ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যারা যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দিচ্ছে তাদেরও বিচার হওয়া উচিত ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যারা যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দিচ্ছে তাদেরও বিচার হওয়া উচিত ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের পাশাপাশি তাদের মদদদাতাদেরও বিচারের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, মন্ত্রী বানিয়ে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দিয়েছে তারাই সবচেয়ে বড় অপরাধী ও রাজাকার। এরাও যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধকারী। বাংলার মাটিতে এদেরও বিচার হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে তিনি দেশবাসীকে আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। নিহত জঙ্গীদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার এত মায়াকান্না কেন, তা দেশবাসীকে খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতদিন মানুষ পুড়িয়ে হত্যার পর এখন উনারা জঙ্গীদের নিয়ে খেলছেন। পোড়া মানুষের জন্য তার কান্না আসে না, নিহত জঙ্গীদের নিয়েই তার এত মায়াকান্না কেন? এরা (নিহত জঙ্গী) মানুষ খুন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এদের বিরুদ্ধে যদি এ্যাকশন না নেয়া হতো, মারা না যেত তারা আরও কত মানুষকে হত্যা করত। এটাই কী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন? যারা জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তাদের বিচারের ভার দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমরা কোনভাবেই জঙ্গীদের বাংলাদেশে থাকতে দেব না, এদের ঠাঁই এদেশে হবে না। মঙ্গলবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবদের সঙ্গে যৌথ বৈঠকের সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে আগামী ২২-২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে বিস্তারিত আলোচনা শেষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় বৈঠকে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের দফতর সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। বৈঠকের শুরুতেই সদ্য প্রয়াত বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আবদুর রহীমের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে- মর্মে দলটির নেতাদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সারাদেশে ভয়াবহ নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা বা বিচার না করে কী ঘি-চন্দন দিয়ে বরণ করা হবে? এসব করার হুকুম দেয়ার আগে কী তা মনে ছিল না? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করা হলো। নিজেরা হুকুম দিয়ে এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলেই জজ মিয়ার নাটক করেছে। যারা গ্রেনেড হামলা চালাল তাদেরও কী বিচার করা যাবে না? বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে শত শত মামলা, হত্যা, নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার অধিকার কে দিয়েছে? নির্বাচনে আসেননি এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের আগে আমি নিজে টেলিফোন করে বিএনপি নেত্রীকে কোয়ালিশন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ যে ক’টি মন্ত্রণালয় চায় তাও দিতে চেয়েছি। কিন্তু তাতে রাজি না হয়ে উনি নির্বাচনে আসেননি কীসের আশায়? কী আশায় উনি বসেছিলেন? তিনি বলেন, নির্বাচনে না আসার বিএনপি নেত্রীর ভুলের খেসারত কেন দেশের জনগণকে দিতে হবে? নির্বাচনে না এসে জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতে বিএনপি নেত্রীকে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার অধিকার কে দিয়েছে? এর জবাবও একদিন দেশের মানুষকে তাকে দিতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের নামে ধ্বংসযজ্ঞ এবং সম্প্রতি জঙ্গী হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের সোপানে যাত্রা শুরু করেছে, সারাবিশ্ব যখন দেশের উন্নয়নকে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে- ঠিক তখনই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে বিএনপি নেত্রী ‘ডাইনির’ মতো হুকুম দিয়ে দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করলেন। সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালালেন। যখন দেশের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলল তখন বিএনপি নেত্রী নাকে খত দিয়ে ঘরে ফিরে গেলেন। আবার আমরা যখন সবকিছু মোকাবেলা করে দেশকে সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, ঠিক তখন আবার জঙ্গী হামলার মাধ্যমে সবকিছুকে স্তব্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হলো। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের নানা দেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে সব জঙ্গীদের দমন করে ১৩ জিম্মিদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশ তা করতে পারেনি। তিনি বলেন, পোড়া মানুষদের নিয়ে খালেদা জিয়ার মন কাঁদে না, যত মায়াকান্না তা সবই হচ্ছে নিহত জঙ্গীদের ব্যাপারে! কঠোর পদক্ষেপ না নিলে তো জঙ্গী দমন হবে না। পৃথিবীর সব দেশেই যেখানে এসব জঙ্গী হামলা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানেই এমন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। নিহত জঙ্গীদের ব্যাপারে খালেদা জিয়ার এত মায়াকান্না কেন তা দেশবাসীকে বুঝতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান সামরিক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়ে সবাইকে মুক্ত করে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছিলেন। আমরা জাতির কাছে দেয়া অঙ্গীকার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশ অভিশাপমুক্ত হচ্ছে। কিন্তু যারা এসব যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছে- দেশের মাটিতে তাদেরও বিচার চাওয়া উচিত। কেননা, একাত্তরের স্বজন হারানো পরিবারদের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা সেই অধিকার রক্ষা করছি। তাই দেশবাসীর কাছে অনুরোধ- মদদদাতাদের বিচারে আপনারা সোচ্চার হোন, প্রতিবাদমুখর হোন। নাশকতাকারী, পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারী ও তাদের মদদদাতাদের বিচারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এসব নাশকতা চালিয়েছে, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে অবশ্যই তাদের বিচার হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের নমুনা দেশবাসী দেখেছে। শুধু আমার বিরুদ্ধেই ১২টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের এমন কোন নেতাকর্মী নেই যে ওই সময় নির্যাতন কিংবা মিথ্যা মামলার শিকার না হতে হয়েছে। কিন্তু আমরা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোন মামলা দেইনি। যা দিয়েছে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তবে এতিমের টাকা মেরে খাবেন, হুকুম দিয়ে মানুষ খুন করাবেন- আর মামলা কিংবা বিচার হবে না কেন? তিনি বলেন, আমরা দেশের উন্নয়ন করতেই ব্যস্ত রয়েছি, মামলা দেয়ার আমাদের সময় কৈ? অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগই হচ্ছে উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী আত্মোৎসর্গ করেছে, এমন নজির বিশ্বের কোন রাজনৈতিক দলের রয়েছে কিনা, আমি তা জানি না। দেশের মানুষ ভাষা থেকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র-উন্নয়ন যা কিছু পেয়েছে, সবই আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পেয়েছে। তাই আমাদের সম্মেলনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গত ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারাই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। কিন্তু শত ঝড়ঝঞ্ঝা মোকাবেলা করেই আওয়ামী লীগ জনমানুষের দলে পরিণত হয়েছে। দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ-ই রুখতে পারবে না, ইনশাল্লাহ।
×