ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোচ গোলাম রাব্বানি ছোটন

‘এই সাফল্য দেশের মহিলা ফুটবলের মাইলফলক’

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘এই সাফল্য দেশের মহিলা ফুটবলের মাইলফলক’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে তাম্রপদক অর্জন। এএফসি অনুর্ধ ১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার চ্যাম্পিয়ন। একবার তৃতীয় হওয়া এবং ফেয়ার প্লে ট্রফি লাভ। এরপর অনুর্ধ ১৬ আসরের বাছাইপর্বেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূলপর্বে উন্নীত। প্রতিটি সাফল্যের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে গোলাম রাব্বানি ছোটনের নামটি। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের দলের যিনি গর্বিত কোচ। সোমবার তার অধীনে বাংলাদেশ অ-১৬ মহিলা দল হারায় আমিরাতকে, ৪-০ গোলে। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘শেষ ভাল যার, সব ভাল তার। চাইনিজ তাইপেকে হারানোর পর যেন আমার খেলোয়াড়রা অতি আত্মবিশ্বাসী না হয়, সেজন্য খেলার আগে মেয়েদের বলেছিলাম আত্মতুষ্টিতে ভোগা যাবে না। ম্যাচে যেভাবেই হোক জেতা চাই। গোলসংখ্যা কোন বিষয় না।’ ছোটন আরও যোগ করেন, দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছি, এটাই তৃপ্তি। এই জয় বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে। এজন্য মেয়েদের অভিবাদন। আমাদের মেয়েদের অভিনন্দন জানানোয় প্রধানমন্ত্রীকেও জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। বাফুফেকে ধন্যবাদ তারা এই দলের জন্য সব রকম সহযোগিতা দেয়ায়। বিশেষ করে ধন্যবাদ মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণকে।’ ম্যাচ প্রসঙ্গে ছোটনের ভাষ্য, ‘মাঠ ছিল কাদামাখা ও ভেজা। তাছাড়া ছিল প্রচ- গরম। মেয়েরা ছিল একটু টায়ার্ডও। তারপরও তারা যেভাবে ডমিনেট করে খেলেছে, তাতে আমি খুশি।’ এই আসরের মূলপর্ব আগামী ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হবে থাইল্যান্ডে (প্রথমে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল চীনে)। ওই আসরে অংশ নেবে মোট আট দল। উত্তর কোরিয়া, চীন, জাপান ও থাইল্যান্ড খেলবে সরাসরি। আর বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে খেলবে আরও চার দল। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশসহ কোয়ালিফাই করেছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া (আরেকটি দল কোয়ালিফাই করার অপেক্ষায়)। এ প্রসঙ্গে ছোটনের ভাষ্য, ‘এখন থেকেই বাংলাদেশ দলের ক্যাম্প শুরু করা উচিত। সেই সঙ্গে বেশি সংখ্যক প্রদর্শনী বা প্রীতি ম্যাচ খেলা উচিত। এক্ষেত্রে আমার চাওয়াÑ আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই বাফুফে থেকে প্রাথমিক আশ্বাস পাওয়া গেছে থাইল্যান্ড বা চীনের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলার বিষয়ে।’ আগামী সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর অনুষ্ঠিত হবে ভারতে, আগামী নবেম্বরে। ওই আসরে বাংলাদেশ জাতীয় দলে কজন অনুর্ধ ১৬ দলের খেলোয়াড় থাকবে? ছোটনের ইঙ্গিত, ‘বেশ কিছু খেলোয়াড় থাকার সম্ভাবনা আছে।’ দলের এই সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব ছোটন স্বার্থপরের মতো একাই নিতে চাননি, ‘আমার দুই সহকারী কোচ লিটু এবং তার স্ত্রী অনন্যা দলের জন্য যেভাবে খেটেছেন, তা বলে বোঝানো যাবে না। আমি স্বভাবে অনেক গম্ভীর ও রাগী। তাই মেয়েরা আমাকে ভয় পায়। তাই কিছু বলতে সাহস পায় না। এক্ষেত্রে লিটু মেয়েদের কাছ থেকে সব কিছু শুনে সেভাবে সমস্যার সমাধান করেছে। তার স্ত্রী কোচ অনন্যা তো মেয়েদের জ্বর হলে তাদের মাথায় পানি পর্যন্ত ঢেলেছে রাত তিনটা পর্যন্ত। এই আসর শুরুর আগে যখন ক্যাম্প আরম্ভ হয়, তখন দলের আট খেলোয়াড় সাংঘাতিক ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়। আমি তো ভয়ই পেয়ে যাই, যদি তারা খেলতে না পারে! অনন্যাই মেয়েদের সেবা যতœ করে ওদের দ্রুত সুস্থ করে তোলে। দলের মিডিয়া ম্যানেজার আহসান আহমেদ অমিতের অবদানও অনস্বীকার্য।’ দলের অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকারের মন্তব্য, ‘ম্যাচে হ্যাটট্রিক করতে পারিনি, এজন্য আক্ষেপ নেই। দলের জয়টাই আসল।’ ম্যাচ শেষে আমিরাতের সিরিয়ান কোচ আজম ঘটক বলেন, ‘বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে, তাতে তাদেরই মূলপর্বে যাওয়াটা মানায়। আশা করি সেখানেও তারা ভাল খেলবে। এই দলটার ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল। বাংলাদেশ দলের সানজিদা, স্বপ্না, আনুচিং, কৃষ্ণা এবং গোলরক্ষক মাহমুদার খেলা অনেক ভাল লেগেছে।’
×