ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাবাড়ীর জঙ্গী আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিল অভিজিতের খুনীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যাত্রাবাড়ীর জঙ্গী আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিল অভিজিতের খুনীরা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ প্রকৌশলী লেখক ড. অভিজিত রায়ের হত্যাকারীরা যাত্রাবাড়ীর একটি জঙ্গী আস্তানায় বেশ কিছুদিন প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। আস্তানাটি ছিল একটি মাদ্রাসার ভেতরে। সেখানে সাগরসহ দুইজন তাদের প্রশিক্ষণ দেয়। ওই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অভিজিত রায় ছাড়াও প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন ও শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে হামলাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যাত্রাবাড়ীর ওই মারকাযে (জঙ্গীদের নিরাপদ আস্তানা) অনেক জঙ্গীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এরপর টার্গেট অনুযায়ী হামলাকারীরা সুবিধাজনক মারকাযে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে চলে যায়। অভিজিত হত্যার পর যাত্রাবাড়ীর ওই মারকাযে হত্যাকারী ও তাদের প্রশিক্ষণদাতারা শুকরিয়া আদায় করে আনন্দ করে। প্রকাশক দীপন হত্যায় গ্রেফতারকৃত সবুরকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে টঙ্গী থেকে গ্রেফতার হয় আব্দুস সবুর ওরফে আব্দুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সাদ। সাদ ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃক পুরষ্কার ঘোষিত ছয় জঙ্গীর একজন। তাকে ধরিয়ে দিতে ২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। সবুরের বাড়ি কুমিল্লায়। সে যাত্রাবাড়ীর ফরিদাবাদ মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। এর আগে গত ১৫ জুন বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়ে সুমন পাটোয়ারী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। তাতে নাম প্রকাশ পাওয়া দীপনের অন্যতম হত্যাকারী মইনুল হাসান শামীম গত ২৩ আগস্ট গ্রেফতার হয়। এদের দেয়া তথ্য মোতাবেক নাম আসে সবুরের। সবুর গত বছরের ৩১ অক্টোবর ঢাকার মোহাম্মদপুরে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে ও একই দিন রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনার প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যায় জড়িত। তাকে ৬ দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মামলা দুটির তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকারী সংস্থার একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বেশ কয়েকটি মারকায থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মারকায ঢাকার চারদিকে এবং অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি জায়গায় অবস্থিত। এর মধ্যে ঢাকার কয়েকটি মাদ্রাসায়ও মারকায রয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত একটি মারকাযে রিমান্ডে থাকা সবুর অনেক দিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। মারকাযটি অনেক বড়। সেখানে বহু জঙ্গীর একত্রে প্রশিক্ষণ হয়েছে। ওই মারকাযে প্রশিক্ষণকালে লেখক অভিজিত রায়, প্রকাশক দীপন ও শুদ্ধস্বর প্রকাশনায় হামলার বিষয়টি অনেকবার আলোচনা হয়েছে। সেখানে সাগরসহ দুইজন বড়ভাই সেখানে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করে। প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন দলে ভাগ করা হয়। একেকটি দলকে একেক জনকে হত্যার জন্য পাঠানো হয়। অভিজিত রায়ের হত্যাকারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে যাত্রাবাড়ীর মারকায থেকে বেরিয়ে যায়। তারা সুবিধাজনক মারকাযে অবস্থান নেয়। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জঙ্গীরা অভিজিত রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। বাধা দিতে গিয়ে আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। অভিজিত রায়কে হত্যার পর যাত্রাবাড়ীর ওই মারকাযে আনন্দ করা হয়েছিল। অভিজিত হত্যার বিষয়টি আগে থেকেই সবুরের জানা ছিল। ওই কর্মকর্তা বলছেন, দীর্ঘ তদন্তের পর সবুরের নাম প্রকাশ পায়। তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জুন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য মোজাহিদুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম ওরফে সোলায়মান ওরফে আরাফাত গ্রেফতার হয়। ওই দুই জঙ্গী রিমান্ডে দুই মাদ্রাসা শিক্ষকের নাম প্রকাশ করে। সেই তথ্য মোতাবেক গত ২৬ জুন রাজধানীর গেন্ডারিয়া থেকে গ্রেফতার হয় মোঃ নাইম ওরফে সাইফুল ইসলাম ওরফে সাদ (৩০)। আর ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে গ্রেফতার হয় সোহেল আহম্মেদ ওরফে সোভেল (৩২)। দুই শিক্ষকই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দাওয়াতী সেলের শীর্ষ নেতা। এর মধ্যে নাইম ওরফে সাইফুল ইসলাম ওরফে সাদ যাত্রাবাড়ী এলাকার গেন্ডারিয়া থানাধীন ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষক। আর সোহেল রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানাধীন আল আরাফাহ ইসলামীয়া মাদ্রাসার শিক্ষক।
×