ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রীদ্বয়ের আদালত অবমাননার রায় ॥ প্রেক্ষিত শপথ ভঙ্গের প্রশ্ন -বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মন্ত্রীদ্বয়ের আদালত অবমাননার রায় ॥ প্রেক্ষিত শপথ ভঙ্গের প্রশ্ন -বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর আপীল শুনানি চলাকালীন গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখ রায় ঘোষণার পূর্বেই মাননীয় প্রধান বিচারপতির করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারের দু’জন মন্ত্রী যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, তা আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য করে আপীল বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করেন। গত ৩০ আগস্ট ২০১৬ দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেয়া আদালত অবমাননার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের দুই মন্ত্রীর ব্যক্ত প্রতিক্রিয়ায় আদালত অবমাননা হয়েছে কি-না সেটি আমার লেখার বিষয় নয় বা সে রায়ের আলোচনা বা সমালোচনাও আমার উদ্দেশ্য নয়। কোন্ বিচারপতিবৃন্দের বক্তব্য সঠিক এবং কোন্ বিচারপতিবৃন্দের বক্তব্য সঠিক নয়, তা ব্যক্ত করাও আমার এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমার এ লেখনী রায়ে উল্লিখিত একটি মন্তব্যের ওপর একাডেমিক পর্যালোচনা মাত্র। প্রকাশিত রায়ের যে বৈশিষ্ট্য আগ্রহীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে তা হলো লিখিত রায়ের কিছু অবজারভেশনে মাননীয় বিচারপতিদের বিভক্ত মতামত। দু’ভাগে বিভক্ত মাননীয় বিচারপতিগণ এ বিষয়ে দু’ধরনের মত দিয়েছেন। মাননীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী প্রদেয় মতের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ মাননীয় বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, মাননীয় বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এবং মাননীয় বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার। অপরদিকে মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রদেয় মতের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন মাননীয় বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং মাননীয় বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক। উল্লিখিত অবজারভেশন অংশে বিভক্তি প্রকাশিত হলেও সকল মাননীয় বিচারপতিই এ মর্মে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, দুইজন মন্ত্রীই তাদের প্রদেয় বক্তব্য দ্বারা আদালত অবমাননা করেছেন এবং তাদের যে সাজা দেয়া হয়েছে তা সঠিক। মতানৈক্য শুধু এ প্রশ্নে যে, মন্ত্রীদ্বয় শপথ ভঙ্গ করেছেন কি-না, সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন কি-না। মাননীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী এবং তার লিখিত রায় সমর্থনকারী মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ অপর তিনজন (মোট পাঁচজন) বিচারপতি তাদের অবজারভেশনে লিখেছেন যে, মন্ত্রীদ্বয় শপথ ভঙ্গ করেছেন, সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, অন্যদিকে মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং তার মন্তব্যের দু’সমর্থক মাননীয় বিচারপতি (মোট তিনজন) লিখেছেন শপথ ভঙ্গ হয়েছে কি-না তা এ মামলার বিবেচ্য বিষয় নয়। যে বিষয়টি নিয়ে বিভক্ত মত আমরা দেখছি সে বিষয়টিই মূলত আমার আজকের লেখার বিষয়। সাধারণ মানুষসহ অনেক আইনজীবী প্রদেয় রায়ের বিভক্তি সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করেছেন। তাদের কৌতূহলের প্রেক্ষিতেই অবজারভেশন অংশের বিভক্ত মতামত সম্পর্কে এটি একটি আইনী বিশ্লেষণ মাত্র, রায়ের যথার্থতা সম্পর্কে কোন আলোচনা বা সমালোচনা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। মূল রায় অর্থাৎ সাজা ও দ- নিয়ে কোন মতভেদ ওঠেনি। যে প্রশ্নটি বার বার উঠছে সেটি হলো এই যে, সংশ্লিট অবজারভেশনটির আইনগত অবস্থান কি। এ বিষয়ের জবাব দিতে আপীল বিভাগের এখতিয়ার এবং অধিক্ষেত্র নিয়ে বিশদ আলাপ করা অপরিহার্য। সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আদালত। নাম থেকেই আঁচ করা যায় যে, যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের অধুনালুপ্ত আপীল কমিটির (বর্তমান সুপ্রীম কোর্টের) মতো এবং কমন ল’ভুক্ত অন্যান্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মতো আমাদের আপীল বিভাগও মূলত একটি আপীল আদালত। সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদে বা অন্য সৃষ্ট আইনের বলে (যেমন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত আইন) আপীল বিভাগ আপীল নিষ্পত্তি করেন, যা হয় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়, যা সকল অধঃস্তন আদালত এবং ট্রাইব্যুনাল ও কর্তৃপক্ষ মানতে বাধ্য সংবিধানের ১১১ এবং ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদে প্রদেয় ক্ষমতা ছাড়া আপীল বিভাগের কোন আদি অধিক্ষেত্র (Original Jurisdiction) নেই, এমনকি ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ ন্যায় বিচার চাইলেও যার একচ্ছত্র ক্ষমতা শুধুই আপীল বিভাগের প্রার্থী সরাসরি আপীল বিভাগে যেতে পারেন না এবং সেক্ষেত্রেও বিচারপ্রার্থীকে ১০৪ অনুচ্ছেদের দাবি তুলতে হয় এবং আপীল বিভাগকে ১০৪ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করতে হয়। ১০৮ অনুচ্ছেদ কি বলে পৃথিবীর সকল গণতান্ত্রিক দেশেই কোর্ট অব রেকর্ডের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে আদালত অবমাননাকারীদের সাজা দেয়ার। অনুরূপভাবে আমাদের ১০৮ অনুচ্ছেদও ক্ষমতা দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগকে, কেননা উভয় বিভাগই কোর্ট অব রেকর্ড। ১০৮ অনুচ্ছেদে যা লিপিবদ্ধ তা হলো সুপ্রীমকোর্ট একটি কোর্ট অব রেকর্ড এবং তার অবমাননার জন্য তদন্তের আদেশদান এবং দ-দানের ক্ষমতাসহ আইনসাপেক্ষে অনুরূপ আদালতের সকল ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং যা অত্যন্ত পরিষ্কার তা হলো আদালত অবমাননার তদন্ত এবং এর জন্য সাজা প্রদান ব্যতীত সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ সুপ্রীমকোর্টকে অন্য কিছু তদন্ত বা বিচারের ক্ষমতা প্রদান করেনি। এ ব্যাপারে অবশ্য ভারতীয় সুপ্রীমকোর্টের অবস্থান একটু ভিন্ন এ অর্থে যে, তাদের হাইকোর্টসমূহের মতো রিটের বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টেরও আদি এখতিয়ার (Original Jurisdiction) রয়েছে। সুতরাং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ১০৮ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে তদন্ত এবং বিচার করার সময় শপথ ভঙ্গের অভিযোগ বা সংবিধান লঙ্ঘনের প্রশ্নে তদন্ত বা বিচার করা যায় না। সোজা কথায় ১০৮ অনুচ্ছেদে শপথ ভঙ্গের ও সংবিধান লঙ্ঘনের প্রশ্ন বিচার্য বিষয় হতে পারে না। সে বিষয়ে বিচার করতে হয় সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যার আদি এখতিয়ার শুধু হাইকোর্ট বিভাগের। হাইকোর্ট বিভাগের প্রদেয় রায় অবশ্য আপীল বিভাগে আপীল আকারে আসতে পারে, তবে আদি এখতিয়ারের ভিত্তিতে প্রাথমিক শুনানির আদালত (Court of first instance) হিসেবে নয়। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিবৃন্দ শপথ ভঙ্গ ও সংবিধান লঙ্ঘন নিয়ে যা লিখেছেন তা আইনগত লেখা যায় কি না? এক কথায় এর জবাব হচ্ছে হ্যাঁ, কেননা মাননীয় বিচারপতিগণ বিচার্য বিষয়ের বাইরেও মন্তব্য করতে পারেন, যার ব্যাখ্যা নিম্নে দিচ্ছি। বিচার্য বিষয়ের বাইরে মন্তব্য কমন ল’ভুক্ত সব দেশেই লিখিত রায়কে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা ১. ঘটনার বিবৃতি, ২. মূল রায়, যাকে আইনের ভাষায় জধঃরড় উবপরফবহফর বলে এবং ৩. ইস্যুর বাইরে বিভিন্ন মন্তব্য, যাকে আইনে Obiter Dictum বলা হয়। আলোচিত মামলার একমাত্র ইস্যু ছিল আদালত অবমাননা, কেননা ১০৮ অনুচ্ছেদে এর বাইরে কোন ইস্যু আনা সম্ভবও ছিল না এবং একই কারণে আপীল বিভাগ যে রুল জারি করেছে তাতে শপথ ভঙ্গ বা সংবিধান লঙ্ঘন সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা মন্ত্রীদের কাছে চাননি এবং ১০৮ অনুচ্ছেদের আলোকে চাওয়া সম্ভবও ছিল না। যেহেতু ১০৮ অনুচ্ছেদ আদালত অবমাননার বাইরে কোন বিষয়ের ওপর তদন্তের বা দ-ের কোন ক্ষমতা আপীল বিভাগকে প্রদান করেনি, সেহেতু উল্লিখিত মন্ত্রীদ্বয় শপথ ভঙ্গ করেছেন কি-না বা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন কি-না ১০৮ অনুচ্ছেদ তা ইস্যু হতে পারে না। এটি লব্ধ প্রতিষ্ঠান আইন যে, ইস্যু বা বিচার্য বিষয়ের বাইরে বিচারপতিগণ যা বলেন তা জধঃরড় উবপরফবহফর নয়, বরং তা ঙনরঃবৎ উরপঃঁস, যা কারও ওপর বাধ্যকর নয়। Obiter Dictum এবং Ratio Decidendi অর্থ কি? লেটিন শব্দ Obiter Dictum-এর ভাষাগত তরজমা হবে Said by the way. Black Law Dictionary Abyhvqx Obiter n‡”Q ÔA Judicial Comment made during the conduct of delivering a Judicial opinion, but one that is unnecessary to the decision in the case and therefore not precedential. বাংলা তরজমা নিম্নরূপ হতে পারে, ‘একটি মামলার রায় প্রদানের সময় এমন মন্তব্য যা মামলার সিদ্ধান্তের জন্য অপ্রয়োজনীয়।’ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত থেকে Black Law Dictionary বলেছে strictly speaking obiter dictum is a remark made or opinion expressed by a Judge, in his decision upon a cause, “by the way”- that is incidentally or collaterally, and not directly upon the question before the Court, or it is any statement of law enunciated by the Judge or court merely by way of illustration, argument, analogy or suggestion. মওদুদ আহমদ-বনাম-রাষ্ট্র মামলায় (ডিএলআর ৬৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠা ১১৮) প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আমাদের আপীল বিভাগ লিখেছেন What is binding is the ratio of the decision and not any finding of fact or the opinion of the Court which was not required to be decided in a particular case. Ratio decidendi is principally found upon a reading of the Judgment as a whole in the light of the issues raised before the Court and not particular words or sentences of the Judgment. আপীল বিভাগ আরও লিখেছেন Pronouncement of Law which are not part of the ratio decidendi are classed as obiter dicta and are not authoritative. Hallsbury’s Laws of England-এ Ratio Decidendi এবং The enunciation of the reason or principle upon which a question before a court has been decided as alone binding as a precedent. This underlying principle is called the ratio decidendi, namely general reasons given for the decision or the general reason upon which it is based. এ ব্যাখ্যা পরিষ্কার করে দেয় যে, সেটাই রায়ের অংশ বা ratio decidendi, যা বিচার্য বিষয় বা ইস্যুর ওপর লেখা। সে অর্থে যেহেতু ১০৮ অনুচ্ছেদে একমাত্র ইস্যু বা বিচার্য বিষয় আদালত অবমাননা এবং শুধু যে ইস্যুর ওপরেই রুল জারি হয়েছে, আলোচিত রায়ের সে অংশই ratio, যা আদালত অবমাননার তদন্ত এবং সাজা সংক্রান্ত। অন্য সব মন্তব্য ইস্যু বহির্ভূত বিধায় ৎধঃরড় নয়। Hallsbury’s Laws Obiter Dictum ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন, Statements which are not necessary to the decision, which go beyond the occasion and lay down a rule which is unnecessary for the purpose in hand are generally termed as Ôdicta’. They have no binding authority. Mere passing remarks of a Judge are known as obiter dicta. সোজা কথায় সে সমস্ত মন্তব্য যা ইস্যু বা বিচার্য বিষয়বহির্ভূত তাই ড়নরঃবৎ এবং ১০৮ অনুচ্ছেদ সেহেতু শপথ বা সংবিধান লঙ্ঘন নিয়ে সম্পৃক্ত নয় (এবং রুলও একই কারণে শপথ বা সংবিধান সঙ্ঘন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ইস্যু করা হয়নি বা যায়নি), সুতরাং এটি মামলার ইস্যু বা বিচার্য বিষয় ছিল না বৈ এ সম্পর্কীয় মন্তব্য নেহায়েতই ড়নরঃবৎ. যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালতসমূহের রায় বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক গেরি সেøপার এবং ডেভিড কেলি লিখেছেন আইনের যে কোন বক্তব্য যা সিদ্ধান্তের অপরিহার্য অংশ নয়, মূলতsuperfluous, is said Ôby the way’ (English Legal System দশম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১২০)। তারা আরও বলেছেন একটি রায়ের বাধ্যবাধকতামূলক অংশ হচ্ছে শুধু তার ৎধঃরড় ফবপরফবহফর. জধঃরড় এবং ঙনরঃবৎ-এর পার্থক্য ব্যক্ত করতে বিভিন্ন উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের নিরিখে অধ্যাপক বেইলি এবং এমজে গন তাদের পুস্তক ঞযব গড়ফবৎহ ঊহমষরংয খবমধষ ঝুংঃবস, ৩য় সংস্করণ ৪১৬ পৃষ্ঠায় যা লিখেছেন তার বাংলা তরজমা নিম্নরূপ : ‘আইনের সে বক্তব্যই বাধ্যতামূলক যেটি রায়ের ৎধঃরড় ফবপরফবহফর. তিনি এ ব্যাপারে ঝরৎ জঁঢ়বৎঃ ঈৎড়ংং-এর উক্তি উদ্ধৃত করেছেন (চৎবপবফবহঃ রহ ঊহমষরংয খধ,ি বর্ণ সংস্করণ, ৭২ পৃষ্ঠা)। অধ্যাপকদ্বয় আরও লিখেছেন আইনের সে উক্তি যা তার মামলার ইস্যু নির্ধারণের জন্য অপ্রয়োজনীয় সেটি হচ্ছে ড়নরঃবৎ. উপরের আলোচনা এবং কমন ল’ভুক্ত দেশসমূহের উচ্চ আদালতের বিতর্কহীন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধু রায়ের ৎধঃরড় ফবপরফবহফর অধঃস্তন আদালত এবং কর্তৃপক্ষের ওপর বাধ্যতামূলক। ড়নরঃবৎ বা ‘ঝঃধঃবসবহঃ সধফব নু ঃযব ধিু’র কোন বাধ্যবাধকতা অধঃস্তন আদালত বা কোন কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তায় না। মন্ত্রীদ্বয়ের বিরুদ্ধে যেহেতু শুধু ১০৮ অনুচ্ছেদ মতে মামলা হয়েছে এবং যেহেতু ১০৮ অনুচ্ছদ শুধু আদালত অবমাননা ছাড়া অন্য কিছু তদন্ত বা বিচারের বিধান নেই, সেহেতু শপথ ভঙ্গ সংক্রান্ত মন্তব্য একান্তই ইস্যুবহির্র্ভূত ড়নরঃবৎ, যা কেউ মানতে বাধ্য নন। মন্ত্রীদ্বয়ের কি পদত্যাগ করতে হবে? আদালত অবমাননায় সাজা হওয়ার পরপরই মূলত বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে দাবি উঠেছিল মন্ত্রীদ্বয়ের পদত্যাগের। এ্যাটর্নি জেনারেলও তাই চেয়েছিলেন, তবে এটা যে এ্যাটর্নি জেনারেলের একান্তই ব্যক্তিগত মতামত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মন্ত্রীদ্বয়ের মন্ত্রিত্ব থাকা না থাকার বিষয়টি নির্ভর করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি না চাইলে নিশ্চয়ই মন্ত্রীদ্বয় তাদের পদে থাকতে পারতেন না। তদুপরি এর সপ্তাহ দুয়েক পরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী মোজাম্মেল হক সাহেবের নৈপুণ্যের প্রশংসা করেছেন বলে আমরা পত্রিকায় দেখেছি। আদালত অবমাননার অপরাধকে (১) দেওয়ানী এবং (২) ফৌজদারি এ দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। তবে ফৌজদারি অবমাননাকে ‘নৈতিক স্খলনজনিত’ অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, কেননা এইক্ষেত্রে নৈতিক স্খলন থাকে না। অতীতে বিশ্বময় বহু মন্ত্রীর আদালত অবমাননায় সাজা হয়েছে। কিন্তু শুধু আদালত অবমাননার দোষে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কোন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। প্রশ্নটি খুব জোরালোভাবে উঠেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেনেথ বেকারের আদালত অবমাননার দায়ে সাজা হওয়ার পর। আদালত অবমাননার দায়ে সাজা পাবার পর একজন মন্ত্রী তার পদে অভিষিক্ত থাকতে পারেন কি-না এই বিষয়ে হাউস অব কমন্স এবং বাইরে দীর্ঘ বিতর্ক হয়। বিতর্ক শেষে মন্ত্রী হিসেবে কেনেথ বেকার তার পদে অধিষ্ঠ থাকেন। আমি সে সময় যুক্তরাজ্য ইমিগ্রেশন এডভাইজরি সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ছিলাম এবং মামলাটি ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত ছিল বলে এবং বেকার সাহেব আমার সংস্থারও মন্ত্রী ছিলেন বলে আমাকে গভীরভাবে এটি পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে। দিনের শেষে মি. বেকার হাউস অব কমন্সে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, পদত্যাগ করার মতো কোন কারণ ঘটেনি। তার বক্তব্য সমর্থন করেন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচার এবং মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্য ও সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি। কেনেথ বেকার নির্বিঘেœ মন্ত্রী পদে বহাল থেকে যান। (মামলার রেফারেন্স গ-া-ঐড়সব ঙভভরপব ১৯৯২ ছই ২৭০)
×