স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অবশেষে সব জল্পনাকল্পনার অবসান হয়েছে। পুলিশে এসপি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত বাবুল আক্তার আর পুলিশে নেই। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোঃ ইলিয়াস হোসেনের স্বাক্ষরে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- ২৪তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগদানকৃত মোঃ বাবুল আক্তার (বিপি-৭৫০৫১০৯০২৯) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, সিএমপিকে (বর্তমানে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এবং পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত) তার আবেদনের প্রেক্ষিতে চাকরি (পুলিশ ক্যাডার) হতে এতদ্বারা অব্যাহতি প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আদেশ হয়েছে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে।
গত ৫ জুন চট্টগ্রামে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে ৭ সদস্যের সন্ত্রাসী একটি দল নৃসংশভাবে হত্যা করে। ওইদিন বাবুল আক্তার পুলিশ সদর দফতরে এসপি পদে যোগ দেয়ার জন্য ঢাকায় ছিলেন। মিতু হত্যার পর পরই জঙ্গীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে সিএমপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু একাধিক তদন্ত সংস্থার তদন্তে জঙ্গী সম্পৃক্ততা মেলেনি। বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স মুসা নামের এক সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি কিলিং মিশন ওইদিন সকালে মিতু হত্যাকা- সম্পন্ন করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এদের ২ জন অর্থাৎ নবী ও রাশেদ ৪ জুলাই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারায়। চট্টগ্রামের জিইসি মোড় ও.আর নিজাম রোডের আবাসিক এলাকার ভবনের ফ্ল্যাটে বাবুল আক্তার ও তার পরিবার থাকতেন। বড় ছেলেকে স্কুলগামী বাসে তুলে দেয়ার জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার দশ থেকে বারো মিনিটের মধ্যে সন্ত্রাসীরা মিতুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে হত্যা করে। ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ওইদিন সাতকানিয়ায় বিজিবি ট্রেনিং সেন্টারে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঢাকা থেকে ওইদিনই পুলিশের উর্ধতন কয়েক কর্মকর্তা চট্টগ্রামে আসেন। বাবুল আক্তারকে র্যাবের বিশেষ হেলিকপ্টারে পাঠানো হয় চট্টগ্রামে। এর দুদিন পর আইজি একেএম শহীদুল হক চট্টগ্রাম আসেন। ঘটনার তদন্তে নামে ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ), পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইন্টেলিজেন্স), সিটিইউ (কাউন্টার টেররিজম ইউনিট), র্যাব (র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন), এসবি (সিকিউরিটি ব্রাঞ্চ) ও সিআইডি (ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট)। পুলিশী গোয়েন্দা তৎপরতায় একে একে হত্যা মিশনের সঙ্গে জড়িত সকলেই ধরা পড়ে এবং তাদের কাছ থেকে বক্তব্য নেয়া হয়। মূল শূটার ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। এছাড়া আরও ৪ জন হত্যাকা-ের কথা প্রকাশ করে। কিন্তু কার নির্দেশে তারা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা এখনও অনুদঘাটিত এবং রহস্যময় হয়ে আছে। বিভিন্ন সূত্রে বাবুল আক্তার নিজেই স্ত্রী হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠলেও এ নিয়ে পুলিশ যেমন কোন কথা বলেনি তেমনি কোন সূত্র তা অফিসিয়ালি স্বীকার করেনি। এছাড়া হত্যাকা-ের নেতৃত্বদানকারী মুসা পুলিশ হেফাজতে ছিল বলে তার স্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান দিলেও পুলিশ এখনও বলে যাচ্ছে সে পলাতক। কিন্তু চাউর হয়ে আছে মুসাকে গুম করে ফেলা হয়েছে।
মিতু হত্যাকা-ের পর এ ঘটনার নেপথ্য তৎপরতা উদঘাটনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল সংস্থা উৎসাহী হয়েছিল বাবুল আক্তারকে ঢাকায় গোয়েন্দা দফতরে ডেকে নিয়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা রাখার পর ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। কেন ঘুরে যায় তা আজ পর্যন্ত জানা না গেলেও গুজবসহ নানা জল্পনাকল্পনার ডাল বিস্তৃত হয়ে আছে। ওইদিন ছিল ২৪ জুন। বিভিন্ন সূত্রমতে, ওই দিনই তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেয়া হয়। মিতু হত্যাকা-ের পর বাবুল আক্তার কখনও মিডিয়ার মুখোমুখি হননি। বরাবরই তার শ্বশুর যা বলে গেছেন। আর পুলিশ সূত্রে বলা হয় তদন্ত চলছে। মুসাকে না পাওয়া পর্যন্ত জানা যাবে না এ হত্যার নেপথ্যের মূল নায়ক কে? কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মুসা জীবিত কিনা। আর জীবিত থাকলে আদৌ তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা। এসব রহস্যঘেরা। সবকিছুই উদঘাটিত হয়েছে কিভাবে, কারা, কোন্ অস্ত্র দিয়ে, কোন্ সময়ে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে, এর আগে কখনও কি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছেÑসবকিছু পরিষ্কার। শুধু অজানা রয়ে গেল এ ধরনের চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের আসল নায়ক কে বা কারা? শেষ পর্যন্ত বাবুল আক্তার পদত্যাগ করেছেন বলে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর এখন সন্দেহের সকল দৃষ্টি বাবুল আক্তারের প্রতিই নিবদ্ধ হয়ে গেল। তবে বিষয়টি পরিষ্কার হলো না এবং ভবিষ্যতে পরিষ্কার হবে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: