ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংখ্যা ৩২ থেকে ১২তে নেমে এসেছে

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে ঋণ দানে বিরোধিতাকারীরা নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে ঋণ দানে বিরোধিতাকারীরা নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে ঋণ প্রদানে বিরোধিতাকারীরা অনেকেই নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ব্যাংক ট্রাক নামের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে বিশ্বের ১৭৭টি প্রতিষ্ঠান রামপাল প্রকল্পে ঋণ না দিতে ভারতের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট (এক্সিম) ব্যাংককে আহ্বান জানায়। এদের মধ্যে বাংলাদেশের ৩২টি প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু এখন এ সংখ্যা ১২টিতে নেমে এসেছে। বাকি ২০টি ইতোমধ্যে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অনেকেই এ তালিকায় তার প্রতিষ্ঠানের নাম থাকার বিষয়টি শুনে আশ্চর্য হচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা না করেই প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি বিশেষ রামপাল প্রকল্পে ঋণ না প্রদানের আহ্বানের আন্তর্জাতিক এ ডাকে সাড়া দিয়েছেন। সঙ্গতকারণে এ সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তির হলেও প্রতিষ্ঠানের নয় বলে প্রতিষ্ঠানের কর্তারা দাবি করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামপাল বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই ১৭৭টি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ওই সংবাদ সম্মেলনের পরই এ আহ্বান থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৭৭ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ১৬৪ নম্বরে নাম এসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখন আর এ নামটি তালিকায় নেই। কেন বা কিভাবে নামটি ব্যাংক ট্রাক-এর তালিকায় গেল, তা জানেও না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ জাতীয় কোন কিছুতে স্বাক্ষর করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক অথবা ছাত্র বিষয়টি করতে পারে অথবা একেবারে বিষয়টি ভুয়া হতে পারে।’ ১৭৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) নাম ছিল। এর মধ্যে একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড (৭১ টেলিভিশন), দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশনা কিশোর আলোর নাম ছিল। কিন্তু এখন এ নামগুলো আর তালিকায় দেখা যাচ্ছে না। এর আগে ১৭৭ সমর্থকের এ তালিকায় ফরহাদ মাজহারের প্রতিষ্ঠান উবিনীগের নাম থাকলেও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, রামপালে ঋণ না দেয়ার জন্য যে সমর্থন জানানো হয়েছে, তা তারা জানতেন না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে একেবারে না জানলে নামগুলো প্রত্যাহার হলো কী করে। নামগুলো যারা দিয়েছে তারাই প্রত্যাহার করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ২৬ মে রামপালে ঋণ না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্যাংক ট্রাক-এর পরিচালক জোহান ফ্রিজনস এক্সিম ব্যাংক ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দেন। ব্যাংক ট্রাক বিশ্বের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে ব্যাংকের বিনিয়োগ পর্যালোচনা করে। এখন ছোট হয়ে আসা তালিকায় ১৪৬টি প্রতিষ্ঠানকে দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠান অরণ্যর নাম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি পোশাক প্রসাধনীর বাইরে গৃহসজ্জার সামগ্রী বই ও সিডি বিক্রি করে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য লুভা নাহিদ চৌধুরীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি শুরুতে বিষয়টি জানেন না উল্লেখ করে খোঁজ নিয়ে নিজে থেকে ফোন করে বলেন, আমাদের বিষয়টি জানা ছিল না। অরণ্যর পক্ষে কেউ একজন এ সমর্থন জনিয়েছে উল্লেখ করে বলেন, অরণ্যর এ অবস্থান নয়। তাকে আমরা নাম প্রত্যাহার করতে বলেছি। প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এককভাবে এ ইস্যুতে নাম দেয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। তবে কে অরণ্যর পক্ষে এক্সিম ব্যাংকে আহ্বান জানিয়েছে তা জানাননি তিনি। এখনও তালিকায় নাম থাকা আরেকটি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (সিবিএস) অধ্যায়ন কেন্দ্র। কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন মোস্তফা জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না উল্লেখ করে বলেন, আমি একজন চিত্রশিল্পী এবং সম্পাদক। আমার দুটি বাচ্চা তাদের একটিকে নিয়ে এখন হাসপাতালে যাচ্ছি। আমি খুব ব্যস্ত থাকায় খুব একটা ওখানে যাওয়া হয় না। বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল সেক্রেটারি জানেন বলে জানান তিনি। সিবিএসের ওয়েব পাতায় দেখা যায়, মোস্তফা জামান একাধারে চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, লেখক এবং সম্পাদক। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল সেক্রেটারি অরূপ রাহি ফোন করে জানান, হ্যাঁ, তারা এ গ্লোবাল কলে সাড়া দিয়েছেন। রামপালে যেন এক্সিম ব্যাংক ঋণ না দেয় সে বিষয়ে তারা অনুরোধ জানিয়েছেন। তাহলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপার্সনই বিষয়টা জানেন না কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবকিছু তাকে সবসময় জানানো হয় না। আমাকে নিজস্ব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এসব কাজ করার। পরে আমরা তাকে বিষয়টি জানাই। সিবিএসের ওয়েব পাতার তথ্য অনুযায়ী তিনি একজন কবি, লেখক, গায়ক, মানবাধিকার এবং সমাজকর্মী। তিনি জানান, বিষয়টি অনেক পুরাতন গত মে মাসের। তবে সম্প্রতি বিদ্যুত কেন্দ্রটির অর্থায়নকে কেন্দ্র করে আলোচনায় এসেছে। এখন এ তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের অনেকের সম্পর্কে কোন তথ্য জানা যায়নি। সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইলেও কেউ খোঁজ দিতে পারেননি। এখন তালিকায় অন্যদের মধ্যে রয়েছেÑ বটতলা এ পারফরমেন্স স্পেস, ঠোঁটকাটা নারী লেখিকা সংঘ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সিটিজেন জার্নালিজম, সাজেদা ফাউন্ডেশন, পিআইই ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন, গ্রীন ম্যাগাজিন, প্রগ্রেসিভ প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, ইয়ং বাংলা সাইকেল এবং তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ বিদ্যুত বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানিয়ে খোঁজ নিতে বলেছি। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু এখনও জানায়নি। ব্যাংক ট্রাক-এর ওয়েব পাতায় গিয়ে দেখা গেছে, এখানে গিয়ে যে কেউ তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মেইল নম্বর ও পরিচয় দিয়ে এ আহ্বানে সাড়া দিতে পারে। তবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক এ বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি সূত্র জানায়, ঋণের অর্থ ছাড়ের জন্য তারা বিদ্যুত বিভাগের বাংলাদেশের ঋণ শোধের নিশ্চয়তা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ নিশ্চয়তা দিলে রামপালের নির্মাণ কাজ শুরু করবে কোম্পানিটি।
×