় ৬২.৯৫, লেগস্পিনার ইয়াসিরের শিকার ৯৫ উইকেটÑ দুজনের অবদান তাই অনুমেয়। ঘরে-বাইরে কঠিন পরিস্থিতি সামলে অর্জনের জন্য অধিনায়ক মিসবাহর কৃতিত্বচকে বড় করে দেখছেন ওয়াকার, ‘কত সমালোচনা সহ্য করেছে সে, কখনও মুখ থেকে একটি বাজে কথাও শোনা যায়নি। আমরা এখন শীর্ষের চেয়ে বেশি আর কি আশা করা যায়? এটা মিসবাহর সততা ও ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসারই ফসল। ওর জন্য টুপি খোলা অভিনন্দন।’ মিসবাহ কতটা কঠিন পরিস্থিতিতে অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, ক্রীড়াপ্রেমী অনেকে তা জানেন। ২০১০ ইংল্যান্ড সফরে লর্ডস টেস্টের সেই ফিক্সিং কলঙ্কে দেশটির ক্রিকেট তখন ল--ভ- হওয়ার পথে। সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে তার এক বছর আগে থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। অস্ট্রেলিয়ান সাইটে নিজের লেখা ব্লগে সেই অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে তুলে আনা সেনাপতি, ‘পিসিবির সে সময়ের চেয়ারম্যান ইজাজ বাট চেয়েছিলেন, ব্যাপারটা গোপন রাখতে। আলোচনাটা হয়েছিল একজন করণিকের কক্ষে! যেহেতু এটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার, আমিও সেটি গোপন রেখেছিলাম। এমনকি পরিবারের কাউকেও জানাইনি।’ মিসবাহর দাবি, বাট নাকি তখন বলেছিলেন, নেতৃত্বের জন্য তাদের হাতে কোন বিকল্প নেই। এই জন্যই প্রস্তাবটা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। সালমান বাট, মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ আসিফদের কলঙ্কিত স্পট ফিক্সিং-কা-ে পুরো পাকিস্তান ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেসময় র‌্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে ছিল তারা। তার আগে ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কান টিম বাসে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানে বিদেশী দলগুলোর সফর বন্ধ হয়ে যায়। বিদেশ বিভুঁইয়ে খেলে গত ছয় বছরে সেই দলটিকে এক নম্বরে তুলে এনেছেন। ৪২ বছরের মিসবাহ তাই উচ্ছ্বসিত, ‘আমি খুবই খুশি যে কঠিন সময়ে লড়াই করে দেমের মানুষের জন্য দারুণ একটা উদযাপনের মুহূর্ত এনে দিয়েছি। এই সাফল্য অনেকটা বিশ্বকাপ জয়ের মতোই আনন্দের। টেস্টের শীর্ষে যাওয়া মানে পর্বতের শীর্ষে আরোহণ করা। দলে প্রত্যেককে সেটি করতে হয়েছে। এটি পাকিস্তান ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণার।’ অন্যদিকে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে তলানির দিকে পাকিরা, ৯ নম্বরে, বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও পেছনে! ওয়ানডেতে এমন ভরাডুবি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না প্রধান কোচ মিকি আর্থার। ২০১৯ বিশ্বকাপ সামনে রেখে দলে ব্যাপক রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী ২০১৯ বিশ্বকাপে র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ সাতের মধ্যে থাকা দলগুলোই শুধুমাত্র সরাসরি মূলপর্বে খেলার সুযোগ পাবে। বাকি দলগুলোকে বাছাইপর্ব থেকে উঠে আসতে হবে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য বাছাইপর্বে দশ দলের বাকি তিনটি নির্ধারিত হবে। আর এতে যদি ১৯৯২ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা বাদ হয়েই যায় তবে মূলত টুর্নামেন্টের আকর্ষণও অনেকাংশেই কমে যাবে। আর এই ভয়ই জেঁকে বসেছে সমর্থক ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। গত মে মাসে পাকিস্তান দলের দায়িত্ব গ্রহণ করা আর্থারও এমন শঙ্কায় ভুগছেন! তার মতে, এটাই বাস্তবতা! ‘আমি এই ধরনের যোগ্যতা পরীক্ষার বিষয়টি কোনসময়ই সমর্থন করি না। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা নয় নম্বরে আছি এবং আমাদের সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। র‌্যাঙ্কিংয়ের উন্নতির সম্ভাবনাও যে খুব একটা সহজ হবে তাও নয়। কারণ সামনে কঠিন সিরিজ অপেক্ষা করছে।’ বলেন আর্থার। কঠিন এ সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রয়েছে দুটি সিরিজ। সম্প্রতি ওয়ানডেতে এগিয়ে আসা ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজগুলো যে মোটেই সহজ হবে না তা অনুমেয়। আর এই দুটি সিরিজের মাঝে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া সফর। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে পাকিস্তানের সময়টা যে অচিরেই ভাল হচ্ছে না তা সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যেই তা বুঝতে পারছেন। খারাপ করার বড় কারণ, ধারাবাহিকতা ও অভিজ্ঞতার অভাব। টেস্টে যেমন ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য মিসবাহ ও ইউনুস খান, রঙিন পোশাকে তেমন কেউ নেই। সব মিলিয়ে আজহারদের সামনে আসলেই কঠিন সময়।
×