ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় গরুও আসছে

রাজধানীতে ট্রাক ও ট্রলারবোঝাই গরু ছাগল আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রাজধানীতে ট্রাক ও ট্রলারবোঝাই গরু ছাগল আসছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়ক পথে রাজধানীতে পশু বোঝাই ট্রাক আসছে। নৌপথেও আসছে ট্রলার বোঝাই কোরবানির পশু। এবার সবচেয়ে বেশি গরু, ছাগল ও মহিষ আসছে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নঁওগা, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, যশোর, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রাম থেকে। এবার ভারত থেকে গরু রফতানি বন্ধ হলেও দেশে চোরাইপথে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হয়নি। তাই ভারতীয় সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে মিয়ানমার, নেপাল এবং ভুটানের দিকে ঝুঁকছেন বেপারিরা। তবে নেপাল এবং ভুটানের গরু আসছে ভারত ঘুরে। দেশে ঢুকছে সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে। আর মিয়ানমারের গরু আসছে কক্সবাজার এবং বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে। এদিকে বেশি লাভের আশায় কোরবানির পশু নিয়ে বেপারিরাও ছুটছেন রাজধানীতে। তাই অনেকটা আগেভাগেই হাটেও গরু উঠাতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন ইজারাদাররা। শনিবার রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, একরকম প্রতিযোগিতা নিয়েই হাটের জায়গা দখল করছেন বেপারিরা। যে ব্যবসায়ী যত আগে আসতে পারবে তারা ততবেশি পছন্দনীয় জায়গায় তাদের পশুর স্থান করে নিতে পারবে এমনটাই জানালেন ইজারাদাররা। তবে অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করছেন, গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা আদায় করা হচ্ছে খুঁটিপ্রতি। এছাড়া হাটে ব্যবসা না জমলেও গরুর খাবারের উপকরণসহ সবকিছুই মিলছে বাড়তি টাকায়। বেপারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রাজধানীতে দিনের তুলনায় রাতেই বেশি ঢুকছে ট্রাকভর্তি গরু। হাটে সবচেয়ে বেশি আসছে দেশীয় গরু। এর পাশাপাশি নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের গরুও আসছে গাবতলী হাটে। জানা গেছে, মিয়ানমারের গরু দেখতে অনেকটাই দেশীয় গরুর মতো। আবার দেশীয় গরুর মতো হলেও দাম অনেকটা ভারতীয় গরুর মতোই। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ গরুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বৈধভাবে গরু আমদানি করা হয়। এছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন চোরাইপথে প্রবেশ করছে মিয়ানমারের গরু। বিশেষ করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, মিস্ত্রিপাড়া, নয়াপাড়া, সাবরুম, নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, উখিয়ার রেজু আমতলী, ফাঁড়িরখিল, বালুটিয়া এবং উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের গরু আসছে। সরেজমিনে গাবতলীর হাটে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল এবং ভুটান থেকে আসা গরু দেখা গেছে। গাবতলী হাটে কথা হয় বেপারি আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, চারটি গরু এনেছেন ভুটান থেকে। প্রতিটি গরুর দাম পড়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ভুটান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সীমান্তে পৌঁছে এসব গরু। এরপরের গন্তব্য ঢাকার গাবতলী গরুর হাট। তিনি জানালেন, পথে পথে চাঁদা গুনতে হয়েছে তিন হাজার ৫০০ টাকা। ভারতে এই সিন্ডিকেটের সদস্য রয়েছে। তারাই বাংলাদেশের সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন সীমান্তে পৌঁছে দিয়ে যায় এসব গরু। সূত্র জানায়, রাজশাহীর কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু বেশি আসছে। তবে অন্য অনেক সীমান্ত দিয়েই এবার গত বছরের তুলনায় কম গরু ঢুকছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে করে দেশী গরুর মালিকেরা একটু বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন কোরবানির পশু। গাবতলীর পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, এবার গরুর সরবরাহ অনেক বেশি। ঈশ্বরদীর বেপারি সোনা মিয়া জানান, ঢাকায় গরু নিয়ে আসতে ট্রাক ভাড়াসহ খরচ বেশি হচ্ছে। তাই এবার কম দামে গরু বিক্রি করতে রাজি নন এ বেপারি। সিরাজগঞ্জের আলী হোসেনসহ কয়েকজন বেপারি জানান, গতবছর গরু বিক্রিতে খুব বেশি লাভ হয়নি। তাই এবার কম দামে নয়, বেশি দামে গরু বিক্রি করবেন বলে তারা জানান। কুষ্টিয়ার বেপারি হাসেম আলী জানান, গরুর দাম কি হবে আল্লাহ বলতে পারে। ঈদের আগের রাতেও দামের মোড় ঘুরে যেতে পারে। তবে কম দামে গরু বিক্রি করবেন না বলে এই বেপারি মন্তব্য করেন। পাবনার বেড়া উপজেলার বেপারি রশিদ মিয়া জানান, ৬টি গরু নিয়ে মঙ্গলবার ভোরে এসেছেন গাবতলী হাটে। খুঁটি দেখে একটু বাড়তি দাম দিয়ে হাটে ভাল জায়গাও পেয়েছেন। তিনি জানান, গত দুই ঈদে দুইবার ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কুষ্টিয়া থেকে মোঃ এখলাস তিনটি বড় গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। একটি আনুমানিক চার মণ ওজনের। জানালেন, এই গরুটির জন্ম তার খামারেই। নিজেই লালনপালন করেছেন। দাম হাঁকাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা। এত দাম কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নিজের পালা এই গরুটি এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে পারবেন না। গাবতলী হাটে এখলাস যেখানে বসে আছেন, সেখান থেকে কিছু দূরে বসেছেন কুষ্টিয়া থেকে আসা বিক্রেতা সেকান্দার। তার গরুটিও প্রায় একই মাপের। রং লাল। তিনি গরুটির দাম হাঁকালেন দুই লাখ টাকা। সেকান্দার বলেন, আমি এই গরু ১০ মাস আগে ৭২ হাজার টাকায় কিনেছি। লালনপালন ও খাওয়াদাওয়ায় খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আমি খুব কমই লাভ চাচ্ছি। ছোট গুরুর দাম আরও যেন বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। বেপারি মকবুল হোসেন বলেন, তার কাছে দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের দুটি গরু আছে। দুটি গরু তিনি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ছেড়ে দেবেন। এত দাম কেন জানতে চাইলে বলেন, পোষাইতাছে না। তাই দাম চাইতাছি। হাটের একাধিক বিক্রেতা বলেন, তারা ক্রেতাদের মনোভাব বুঝতে চাইছেন। আগামী শুক্রবার থেকে বেচাকেনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন হয়ত দামে স্থিতিশীলতা আসবে। রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গাবতলী হাটে এসেছেন দুই ভাই ইব্রাহীম হোসেন ও মনির হোসেন। তারা জানালেন, এবার হাটে কোরবানির গরু যেমন বেশি, দামও তেমন বেশি। আপাতত দেখতে এসেছে হাটের অবস্থা। পরে গরু কিনবেন বলে এই দুই ভাই জানান।
×