ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান ও তুরস্কের ঔদ্ধত্য

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পাকিস্তান ও তুরস্কের ঔদ্ধত্য

যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাশেমের ফাঁসির পর তাদের পেয়ারা পাকিস্তান ফের চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়ার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সে কারণে এই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে নিষেধ করা হয়েছে পাকিস্তানকে। রবিবার ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই বার্তা দেয়া হয়। এর আগেও আমরা দেখেছি আলবদর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নাক গলায় পাকিস্তান। বাংলাদেশ সরকার তখনও একই ধরনের কড়া বার্তা দেয়। সে সময়েও ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর জন্য পাকিস্তানের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিল বাংলাদেশ। দফায় দফায় নাক না গলানোর জন্য পাকিস্তানকে বলা হলেও তারা শুনছে না। কথায় বলে- চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। একাত্তরে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনক্সা প্রণয়নকারী নিজামীকে নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহের মধ্যে দুই দফা বিবৃতি দিয়ে কূটনৈতিক সংস্কৃতিতে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সে সময় আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যটি ছিল যথার্থ। তিনি বলেছিলেন, ‘নিজামী যদি পাকিস্তানের এতটাই অনুগত থেকে থাকেন তবে পাকিস্তান কেন তাকে নিয়ে গিয়ে নাগরিকত্ব দেয়নি?’ স্মরণযোগ্য, সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ- এই জোড়া যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ-ের রায় কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তান তার দীর্ঘকালের ওই দুই মিত্রের জন্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করে। একই ইস্যুতে পুরনো বন্ধুদের জন্য এর আগেও মায়াকান্নার নজির রেখেছিল পাকিস্তান। ‘পাকিস্তানের প্রতি অনুগত এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করায়’ কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে দাবি করে সে সময় দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। লক্ষ্যযোগ্য হলো, যুদ্ধাপরাধীদের একের পর এক ফাঁসির পরিপ্রেক্ষিতে একই ধরনের ধৃষ্টতা দেখিয়ে চলেছে পাকিস্তান। প্রত্যেকবারই এ জাতীয় ধৃষ্টতার কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার। একাত্তরে বাংলার মাটিতে নারকীয় গণহত্যা চালানোর পরও পাকিস্তানের ভেতর সামান্যতম অনুতাপ পরিলক্ষিত হয়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হওয়ায় সন্ত্রাসবাদের স্বর্গ পাকিস্তান আর নিশ্চুপ থাকতে পারেনি। প্রতিটি ফাঁসির পর দেশটির প্রতিক্রিয়া তারই বহির্প্রকাশ। গণহত্যায় নিজেদের সম্পৃক্ততা এভাবেই স্পষ্ট করল পাকিস্তান। ওদিকে মীর কাশেমের ফাঁসির পর তুরস্কও এক বিবৃতিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে। এর আগে নিজামীর ফাঁসির খবরেও দেশটি গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছিল। তুরস্কের সরকার গণমাধ্যমকর্মীদের বরখাস্ত করছে। জেলে পাঠাচ্ছে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে। সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এরদোগান সরকার এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার ৭৭৭ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করেছে। ২ হাজার ৭৪৫ বিচারককে আটক করেছে। অবাক হতে হয়, তারাই আবার দুঃখ প্রকাশ করছে একজন বর্বর খুনীর ফাঁসি হওয়ায়! আমরা আশা করব, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বক্তব্য প্রকাশে পাকিস্তান ও তুরস্ক সর্বদা সতর্ক ও সংযত থাকবে। তা না হলে সরকারের কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া বিকল্প থাকবে না।
×