ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় ভুয়া খতিয়ানে বন্দোবস্ত

কয়েক শ’ কোটি টাকার খাস জমি বেহাত

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কয়েক শ’ কোটি টাকার খাস জমি বেহাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৫ সেপ্টেম্বর ॥ ভূমিহীন আলী আকবর গাজীর বাড়ি চাকামইয়া ইউনিয়নে। ১৯৭-কে/১৯৭৪-১৯৭৫ নং বন্দোবস্ত কেসের মাধ্যমে দেড় একর খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। ১৯৮৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এ জমি দলিল করে দেয়া হয়। দলিল নং-১১৬৯। ১৯৮৬ সালের ১৭ এপ্রিল খতিয়ান খুলে দেয়া হয়, ৬৪৬। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ১৪ জুন এ জমি বিক্রি করে দেন আলী আকবর গাজী। বন্দোবস্ত কেসের কবুলিয়াতের শর্ত ভঙ্গ করে বিক্রির কারণে কেসটি বাতিলযোগ্য। ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আব্দুল হক গাজী তদন্ত প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করেছেন। এ কেসটি বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। একইভাবে ৩৫০ কে/১৯৮৯-১৯৯০, ২১১ কে/২০০৮-২০০৯ এর। কেসের নথির কবুলিয়াতের ২০ নম্বর শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। এ বন্দোবস্ত নথি দুটিও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। ধূলাসার ইউনিয়নের ১৩৮ কে/১৯৮৯-১৯৯০ নং বন্দোবস্ত কেসটিতে দুই একর জমি বন্দোবস্ত দেখানো হয়েছে। যেখানে নথিতে বন্দোবস্ত গ্রহীতার বাবার নাম কবুলিয়াত ফরমে কাটাকাটি করে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। ধূলাসার ইউনিয়নের ২১৩-কে/২০০৮-২০০৯ নং বন্দোবস্ত কেসটিতে দেখা গেছে দুই একর ১১ শতক জমির মধ্যে বিশাল পুকুর রয়েছে। ৫৪-কে/২০১০-২০১১ ও ৫৭-কে/২০১০-২০১১ বন্দোবস্ত কেসের ৯৩০ নম্বর দাগের ২৫ শতক জমিতে বর্তমানে ৩-৬ ফুট পানি রয়েছে। এমন ভুরিভুরি অভিযোগ পাওয়া গেছে বন্দোবস্ত গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে। একই দশা ৩০০ ও ৩০২-কে/২০০৬-২০০৭ বন্দোবস্ত কেস দুটির। এমন অভিযোগ নিত্যদিনের। লতাচাপলী মৌজায় অন্তত কয়েক শ’ ত্রুটিপূর্ণ বন্দোবস্ত কেস রয়েছে। যা বাতিল করা প্রয়োজন। এখানে আবার এসব ভুয়া কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত দেখিয়ে লুজ খতিয়ানের মধ্য দিয়ে দখলে রাখা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার উন্নয়নে এসব খাস জমি উদ্ধার করা প্রয়োজন। নইলে এ জমি আবার সরকারকে কোটি কোটি টাকার বিনিময় অধিগ্রহণ করতে হবে। কুয়াকাটা পৌর এলাকার লতাচাপলী মৌজার ৫১৭৪-৫১৭৮, ৫৪৩৭-৫৪৩৯ ও ৫৬৫৪ নং দাগসমূহে চার একর ৭৭ শতক খাস জমি নিয়ে ১৩৪৬ নম্বর লুজ খতিয়ান খোলা হয়। এ খতিয়ানটি ভুয়া, অবৈধভাবে সৃজিত উল্লেখ করে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ভূঃ রাঃ ৯৬৬/কলা নং স্মারকে এ কলাপাড়ার ভূমি প্রশাসন খতিয়ানটি বাতিল করে। কিন্তু জমি উদ্ধারের সর্বশেষ কার্যক্রম থমকে আছে। কুয়াকাটা পৌরসভার মধ্যে এ পরিমাণ জমির বর্তমান মূল রয়েছে অন্তত ২৫ কোটি টাকা। অথচ এ জমি দখল করে এখন এক আবাসন কোম্পানি স্থাপনা তুলেছে। কিছু অংশ দখল করে এক কাউন্সিলর বাড়ি করেছে। এভাবে সরকারের শত শত কোটি টাকার খাস জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এসব খতিয়ান এবং ত্রুটিপূর্ণ বন্দোবস্ত কেস শনাক্ত করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চিহ্নিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ২০১১ সালে। ভূমি সচিব এ আদেশ দেন। ২০১১ সালের প্রথমদিকে সরকারীভাবে লতাচাপলী, চরচাপলী, কাউয়ারচর ও গঙ্গামতি মৌজার খাস জমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এই নির্দেশনায় বেনামে ভূমিহীন সাজিয়ে বন্দোবস্ত কেস খাস জমি উদ্ধারে পর্যটন এলাকা কুয়াকাটায় ভূমিহীনদের নামে দেয়া ত্রুটিপূর্ণ বন্দোবস্ত কেস শনাক্ত করতে গঠিত বিশেষ কমিটি তখন কাজ শুরু করে। ওই কমিটির নির্দেশনায় তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আট শতাধিক বন্দোবস্ত কেস যাচাই-বাছাইয়ের জন্য শনাক্ত করেছেন। কিন্তু বর্তমানে এ কাজের অগ্রগতি রহস্যজনকভাবে থমকে আছে। উল্টো বর্তমানে নামে-বেনামে কিংবা ত্রুটিপূর্ণভাবে বন্দোবস্ত নেয়া খাস জমি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে হস্তান্তর চলছে। সর্বশেষ মে মাসে কলাপাড়া উপজেলা খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় এসব ত্রটিপূর্ণ বন্দোবস্ত কেসসমূহ বাতিল করা হবে। নইলে প্রকৃত ভূমিহীনরা কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত পাবে না।
×