ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র জিলহজ মাসের ৪ তারিখ। মহানবী (স) বলেছেন, তারা (হাজীগণ) যুয়ুফুর রহমান বা দয়াময় খোদা’তায়ালার মেহমান। আল্লাহ তাদের ডেকেছেন। তারা যখন দোয়া করে তাদের দোয়া কবুল করা হয়। পাঁচটি ভিত্তি বা স্তম্ভের ওপর ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত। যথা- ইমান, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত। হজ ইসলাম ধর্মের ৪র্থ রোকন বা ফরজ। উল্লেখ্য, প্রতি মুহূর্তে কাবা শরীফে ১২০টি রহমত নাজিল হয়, যার ৬০টি তাওয়াফকারীর জন্য, ৪০টি নামাজীর জন্য এবং ২০টি বায়তুল্লাহ শরীফ দর্শনকারীর জন্য । ‘হজ’ জীবনে একবার-গুনাহ মাফির জন্য আল্লাহ’তায়ালার দরবারে গিয়ে আত্মসমর্পণ করা- আল্লাহুম্মা ইন্নি উরীদুল হাজ্জা ফাইয়াস সিরহু লী ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নী ইয়া রাব্বাল আ’লামীন (হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্র ঘরের হজ করার নিয়ত করেছি তুমি তা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবুল করে নাও)। মানুষ স্বভাব প্রেমিক। তাই বরাবরই সে এমন একটা অবলম্বন ও আশ্রয় পেতে চায়, যার সান্নিধ্যে এসে সে তার প্রেমিক হৃদয়ের আবেগ ও উচ্ছ্বাসকে শান্ত ও তৃপ্ত করতে পারে। পার্থিব জীবনের কোলাহল ও জটিলতায় বিপর্যস্ত মানুষ নিজেকে তখন নিমগ্ন করে দিতে চায় ব্যতিক্রমধর্মী ও দীর্ঘমেয়াদী কোন উপাসনা কর্মকা-ে। যা মুছে দেবে তার জীবনের বড় বড় অপরাধ ও পদস্খলন। জন্মদিনের মতোই সে হয়ে উঠবে নিষ্পাপ ও পবিত্র। আবহমানকাল থেকে মানবমনের এ চাহিদা পূরণ করে আসছে হজ। আরবী ভাষায় ‘হজ’ শব্দের অর্থ- জিয়ারতের সংকল্প করা। যেহেতু খানায়ে-কা’বা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে তাবৎ প্রেমিক-ভক্তগণ পৃথিবীর চারিদিক হতে পঙ্গপালের মতো এসে পবিত্র মক্কা নগরীতে জমায়েত হন, তাই এর নাম রাখা হয়েছে হজ। কখন কিভাবে হজ সূচনা হয়েছিল এবং যুগে যুগে এ হজব্রত পালনের প্রকৃতি কেমন ছিল সে ইতিহাস অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং শিক্ষাপ্রদ। দুনিয়ার প্রথম মানুষ আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামই সর্বপ্রথম নিষ্কলুষ হজ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। নবী আদম (আঃ)-কে যখন ধরাধামে প্রেরণ করা হয় এবং যখন তিনি মহান আল্লাহর দরবারে ফেরেস্তাদের প্রার্থনার শব্দ শুনতে না পাওয়ার অভিযোগ আনেন- এরপর আল্লাহ তাকে ‘বায়তুল্লাহ’ নির্মাণ করে এর তাওয়াফ করার হুকুম দেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন, হযরত আদম হজ করেছেন এবং হজের সব অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। তারপর আরজ করলেন- হে আল্লাহ প্রত্যেক সৎকর্মশীল ব্যক্তি প্রতিদান পায়; আমার প্রতিদান কী? আল্লাহ বললেন, হে আদম আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তোমার বংশধরদের মধ্যে যে এ ঘরে এসে গুনাহের জন্য তওবা করবে, আমি তাকেও ক্ষমা করে দেব (বাইহাকী)। এরপর থেকে হযরত নূহ (আঃ)-এর জামানার মহাপ্লাবনের সময় পর্যন্ত আদম সন্তানেরা পবিত্র কাবায় হজব্রত পালন করেন। মহাপ্লাবনের সময় খানায়ে’কাবা বিধ্বস্ত হলে এর পুনঃসংস্কারে মনোনিবেশ করেন সাইয়্যিদেনা ইব্রাহীম (আঃ) ও পুত্র ইসমাঈল (আঃ)। তাদের যুগল প্রচেষ্টায় সুনিপুণভাবে গড়ে উঠে ইসলামী জাহানের মহান প্রাণকেন্দ্র । দুই নবী সেদিন অশ্রুর বারিধারায় মরুর বালি সিক্ত করে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন এভাবে- পরওয়ার দিগার! আমাদের এ চেষ্টা কবুল কর। তুমি সবকিছু জান এবং সবকিছু শুনতে পাও। পরওয়ার দিগার! তুমি আমাদের দু’জনকেই মুসলিম অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশাবলী হতে এমন একটি মুসলিম জাতি তৈরি কর, যারা একান্তভাবে তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদত করার পন্থা বলে দাও। আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর, তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময় (সুরা বাকারা)। মহান নবীদের এ দোয়া কবুল হয়েছে। বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে মুসলিম জাতি। প্রতিবছর উৎসুক সামর্থ্যবান মুসলিম মজনুরা হজ পালনে ভিড় করেন পবিত্র মক্কা নগরীতে।
×