ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাস্টারমাইন্ড মেজর জিয়া মারজান ও সোহেলকে খুঁজছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মাস্টারমাইন্ড মেজর জিয়া মারজান ও সোহেলকে খুঁজছে পুলিশ

শংকর কুমার দে ॥ সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে মিরপুরের রূপনগরে নিহত নব্য জেএমবির প্রশিক্ষক মেজর জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান আরেক চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়ার। নব্য জেএমবির প্রধান তামিম আহমেদ চৌধুরী ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর জাহিদ পৃথক অভিযানে নিহত হওয়ার পর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ড এই মেজর জিয়া ও নূরুল ইসলাম মারজান, জেএমবির প্রধান সোহেল মাহফুজকে খুঁজছে পুলিশ। এসব পলাতক শীর্ষ জঙ্গী টার্গেট কিলিং, বড় ধরনের জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা করে আত্মগোপনে আছে বলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, মিরপুরের রূপনগরে নিহত মেজর জাহিদুল ইসলাম জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সেনা বাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেয় স্বেচ্ছায়। আর আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া জঙ্গী গোষ্ঠীতে প্রবেশ করে সেনা বাহিনীতে অভ্যুত্থান করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে চাকরিচ্যুত হয়ে পলাতক হয়। নিহত ও পলাতক এই দুই মেজরই সেনা বাহিনীতে চাকরি করার সময়ে পরিচিত হয় এবং দুই জনেই জঙ্গী গোষ্ঠীতে জড়িয়ে পড়ায় তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলা, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের দিনে জঙ্গী হামলা, কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানা, নারায়ণগঞ্জের জঙ্গী আস্তানা গড়া, ব্লগার, প্রকাশক, লেখক, পুরোহিত, ধর্মযাজক, বিদেশী নাগরিক, ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যাকা-ের নেপথ্যে নব্য জেএমবির জঙ্গীদের প্রশিক্ষণদান ও হামলায় উৎসাহিত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে নিহত ও পলাতক দুই মেজরই। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, নব্য জেএমবির প্রধান তামিম আহমেদ চৌধুরী তার সহযোগী দুই জঙ্গীসহ নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত হওয়া ঘটনা এবং এরপর মিরপুরের রূপনগরে পুলিশ অভিযানে মেজর জাহিদুল ইসলাম নিহত হওয়া ও জঙ্গীদের নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে নব্য জেএমবির মেরুদ- ভেঙ্গে গেছে। এখন আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান সেনা বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া ও গুলশানের জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ড নুরুল ইসলাম মারজান ও নব্য জেএমবির প্রধান সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে পুলিশ। তারা দেশের ভেতরেই আত্মগোপন করে আছে এবং গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ড জেএমবির আমির সেই সোহেল মাহফুজ, সেনা বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত আরেক মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া ও নুরুল ইসলাম মারজানের নাম ঘুরে ফিরে বারবারই হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলোর কারিগর হিসেবে নাম আসছে। এর মধ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির আত্মগোপন করা আমীর সোহেল মাহফুজ। এই সোহেল মাহফুজ ২০১০ সালে জেএমবির আমীর মওলানা সাইদুর রহমান গ্রেফতারের সময় সামরিক শাখার প্রধান হয়। মওলানা সাইদুর গ্রেফতারের পর সোহেল মাহফুজ জেএমবি’র আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছেন, গুলশান হামলায় জড়িত সোহেল মাহফুজ নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ। তিনি বোমা প্রস্তুতকারী ছিলেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, গুলশান হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড ও বোমা তৈরি করেছে জেএমবির সোহেল মাহফুজ। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবি আস্তানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় জেএমবির তালহা শেখ, ডালিম শেখ, সাজিদ, সাজিদের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও নাঈমসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে। বোমা বিস্ফোরণের সময় ওই আস্তানায় জেএমবি বোমারু মিজান, সালেহউদ্দিন ও সোহেল মাহফুজ উপস্থিত ছিল। পরে পালিয়ে সোহেল মাহফুজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপরই সোহেল মাহফুজ উত্তরাঞ্চলে জেএমবিকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কাজ করে। দেশের উত্তরাঞ্চলের যেসব পুরোহিত, ধর্মযাজক, ভিন্নমতাবলম্বীকে হত্যা করা হয়েছে তার নেপথ্যের কারিগর সোহেল মাহফুজকেও মনে করা হচ্ছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ডদের মধ্যে তামিম আহমেদ চৌধুরী, মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক ও আবু ইউসুফ বাঙ্গালী প্রধান। এই তিনজনের সঙ্গে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল ইসলাম মারজান। হিযবুত তাহরীর, আনসার আল ইসলাম, দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশ ও হরকাতুল জিহাদসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন থেকে দক্ষ কর্মীদের নব্য জেএমবি নামে একটি ছাতার নিচে একত্রিত করার কাজটি করে আবু ইউসুফ বাঙ্গালী। গুলশান হামলার পেছনে আরও বেশ কয়েকজন জঙ্গী সদস্যের নাম পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এরা হলো আবুল কাশেম, ওয়াসিম আজওয়াদ, জোনায়েদ খান, শরিফুল ইসলাম খালিদ, জাহাঙ্গীর ওরফে মুরাদ, মানিক, রাজিব ওরফে রাজিব গান্ধী, মামুনুর রশিদ রিপন, রিপন ও খালিদ। এদের মধ্যে রিপন ও খালিদ ভারতে আত্মগোপন করেছে। জোনায়েদ খানের সর্বশেষ অবস্থান ছিল কল্যাণপুরের আস্তানায়। ঢাকা মহানগর মিডিয়া সেন্টারে বিভিন্ন সময়ের সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের উদেশে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন নূরুল ইসলাম মারজান ও মেজর জিয়া কি গোয়েন্দা জালে আটকা ? মেজর জাহিদের স্ত্রী সন্তানরা কোথায় ॥ মিরপুর রূপনগরে নিহত মেজর জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার (শীলা) ও তার দুই শিশু সন্তান এখন কোথায় ? পুলিশ মেজর জাহিদের শশুর অর্থাৎ জেবুন্নাহার শীলার বাবা মোঃ মমিনুল হক ও শাশুড়ি জোহরা আক্তারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তারাও তাদের মেয়ে ও নাতি সম্পর্কে কোন খোঁজ খবর দিতে পারেননি বলে জানা গেছে। মিরপুরে রূপনগরে নিহত হওয়ার আগে জাহিদুল জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করে তার স্ত্রীকে নিয়ে নব্য জেএমবির অন্য অনেকের মতো ‘হিজরত’ করার কথা বলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ হন।
×