ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এস্কেলেটর ও সাধারণ সিঁড়ি- দুটোই থাকবে

গুলিস্তানে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম উড়াল ফুটপাথ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গুলিস্তানে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম উড়াল ফুটপাথ

মশিউর রহমান খান ॥ দেশে প্রথমবারের মতো এলিভেটেড ওয়াকওয়ে বা উড়াল ফুটপাথ তৈরি করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এটির দৈর্ঘ্য হবে এক কিলোমিটারেরও বেশি। প্রায় এক শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক এ উড়াল ফুটপাথটি নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। এতে একই সঙ্গে এস্কেলেটর ও সাধারণ সিঁড়ি থাকবে। যাতে চলাচলকারীরা উভয় পদ্ধতিই ব্যবহার করতে পারেন। এটি তৈরি করা হবে রাজধানী তথা দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকা গুলিস্তানে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। রাজধানীতে বসবাসকারী ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নাগরিকদের ফুটপাথে চলাচলের সুবিধার্থে রাজধানীতে তথা দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হচ্ছে। ডিএসসিসি এলাকার মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ও খুবই ব্যস্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলিস্তানেই এলিভেটেড ওয়াকওয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। ব্যয়বহুল হলেও ফুটপাথে চলাচলে ভোগান্তি কমাতে হংকং শহরের মডেলে এ উড়াল ফুটপাথ তৈরি করা হবে। ঢাকার জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়লেও হাঁটার পথ বাড়ছে না। এছাড়া নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বর্তমানের ফুটপাথগুলো অনেকটা সরু হয়ে যাওয়ায় কোন কোন স্থানে তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফুটপাথগুলোর মধ্যে কোথাও সরু আবার কোথাও চওড়া করে তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেই অনেক স্থানে নাগরিকদের চলাচল করতে হচ্ছে। অনেক স্থানে ফুটপাথ না থাকায় বা ফুটপাথ থাকলেও তা অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় চলাচলে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএসসিসি তার সীমানায় অতি ব্যস্ত স্থান হিসেবে গুলিস্তানকেই উড়াল ফুটপাথ তৈরির স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে, যা চলাচলে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ উড়াল ওয়াকওয়ে ব্যবহার করে জনগণ কম সময়ে ও নির্বিঘেœ গুলিস্তান এলাকায় হেঁটে চলাচল করতে পারবেন। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে নগরীর প্রতিটি ব্যস্ত সড়কে এলিভেটেড ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও প্রথমটি নির্মাণ হবে ঢাকার গুলিস্তানে। এরই মধ্যে দেব কনসালট্যান্ট নামের এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের নক্সা প্রণয়ন করেছে। এ উড়াল ফুটপাথ হবে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এটির দৈর্ঘ্য হবে ১ হাজার ১২০ মিটার। দীর্ঘ এ এলিভেটেড ওয়াকওয়েতে থাকবে ১০টি এস্কেলেটর ও ১৬টি সিঁড়ি। সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে এটি নির্মাণে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও পরে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে সচিবালয়ের সামনে থেকে জিরো পয়েন্ট হয়ে বায়তুল মোকাররম-গুলিস্তান-আহাদ পুলিশ বক্স থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-গোলাপ শাহ্ মাজার পর্যন্ত এই এলিভেটেড ওয়াকওয়েটি নির্মাণ করা হবে। ডিএসসিসির এই পাইলট প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে পরবর্তীতে নিউমার্কেট, সদরঘাট ও মতিঝিলেও এ ধরনের এলিভেটেড ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অনেক স্টিলের তৈরি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। তবে এসব ফুটওভার ব্রিজের মধ্যে কয়েকটি বাদে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ সেগুলো ব্যবহার করে না। অনেক স্থানে বাধ্য হয়ে নাগরিকগণ এসব ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন। বেশিরভাগ লোকই এসব ব্রিজ ব্যবহারের পরিবর্তে রাস্তার ওপর দিয়ে চলাফেরা করেন। এর ফলে প্রতিনিয়ত নানা দুর্ঘটনার শিকার হন অনেকেই। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বনানী ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনের ফুটওভার ব্রিজে বিদ্যুতচালিত চলন্ত সিঁড়ি সংযোগ রয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। এছাড়া ডিএসসিসিতে এরকম কোন ফুটওভার ব্রিজে আজ পর্যন্ত চলন্ত সিঁড়ি সংযোজন করা হয়নি। রাজউকের ঢাকার স্ট্রাকচার প্ল্যানে এলিভেটেড ওয়াকওয়ের মতো প্রকল্পটি না থাকায় নগর বিশেষজ্ঞগণ এ বিষয়ে কিছুটা আশঙ্কা করছেন। তাদের মতে, ব্যয়বহুল প্রকল্প সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন না করা গেলে এটি নির্মাণের প্রকৃত উদ্দেশ্য পুরোপুরি ব্যর্থ হবে। তাই সবদিক বিবেচনা করে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে এ পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা উচিত। রাজধানীর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ যাতায়াত করে হেঁটে, ফুটপাথ দিয়ে। রাজধানীর মোট ট্রিপের (যাতায়াত) প্রায় ১৮ শতাংশ হয় হেঁটে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তৈরি ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যানের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীতে মোট ট্রিপ হয় প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এর মধ্যে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ হয় হেঁটে। নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য রাজধানীতে ছোট-বড় মোট ৯০টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। এগুলো নির্মাণে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল জনকণ্ঠকে বলেন, নাগরিকদের ফুটপাথে চলাচল নির্বিঘœ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে আমরা দেশে প্রথমবারের মতো রাজধানীর গুলিস্তানে এলিভেটেড ওয়াকওয়ে বা উড়াল ফুটপাথ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। হংকং শহরেও এ ধরনের উড়াল ফুটপাথ রয়েছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি গুলিস্তানে তৈরির কারণ হচ্ছে রাজধানীর এ এলাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন কাজে আসা সবচেয়ে বেশি মানুষ ফুটপাথ দিয়ে চলাচল করে। এ এলাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হকার বা দখলদাররা ফুটপাথে দোকান বসিয়ে দখল করে রাখে। এ কারণে নাগরিকদের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। এ থেকে রেহাই পেতে ও ফুটপাথে চলাচল স্বাভাবিক রাখতে গুলিস্তানকেই বেছে নেয়া হয়েছে। এটির দৈর্ঘ্য হবে এক কিলোমিটারের বেশি। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে ডিএসসিসি এলাকায় মতিঝিল ও নিউমার্কেটে এরকম এলিভেটেড ওয়াকওয়ে তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। মূলত নাগরিকদের সময় বাঁচানোর সুবিধার্থে সকল এলাকায়ই এসব উড়াল ফুটপাথ তৈরি করা উচিত। পরিকল্পনাধীন এ প্রকল্পটির নক্সা প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
×