ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে পশুর হাট

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে পশুর হাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ ৬ সেপ্টেম্বর ॥ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামমাত্র টাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে বেশ কয়েকটি গরুর হাটের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। প্রভাবশালী নেতারা এসব হাটের ইজারার নামে লাখ লাখ আত্মসাত করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নামমাত্র ইজারার টাকা দিচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। শুধু তাই নয়, কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আরও বেশ কয়েকটি অবৈধ গরুর হাট বসানো হয়েছে। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, অবৈধ গরুর হাট বসতে দেয়া হবে না। জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে গরুর হাট বসিয়ে আসছে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসন। গরুর হাটের সঙ্গে জড়িত রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় প্রশাসন। প্রতি বছরই লাখ লাখ টাকা ইজারা উঠলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নামমাত্র অর্থ দিচ্ছেন আর বাকি অর্থ তারা লুটপাট করে খাচ্ছেন। কোন কোন হাটের আয় পাঁচ থেকে ১০ লাখ বা ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। আবার কোন কোন হাটে ৩০ থেকে ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এবার ইউসুফগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, পলখান উচ্চ বিদ্যালয়, বেলদি ফাজিল মাদ্রাসা, মুড়াপাড়া ডিগ্রী কলেজ, ভুলতা উচ্চ বিদ্যালয়, জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে গরুর হাটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে টেন্ডারের মাধ্যমে এ অনুমোদন দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম। ছয়টি হাটের দর ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার টাকা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামমাত্র অর্থে এ টেন্ডার দেয়া হয়েছে। তারাব পৌরসভার বরপা বালুরমাঠ, নোয়াপাড়া জামদানিপল্লী মাঠ ও কাঞ্চন পৌরসভার ত্রিশকাহনিয়া সাত্তার জুট মিল উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে হাট বসানো হচ্ছে। এছাড়া মসজিদের উন্নয়নের নামে স্বর্ণখালী বাজার হাট, নলপাথর হাটসহ বেশ কয়েকটি অবৈধ গরুর হাট বসানো হয়েছে। প্রতি বছর এসব হাটে লাখ লাখ টাকা ইজারা নেয়া হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোতে নামমাত্র অর্থ দেয়া হচ্ছে। জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে গরুর হাটটি সারাবছরই সপ্তাহে একদিন বসে থাকে। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির তেমন কোন উন্নয়ন নেই। এছাড়া সারাবছর হাট বসানোর কোন অনুমোদন নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে, গত দুই বছর আগে গোলাকান্দাইল গরুর হাট এক কোটি সাত লাখ টাকায় ইজারা নেয়া হয়। ওই সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে হাট বসানোর কারণে প্রায় অর্ধেক টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে ইজারাদারদের। এ কারণে গত এক বছর আগে এ হাটের ইজারা দর ওঠে ৭০ লাখে। ইজারার দর কম হওয়ায় এবার সরকারীভাবে হাটটির ইজারা উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে গোলাকান্দাইল হাটটি থেকে সরকার রাজস্ব প্রায় অর্ধেক পাচ্ছে। পলখান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, গত কোরবানির হাটে লোকসান হওয়ায় এক টাকাও স্কুলে জমা দিতে পারিনি। ভুলতা স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল বলেন, গত কোরবানিতে ইজারার আয় চার লাখ টাকা স্কুলে জমা দেয়া হয়েছিল। হাটে বাঁশ-কাঠ, বিদুত সংযোগ, কর্মচারী, পাহারাদারসহ বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়ে যায়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, কোরবানির পশু ক্রেতাদের সুবিধার্থে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকল্পে এসব হাটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া ডিসির সঙ্গে কথা বলে ইজারার মূল্য নির্ধারণ করে তা প্রতিটি হাটে টাঙিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া কোন অবৈধ গরুর হাট বসতে দেয়া হবে না। নারায়ণগঞ্জে অবৈধ হাট উচ্ছেদে বাধা নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইরে ওসমানি স্টেডিয়ামের সামনে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন ছাড়াই জনবহুল এলাকায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠ দখল করে অবৈধভাবে কোরবানির পশুরহাট বসেছে। প্রধান সড়কের পাশে বসানো এই হাটের কারণে নগরীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হলে মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অবৈধ এ হাট উচ্ছেদে অভিযান চালালেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে উচ্ছেদ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালী শতাধিক লোক মাঠ দখল করে রাখায় নামেমাত্র কয়েকটি বাঁশ সরানো হলেও তাদের বাধার কারণে হাট থেকে একটি গরুও সরানো যায়নি। যার কারণে শহরে তীব্র যানজটসহ নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল আহমেদ জানান, ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ এলাকার মহিউদ্দিন বাহার লিটন নামের এক ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন ছাড়াই সোমবার থেকে অবৈধভাবে কোরবানির পশুরহাট বসায়। অবৈধভাবে হাট বসানোর খবর পেয়ে সিটি কর্পোরেশন দুপুরে পুলিশের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এদিকে অবৈধ দখলদার মহিউদ্দিন বাহার লিটন কালক্ষেপণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের কাছে একদিনের সময় চেয়েছেন। তিনি জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাটটি সরিয়ে নেয়া হবে।
×