ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারী বিনিয়োগে অগ্রাধিকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বেসরকারী বিনিয়োগে অগ্রাধিকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও এখন থেকে মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পে বেসরকারী বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েসহ এখন থেকে চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণে দেশী-বিদেশী প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। উন্নত দেশের মহাসড়কের মতো এই সড়কগুলো হবে টোলভিত্তিক। নির্মাণ শেষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত টোল আদায় করবে। এর পর মহাসড়কের দায়িত্ব নেবে সরকার। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বপ্নের ‘এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ অনুশাসন দেন। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রায় ১৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পসহ মোট সাতটি প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, অনুমোদিত সাত প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৮৯৪ কোটি। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে তিন হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে নয় হাজার ৫২৬ কোটি টাকা যোগান দেয়া হবে। তিনি বলেন, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কটি জাতীয় মহাসড়কের অংশ। এটি চার লেনে উন্নীত হলে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে যানবাহন চলাচল বাড়বে। এ ছাড়া এটি ব্যবহার করে পরবর্তীতে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত ও নেপাল এবং বুড়িমারী দিয়ে ভারত ও ভুটানের সঙ্গে উপআঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। আঞ্চলিক আন্তঃযোগাযোগের অংশ হওয়ায় সড়কটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান। উন্নত দেশগুলোর মতোই আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে এ চার লেনে। প্রকল্পের আওতায় এ সড়কের দু’পাশে ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহনের লেনও তৈরি করা হবে, যার ফলে এটি ছয় লেনে প্রশস্ত হবে। পাশাপাশি মহাসড়কে দুই হাজার ৬৩৫ মিটারের তিনটি ফ্লাইওভার, ৪১১ মিটারের একটি রেলওয়ে ওভারপাস, ৩২টি ব্রিজ, ১৬১টি কালভার্ট, ১১টি পথচারী ওভারপাস, ৩৯টি আন্ডারপাস এবং একটি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৮৮১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দেবে ৯ হাজার ৩৩৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বাকি ২ হাজার ৫৪১ কোটি ২১ লাখ টাকা সরকারী তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে আগস্ট ২০২১ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলোÑ ২০৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা ও রংপুরে আবহাওয়া রাডারের উন্নয়ন প্রকল্প, ২২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প, ২১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী প্রকল্প, ৭৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাউজান শিল্পনগরী প্রকল্প, ২০৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত ব্রিজ সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প এবং ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা জেলার জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ভদ্রা ও সালতা নদী পুনঃখনন প্রকল্প। উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সার্টিফিকেট সনদপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হবে না, এটি তরুণদের তথ্য-প্রযুক্তির বিষয়ে দক্ষতা তৈরিতে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক বাজারে আইটি পণ্য ও সেবা রফতানিতে বাংলাদেশের যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগাতে প্রকল্পটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী একাডেমির ইংরেজী নাম ‘ইনোভেশন, ডিজাইন এ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ একাডেমি’ বা সংক্ষেপে আইডিয়া (ওউঊঅ) করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। মন্ত্রী আরও জানান, সড়কের পাশেই শিল্পনগরী না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক ঘেঁষে শিল্প কারখানা স্থাপন করলে সড়কের সম্প্রসারণে জটিলতা তৈরি হয়। সড়ক-মহাসড়কের এখন যে প্রস্থ, ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। তাই মূল সড়ক থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে শিল্প কারখানা স্থাপন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মুস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী নদী ভাঙ্গন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক অনুদান সহায়তা দ্রুত পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় আপদকালীন সহায়তা কার্যক্রম চালানোর মতো আর্থিক ও অন্যান্য প্রস্তুতি রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
×