ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রীদের ওপর বিশেষ নজরদারি

জিকা ভাইরাস ঠেকাতে বিমান ও স্থলবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জিকা ভাইরাস ঠেকাতে বিমান ও স্থলবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা

আজাদ সুলায়মান ॥ জিকা ভাইরাস আতঙ্কে দেশের প্রতিটি আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পয়েন্টে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর, সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরে কাজ শুরু করেছে বিশেষ টিম। এসব ইমিগ্রেশন কাউন্টারেই বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে জিকা ভাইরাসের লক্ষণ সম্পর্কে। সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া ও আরও কয়েকটি দেশ থেকে আগত যাত্রীদের ওপর চলছে বিশেষ নজরদারি। জিকা ভাইরাসের লক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য কনিকাও প্রচার করা হচ্ছে ইমিগ্রেশন কাউন্টারগুলোতে। তবে সুখবর এখন পর্যন্ত দেশের কোন ইমিগ্রেশনেই জিকার লক্ষণ সংক্রান্ত কোন যাত্রীর সন্ধান মিলেনি। চিকিৎসকরা বলছেন, জিকা ভাইরাস আক্রান্ত কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। তারপরও এ ভাইরাস প্রতিরোধে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। সোমবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্য কর্মীদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা যায়। দেশের অন্যান্য ইমিগ্রেশন চেকপোস্টেও একই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ছাড়াও বেনাপোল ইমিগ্রেশনে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম বিদেশী নারী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান বলেছেন, জিকা ভাইরাস আতঙ্ক দূর করার জন্য ইতোমধ্যেই বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উড়োজাহাজ থেকে নেমে এ্যারাইভাল ইমিগ্রেশনে পৌঁছার আগেই একটি গেটে থার্মাল স্ক্যানারে সব যাত্রীর তাপমাত্রা নির্ণয় করা হচ্ছে। সেখানে একজন ডাক্তারের সার্বক্ষণিক উপস্থিতিতে যাত্রীদের তাপমাত্রা রেকর্ড করার পর ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট এন্ট্রি করার সময় একটি কার্ড পূরণ করার জন্য দেয়া হয়। ওই কার্ডে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয় যাত্রীকে। সেটা ডাটা এন্ট্রি করার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়। ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, বিশ্বের অনেক দেশেই জিকা ছড়ালেও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সিঙ্গাপুর। সেজন্য সিঙ্গাপুর থেকে আগত প্রত্যেকটি ফ্লাইটের যাত্রীদের ওপর বেশি সতর্কতা নেয়া হচ্ছে। কেননা জিকা ভাইরাসের আতঙ্ক চরমাকার ধারণ করেছে সিঙ্গাপুরে। সেখানকার মোট ১১৫ জন জিকার সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে। যাদের একটা বড় অংশই বিদেশী। এই বিদেশীদের মধ্যে সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী ১৩ জন ভারতীয় রয়েছেন। ওই ভারতীয়রা ছাড়া জিকা ভাইরাস মিলেছে ৬ জন বাংলাদেশী ও ২১ জন চিনা নাগরিকের দেহে। যে ১৩ জন ভারতীয়ের দেহে জিকা ভাইরাস মিলেছে, তারা প্রত্যেকেই কোন না কোন নির্মাণ ক্ষেত্রে কাজ করছিলেন। সেজন্য সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে আগত যাত্রীদের বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। বিশেষ করে কোন ধরনের জ্বর থাকলেই তাকে আলাদাভাবে ডাক্তার দিয়ে ভালভাবে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। জানা যায়, জিকা সংক্রান্ত কার্ড পূরণ করার পর সেগুলো পাঠিয়ে দেযা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে। এতে কোন ধরনের সন্দেহজনক তথ্য পাওয়া গেলে সেটা পাঠিয়ে দেয়া হবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। এ বিষয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য পরিদর্শক প্রণয় সরকার জানান, বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার হাজার যাত্রী চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণের কাজে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে তিন থেকে চার শতাধিক থাকছে বিদেশী যাত্রী। জিকা ভাইরাস আক্রান্ত নারীদের কেউ যাতে কোনভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারেন এজন্য তারা সতর্ক রয়েছেন। ভারত হয়ে যেসব বিদেশী গর্ভবতী নারীরা আসছেন বাংলাদেশে ঢোকার আগ মুহূর্তে তাদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়সহ কয়েকটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এজন্য ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে। এতে সহজে এ ভাইরাস শনাক্ত করা যাবে। সিঙ্গাপুরে আরও ৯ বাংলাদেশী জিকায় আক্রান্ত ॥ বিডিনিউজ জানায়, সিঙ্গাপুরে কর্মরত ১০ বাংলাদেশী জিকায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবরের প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে জিকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, আক্রান্তদের সবার ক্ষেত্রেই রোগের লক্ষণ দেখা গেছে মৃদু মাত্রায়। তারা হয় ইতোমধ্যে সেরে উঠেছেন, নয়তো সেরে উঠছেন। আক্রান্তরা দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
×