ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার

প্রকাশিত: ০৭:০২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার

ঈদ উৎসবের ছুটিতে সবসময় বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নামে। ঈদ যাত্রায় অনেক ভোগান্তি, দুঃখ, কষ্ট, যানজট ইত্যাদির ধকল মেনে নিয়েও জনসমুদ্র এবারও পথে পথে। উদ্দেশ্য প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করা। সড়ক, রেল ও নৌপথ সর্বত্রই ছিল মানুষের স্রোত। তবুও গ্রামে নিজের বাড়ি ফেরাটাই সবার লক্ষ্য ছিল। প্রিয়জন, পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের আনন্দের চেয়ে এসব কষ্ট, ভোগান্তি ঝক্কি ঝামেলা যেন সামান্যই। নাড়ির টানে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে। আপনজনের সান্নিধ্যে, বিশেষ করে গ্রামের বাড়িতে ঈদ উৎসব পালন বাঙালীর চিরায়ত স্বভাব। আর এ উৎসবে বাড়ি যাওয়ার তালিকায় স্টুডেন্টরাই এগিয়ে। নগর জীবনে প্রাত্যহিক ছকে বাধা পড়ালেখা, কর্মব্যস্ততা, এক্সাম, নানা টেনশন, মানসিক চাপ, বিচিত্র টানাপড়েনে হাঁপিয়ে ওঠা তরুণ-তরুণী-কিশোর-কিশোরী সবাই চায় একটু প্রশান্তির ছোঁয়া, স্বস্তির পরশ। প্রতিটি ঈদ মুসলিম আবাল বৃদ্ধবনিতাকে দাঁড় করায় এক কাতারে, একই সঙ্গে সুখ ভাগাভাগি করার অনাবিল আনন্দে। এসব কারণে ঈদ উৎসবের সময়টুকু হয়ে ওঠে জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুখকর সময়। কখন ঈদের দিনটি ঘনিয়ে আসবে, সেই অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে চাকরিজীবীÑ কেনা ভালবাসে ছুটি? ছুটির খবরে আনন্দে দুলে ওঠে সবার মন। ছুটির দিন যতই এগিয়ে আসে তত চনমন করে ওঠে মন। বিশেষ করে হোস্টোলে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের আনন্দের বাধ যেন ভেঙ্গে যায়। আবার যখন ছুটি ফুরিয়ে আসতে থাকে, তখন যেন মন ভেঙ্গে যায়। শুরু হয় নতুন করে প্ল্যান করা। যাদের ঈদের পরে এক্সাম থাকে তাদের যেন মানসিক টেনশন একটু বেশিই থাকে। কারণ ঈদের ছুটিতে তেমন পড়ালেখা করার সুযোগ হয় না। আবার পরীক্ষাতেও অংশ নিতে হবে এ যেন শাখের করাত। ঈদের ছুটিতে সাধারণত মানুষ গ্রামের বাড়ি যায় নাড়ির টানে। লম্বা ছুটি পাওয়ায় তাই আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ গ্রামমুখো হবে এবার, বেশি দিন ঈদের ছুটিতে স্বজনদের সঙ্গে কাটানোর আশায়। যার যার নিজস্ব গ্রামে প্রিয় স্মৃতিময় পরিবেশে অনেকদিন পর পুরনো বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন-পাড়া-প্রতিবেশীদের সান্নিধ্যে ফিরে আসার এবং একসঙ্গে বসে মনখুলে আড্ডা দেয়ার আনন্দ যে কতটা মধুর যা বলে শেষ করা যায় না। যার সুযোগ খুব সহজে জোটে না সবার ভাগ্যে। এবারের ঈদ ছুটিতে অজস্র মানুষ নিজ নিজ এলাকায় ফেরায় সেখানে আনন্দ উচ্ছ্বাস আর আবেগময় অনুভূতির নহর বয়ে গেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘদিন মায়ের হাতের রান্না খাওয়া হতে বঞ্চিতরা যেন মনের সাধ মিটিয়ে মায়ের হাতের রান্না উপভোগ করে। ঘুরে ফিরেই যেন মায়ের কোল। এ যেন অন্যরকম অনুভূতি। কংক্রিটের খাঁচায়, ফ্ল্যাট এ্যাপার্টমেন্টের চার দেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ জীবনের বাইরে গ্রামের সবুজ প্রকৃতির মাঝে সহজ সরল জীবনযাপনের অকৃত্রিমতা, সারল্য, বাহুল্যবর্জিত স্নিগ্ধ সৌন্দর্য যে কাউকে খুব সহজেই আপ্লুত করে। মাটির কাছাকাছি গেলে সোঁদা গন্ধ জীবনটাকে নতুনভাবে জানার পথ দেখায়, মনে প্রাণে নতুন উপলব্ধি জাগিয়ে তোলে। সারাদিন পড়াশোনা, কোচিং নয়তো অবসরে কম্পিউটার, মোবাইল, ট্যাবে বিনোদনের নানা উৎসের খোঁজ ব্যস্ত সময় কাটায় তারা। জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধির সুযোগ কোথায় তাদের? এসব কারণেই সুযোগ মিললেই দে ছুট মায়ের কাছে। আর এক্ষেত্রে ঈদ যেন সবচেয়ে বড় সুযোগ। শহরে বসবাস করলেও আমাদের সবার শেকড় কিন্তু গ্রামেই প্রোথিত রয়েছে। শহরের চাকচিক্যময় জীবনে অভ্যস্ত হয়ে আমরা গ্রামকে ভুলে যাই, গ্রামকে গ্রামের মানুষগুলোকে অবজ্ঞা করতে থাকি। এটা আমাদের এক ধরনের দেউলেপনা ছাড়া আর কিছু নয়। এই দেউলেপনা ঠেকাতে কাজ করতে হবে তরুণ প্রজন্মকেই। বুদ্ধিবৃত্তির যে নাগরিক বিষয়গুলো আছে তা গ্রামে নিয়ে যেতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকা-কে শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামের তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে ওইসব কর্মকা-ে। গ্রামের মানুষের রুচিকে এমন একপর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে, যেন তারা অপরিকল্পিত নাগরিক জীবনের চাকচিক্যের প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে না পড়ে। ঈদের অনাবিল আনন্দ প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ুক এবং সুন্দও ও অনাবিল একটি দেশ যেন গড়তে পারি এই হোক প্রত্যয়।
×