ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এএফসি অনুর্ধ ১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে অপরাজিত থেকে এশিয়ার সেরা আটে বাংলাদেশ, টানা পাঁচ জয়ে ২৬ গোল, বাংলাদেশ ৪-০ আরব আমিরাত

শেষটাও রাঙ্গিয়ে দিলেন কৃষ্ণারা

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

শেষটাও রাঙ্গিয়ে দিলেন কৃষ্ণারা

রুমেল খান ॥ আগের রাতেই বৃষ্টি হয়েছে মোটামুটি। আশা ছিল সকালের ম্যাচে একটা শীতল আবহাওয়া বিরাজ করবে। তাতে খেলতে সুবিধেই হবে। কিন্তু সকাল হতেই সে আশায় গুড়েবালি। কেননা একটু বেলা বাড়তেই কড়া রোদ উঠে গেল। ভ্যাপসা গরম। তার ওপর কাদামাখা মাঠ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠে পানি জমলে বা কর্দমাক্ত হলে সেই অবস্থার উত্তরণ ঘটানোর কোন সুনাম নেই। কাজেই রোদ উঠলেও কাদা শুকাতে পারেনি। তারপরও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে রেহাই দেয়নি বাংলাদেশ মহিলা দল। তাদের হারিয়েছে ৪-০ গোলে। এর ফলে এএফসি অনুর্ধ ১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে ‘সি’ গ্রুপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশের কিশোরীরা। এমন মাঠে এবং আবহাওয়ায় ভাল খেলা মুশকিল। তারপরও বাংলাদেশ দারুণ খেলে জয় কুড়িয়ে নেয়। ম্যাচে জিতলেও বাংলাদেশের জন্য আক্ষেপ ছিল দুটি। এক. এই মাঠে ২০১৪ আসরে আমিরাতকেও গ্রুপ পর্বে ৬-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সেই স্কোরলাইনটা স্পর্শ করতে পারল না তারা। দুই. সেই ম্যাচে একটি গোল ছিল কৃষ্ণা রানী সরকারের। সোমবারের ম্যাচেও দলের অধিনায়ক কৃষ্ণা গোল করেছে, তাও জোড়া। অনেক চেষ্টা করেও নিজের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকটি করতে করতে পারেনি সে। বাংলাদেশ দলের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কাজ আগের ম্যাচেই সারা (চাইনিজ তাইপেকে হারিয়ে)। ফলে শেষ ম্যাচে হারলেও কোন ক্ষতি নেই। তাই স্বভাবতই বাংলাদেশ দলের ওপর চাপ ছিল না তেমন। তবে অপরাজিত থাকার একটা চাপ ক্ষীণ হলেও ছিল। তবে প্রতিপক্ষের জালে এক হালি বল পাঠিয়ে তারা প্রমাণ করেছে কোন চাপে ছিল না তারা। বরং দাপটের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে। সোমবার অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম ম্যাচে শুরু থেকেই আক্রমণ করে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ২ মিনিটে কৃষ্ণার শট প্রতিহত করে আমিরাত গোলরক্ষক দালাল আবদুল্লাহ্ ফারহান বাশির আলহাম্মদি। ৪ মিনিটে মারজিয়ার কর্নার থেকে হেডে গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেয় অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার (১-০)। ১৮ মিনিটে সানজিদার কর্নার থেকে নারগিসের হেড আমিরাতের পোস্টে লেগে মাঠের বাইরে চলে যায়। হতাশায় পোড়ে বাংলাদেশ দল। ৩৫ মিনিটে বক্সের ভেতরে কৃষ্ণাকে ফাউল করে আমিরাতের মিডফিল্ডার মরিয়ম আহমেদ। উজবেকিস্তানের রেফারি এদিতা মিরাবিধোবা পেনাল্টির নির্দেশ দেন। উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ শিবির। শামসুন্নাহার শট নেয়। কিন্তু তার নেয়া গড়ানো শট পোস্টের বাইরে চলে গেলে সেই উল্লাস পর্যবসিত হয় আক্ষেপে। ৪০ মিনিটে মারজিয়া কর্নার করে। সেই বল জটলার মধ্যে বাংলাদেশের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে আমিরাতের পোস্টে ফিরে আসে। ৫১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। কর্নার করে সানজিদা। সেই বল জটলার মধ্যে পায় কৃষ্ণা। সেটাকে জালে পাঠাতে কোন ভুল হয়নি কৃষ্ণার (২-০)। এ আসরে এটা কৃষ্ণার ব্যক্তিগত অষ্টম গোল, যা দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ৫২ মিনিটে মারজিয়া একটি গোল করলেও তা বাতিল হয়ে যায় অফসাইউডের কারণে। ৫৬ মিনিটে আবারও আনন্দের বন্যায় ভাসে বাংলাদেশ। ডি বক্সের ভেতরে কৃষ্ণা বল পেয়ে ব্যাকহিল করে। সেই বল চলে যায় মারিয়া মান্দার কাছে। মারিয়া গোলমুখে শট নিলে তা আমিরাতের এক ডিফেন্ডার তা ক্লিয়ার করলেও শেষরক্ষা হয়নি। কারণ সেই বলটি জালে ঢুকিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে ফরোয়ার্ড আনুচিং মগিনি (৩-০)। এটা এই আসরে তার ব্যক্তিগত পঞ্চম গোল। ৭৮ মিনিটে আনুচিং আরেকটি গোল করলেও সেই গোল অফসাইড বলে বাতিল হয়। ৮৫ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে উঁচু ক্রস করে বদলি মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা। সেই বল গোলরক্ষক আপ্রাণ চেষ্টাতেও ধরতে পারেনি। সেই বল মাটিতে পড়তেই ওঁৎপেতে আরেক বদলি মিডফিল্ডার তহুরা খাতুন বুদ্ধিদীপ্ত হেডে পাঠিয়ে দেয় আমিরাতের জালে (৪-০)। এটা এ আসরে তহুরার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় গোল এবং বাংলাদেশের দলীয় ২৬তম গোল, যা ‘সি’ গ্রুপের সবচেয়ে বেশি দলীয় গোল (ইরানের গোল ২৫, পরের ম্যাচে চাইনিজ তাইপের সঙ্গে মোকাবেলা করার আগ পর্যন্ত পরিসংখ্যান)। এই আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ দল পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মোট পাঁচ লাখ টাকা পাবে। এছাড়া আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) বাংলাদেশ দলকে বিশেষ এক সংবর্ধনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
×