ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তার মাদ্রাসায় অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিত শিবির সদস্যরাও

রোহিঙ্গাদের জন্য আনা টাকায় বিত্তশালী মীর কাশেম

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রোহিঙ্গাদের জন্য আনা টাকায় বিত্তশালী মীর কাশেম

বাংলানিউজ ॥ মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জনগণকে বিচ্ছিন্নতাবাদে উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীন আরাকান রাজ্য গঠনের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত কোটি ডলার দেশে এনেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী। রোহিঙ্গাদের জন্য আনা সেই বিপুল অর্থে বিত্তশালী হয়েছেন মীর কাশেম, অর্থবিত্তে শক্তিশালী করেছেন জামায়াতকেও। আবার সেই বিপুল অর্থ থেকে কিছু অংশ ব্যবহার করে বিচ্ছিন্নতাবাদের নামে রোহিঙ্গা তরুণদের হাতে তুলে দিয়েছে অস্ত্র, দিয়েছে জঙ্গী প্রশিক্ষণ। তবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আনা অর্থের বড় অংশই নিজের তহবিলে রেখে ব্যবসাবাণিজ্য করে স্বাধীন দেশে বিপুল বিত্তবৈভবের অধিকারী হয়েছিলেন এই আলবদর কমান্ডার। ৩ সেপ্টেম্বর রাতে কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে একাত্তরের জল্লাদ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীর জীবনাবসান হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন চট্টগ্রামের কক্সবাজার এবং রাঙ্গামাটি-বান্দরবানের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মীর কাশেম আলীর জঙ্গীবাদী কর্মকাণ্ডের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। পুলিশ সূত্রমতে, কক্সবাজার-বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটিতে মধ্যপ্রাচ্যের অনুদানপ্রাপ্ত রাবেতা আল ইসলাম হাসপাতালে পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের নামে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যদের জঙ্গী প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। প্রত্যেক হাসপাতালের পাশে রাবেতার নামে আসা অনুদানে মীর কাশেম আলী গড়ে তুলেছিলেন কওমি মাদ্রাসা। সেই মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা যুবকদের পাশাপাশি শিবিরের তরুণ সদস্যরাও অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিত। চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোঃ শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত কক্সবাজারের মরিচ্যা, রাঙ্গামাটির লংগদু এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মীর কাশেমের রাবেতা আল ইসলাম ও কওমি মাদ্রাসার কার্যক্রম ছিল। সেখানে প্রশিক্ষণ পাওয়া যুবকরা যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে সহিংস নাশকতায় অংশ নিয়েছিল বলেও আমাদের কাছে তথ্য আছে। তবে এখন আগের সেই অবস্থান নেই। তাদের নেটওয়ার্ক আমরা ভেঙ্গে দিয়েছি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর মধ্যপ্রাচ্যের অর্থায়নে রাঙ্গামাটির লংগদু ও কক্সবাজারের মরিচ্যা এলাকায় দুটি রাবেতা আল ইসলাম হাসপাতাল গড়ে তোলেন মীর কাশেম আলী। দুটি মাদ্রাসার পাশে দুটি বড় কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সূত্রমতে, মীর কাশেম আলীর তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার পাহাড় ও সমুদ্র চরাঞ্চল এলাকায় আরএসও গড়ে তুলে ১০টি মাদ্রাসা-এতিমখানা ও রোহিঙ্গা বস্তি। এসব স্থাপনা তৈরি করতে আরএসও ক্যাডাররা অবৈধ দখলে নেয় অন্তত দু’শ’ একর বন বিভাগের জমি। এর নেপথ্য অর্থ যোগানদাতা মীর কাশেম আলীর রাবেতা এনজিও। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশি ও নব্বইয়ের দশকজুড়ে মীর কাশেম আলী নিজেই কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির গহীন অরণ্যে গিয়ে রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী নামধারী জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করতেন। রাবেতা আল ইসলামের মাধ্যমে পল্লী চিকিৎসক প্রশিক্ষণের আড়ালে তখন হাজার হাজার রোহিঙ্গা তরুণ-যুবককে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে এনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা তরুণ-যুবকদের সামনে স্বাধীন আরাকান রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বলে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি। আর সেগুলো প্রচার করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার অনুদান আনতেন। সেই অনুদানের একটি বড় অংশ যেত নিজের ও জামায়াতের তহবিলে। এভাবেই ধনকুবেরে পরিণত হন মীর কাশেম।
×