ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাশিল্পীদের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যাত্রাশিল্পীদের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমরা মুখেই বলি যাত্রা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য অধ্যায়। কিন্তু কার্যত এর কোন ফল আমরা দেখি না। সম্প্রতি ‘জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’ নামে যে কার্যক্রম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় হাতে নিয়েছে। এর আওতায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাটক, নৃত্য, কবিতা, চিত্রাঙ্কন, কর্মশালা সবই চলবে কিন্তু তাতে যাত্রার কোন স্থান নেই’-বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি প্রবীণ যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সোমবার সকালে যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মিলন কান্তি দে আরও বলেন, আমরা বিস্মিত হই, যে যাত্রাপালা স্বদেশী যাত্রার ডাক দিয়েছিল, সাম্য মৈত্রী মানবতার বাণী নিযে যে সংস্কৃতি গ্রাম-বাংলার মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল, সেই যাত্রার সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বার বার কথা দিয়েও বিগত তিন বছরেও সংস্কৃতিমন্ত্রী যাত্রাশিল্পীদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় দিতে পারেননি। অশ্লীলতার অভিযোগ টেনে যাত্রাশিল্পের অগ্রযাত্রা কিংবা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ব্যাহত করা হলে একটি দেশজ সংস্কৃতির প্রতি সুবিচার করা হবে না। কারণ, অশ্লীলতার জন্য যাত্রাশিল্পীরা দায়ী নন। এদেশের চলচ্চিত্রও তো অশ্লীলতা আছে। সে কারণে চলচ্চিত্র কী বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে? বরং, প্রতি বছর নতুন নতুন চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান দেয়া হচ্ছে। শিল্পের অন্য মাধ্যমের মতো যাত্রাশিল্পেও মধুসূদন, রবীন্দ্র-নজরুল ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমরা কাজ করেছি এবং এখনও করছি। আমরা দায়বদ্ধতার পরিচয় দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের জন্য কোন অনুদান নেই। যাত্রার নীতিমালা প্রসঙ্গে প্রবীণ এই যাত্রাভিনেতা বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি যাত্রানীতি-মালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। বর্তমান সরকারের আমলে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট তা গেজেটভুক্ত হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে সেই নীতিমালার প্রয়োগ যথাযথভাবে হচ্ছে না। কোন কোন জেলা প্রশাসক এটাকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। এদিকে নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এ পর্যন্ত ৮৮টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন করেছে। কিন্তু নিবন্ধিত দলগুলো অনেক অনুমতি সমস্যার কারণে গত মৌসুমে যাত্রাপ্রদর্শনী করতে পারেনি। যাত্রাপালায় বিন্দুমাত্র অশ্লীলতা হয় না বলেও দৃঢ়কণ্ঠে বললেন মিলনকান্তি দে। ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যাত্রাপালায় কোন প্রকার অশ্লীলতা হয় না। তবে যাত্রা শুরুর আগে কোন কোন এলাকার আয়োজক কমিটি যাত্রামঞ্চে অশালীন নৃত্যগীতের আয়োজন করে থাকেন। এই নৃত্যের জন্য বাধ্য করেন স্থানীয় রাজনীতিক গডফাদার ও প্রভাবশালীরা। কিন্তু এই অশ্লীলতা বন্ধের জন্য যাত্রা বন্ধ হয়ে যাবে? এ যেন মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলারই নামান্তর। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় আগামী অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে দেশের রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও যাত্রাশিল্পীদের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় কনভেনশনের আয়োজন করবে বাংলাদেশ যাত্রা উন্নয়ন পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন কবি ও যাত্রাপালাকার ড. আমিনুর রহমান সুলতান। তিনি বলেন, ‘শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যান বিষয়ের মতো যাত্রা নিয়ে তেমন লেখালেখি হয় না। হয় না গবেষণাও। যাত্রাশিল্প পিছিয়ে থাকার ক্ষেত্রে এটা একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার, যুগ্ম সম্পাদক স্বপন পা-ে, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এম আলীম, সাংগঠনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক প্রমুখ।
×