ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী

দশ টাকায় মিলবে এক কেজি চাল। হতদরিদ্র মানুষেরও কল্পনায়, এমনকি কৃষিজীবী মানুষের ভাবনায়ও আসে না যে সত্যটি তাই হতে যাচ্ছে। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার সংগ্রহে যাদের কষ্ট আর প্রাণান্তকর পরিশ্রমে দিনাতিপাত করতে হয়, তাদের স্বপ্নের ভেতর চাল এক মহার্ঘ দ্রব্য। চালের দাম যাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে, দু’বেলা খাদ্য চাহিদা মেটাতে অসমর্থ মানুষের জীবনে এ যেন এক অলৌকিক আলোড়ন। কবি মুকুন্দ রামের চ-ীমঙ্গল কাব্যে অষ্টাদশ শতকেও খেয়া মাঝি ঈশ্বর পাটনীকেও কামনা করতে হয়েছে, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।’ তখনও দুধ-ভাত ছিল নাগালের বাইরে দরিদ্রজনদের জন্যও। সেই ভাত আজ স্বল্পদামে পাবার দিন বুঝি এসে গেছে হাতের মুঠোয়। কর্মহীন, অন্নহীন মানুষের উপোস কাটানোর দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। তাই দশ টাকায় চাল পাবার মতো সুসংবাদ দিনমজুর, ভূমিহীন, নিরন্ন মানুষের জীবনে এর চেয়ে স্বর্গীয় সুষমা আর কি হতে পারে। হতদরিদ্র যারা, পেট পুরে খাবে তারাÑ এমন দিনের স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোর নিরন্ন দিনরাত পাড়ি দেবার সময়গুলো মিলিয়ে যাবে অতীতের দেরাজে। গ্রামগঞ্জে এখনও অনেক মানুষ হতদরিদ্র, স্বল্প ও নিম্ন আয়ের। খেটে খাওয়া এসব লোক সারাবছর সব সময় ভালভাবে দিন কাটাতে পারে না। অভাব-অনটন নিয়েই তাদের নিত্যদিনের জীবন প্রবাহ। তাদের সংখ্যা অপ্রতুল হলেও নিতান্ত কম নয়। বছরের একটা সময় অর্থাৎ ফসল ঘরে ওঠার আগে এসব মানুষ আর্থিক সঙ্কট এবং অভাব-অনটনের মধ্যে কাটায় দিন। আলোহীন আঁধারে কাটানো তাদের জীবনে সূর্যালোর মতো এক আলোকছটা বিচ্ছুরিত হয়ে এসেছে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সরকার নিজেও এমনটাই চেয়ে আসছিল যে, হতদরিদ্র মানুষের কাছে সুলভ মূল্যে চাল পৌঁছানো। এক সময় এমনটাও উচ্চারিত হয়েছিল যে, ক্ষমতায় গেলে দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানো হবে। নির্বাচনী জনসভায় এমন কথা বলাও হয়েছে। অবশ্য সরকার তখনও ভাবতে পারেনি। এমনটা সম্ভব হবে। কিন্তু নিরলস প্রচেষ্টা আর কৃষকবান্ধব হিসেবে সরকারের আয়োজন অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। তাই এখন রচিত হচ্ছে সেøাগান, ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ/ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ।’ বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। যদিও দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে যারা ভূমিহীন, বিত্তহীন এবং বার্ধক্যের কারণে দৈহিক পরিশ্রমে অক্ষম তারাই সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের শিকার। এই হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে নারীরাও রয়েছেন। তাদের অবস্থাও করুণ। আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা চিলমারীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন। এর আওতায় দেশের পঞ্চাশ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে দশ টাকা করে মাসে ত্রিশ কেজি চাল দেয়া হবে। বছরে পাঁচ মাস সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নবেম্বর এবং পরে মার্চ ও এপ্রিলে এই চাল দেয়া হবে। এই পাঁচ মাস চালের দাম বাড়তির দিকে থাকে। তাই এই পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের জন্য চালু হচ্ছে বিশেষ রেশন কার্ড। তারাই পাবেন কার্ডের বিপরীতে চাল। প্রতি পাঁচ শ’, পরিবারের কাছে চাল বিতরণের জন্য একজন করে ডিলার থাকবে। ক্রমান্বয়ে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই বিশেষ সেবার আওতায় চলে আসবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। বর্তমান বাজারে মোটা চালও ৩৫/৪০ টাকা করে মেলে না। ১০ টাকা কেজি দরে চাল পেলে হতদরিদ্ররা তাদের আয়ের বাকি অংশ দিয়ে খাদ্য চাহিদার পাশাপাশি অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারবেন। কমে আসবে দেশে হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগও। তবে এক্ষেত্রে যেন কোন দুর্নীতি প্রবেশ করতে না পারে, প্রকৃত দরিদ্ররা যেন রেশন কার্ড পেতে পারে। সে ব্যাপারে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া দুর্গন্ধযুক্ত অতি নিম্নমানের চাল যেন বিতরণ করা না হয়। এসব কর্মসূচীতে অনেক সময় অনিয়ম এবং ক্রটিপূর্ণ প্রক্রিয়ার অভিযোগ ওঠে। হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণের ক্ষেত্রে এসব অনিয়ম যেন অনুপ্রবেশ না করে, সেজন্য সতর্ক পদক্ষেপও জরুরী। যথাযথভাবে কার্যক্রমটি পরিচালিত হলে দেশবাসীর মতো প্রকল্পটি সত্যিকারার্থে লাভবান হবে।
×