ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সামরিক চুক্তির পথে ইসলামাবাদ ও বেজিং

পাক-চীন করিডর॥ শির কাছে মোদির উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পাক-চীন করিডর॥ শির কাছে মোদির উদ্বেগ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে রবিবার হাংঝুতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (সিপিইসি) নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা শিকে জানান। কারণ শির গুরুত্বপূর্ণ ৪ হাজার ৬শ’ কোটি ডলার ব্যয়সাপেক্ষ ঐ প্রকল্পটি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত ৩৫ মিনিটের ঐ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মোদি পাকিস্তান থেকে চালানো সন্ত্রাসী তৎপরতার বিপদ এবং ভারতের নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ারস গ্রুপের (এনএসসি) সদস্যপদের বিষয়টিও শির কাছে উত্থাপন করেন। বেজিং ভারতের ঐ সদস্যপদের বিরোধিতা করছে। এ দিকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক চুক্তির পর পাকিস্তান চীনের সঙ্গে এক মেয়াদী প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনার খবর প্রকাশ করেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের। নয়াদিল্লীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, উভয় দেশকেই জাতিগত বিষয় হিসেবে একে অপরের সামরিক স্বার্থের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। তিনি শির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মোদির গুরুত্ব দেয়া মূল বিষয়গুলো বর্ণনা করছিলেন। মোদি বলেন, স্থিতিশীল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিশ্চিত করতে আমাদের পরস্পরের আশা-আকাক্সক্ষা, উদ্বেগ ও সামরিক স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। স্বরূপ বলেন, ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে আমাদের নেতিবাচক ধারণার উদ্ভব প্রতিরোধ করাও দরকার। এক্ষেত্রে উভয় দেশের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বড় ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান, মোদিও জোর দিয়ে বলেন, আমরা সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সফল হয়েছি। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘সিনহুয়া’ জানায়, শি মোদিকে বলেন, চীন তাদের কষ্টার্জিত সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং তাদের সহযোগিতা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। চীন ও ভারতের উচিত বড় বড় উদ্বেগজনক ইস্যুতে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান হওা এবং গঠনমূলক উপায়ে তাদের মতপার্থক্য নিরসন করা। শি বলেন, উভয় পক্ষ তাদের সম্পর্ক সুষ্ঠু, স্থিতিশীল ও দ্রুত উন্নত করেছে এবং প্রতিবেশী ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তাদের উচিত সর্বোচ্চ পর্যায়ে মতবিনিময় করে যাওয়া। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় কোন রাজনৈতিক বিবেচনাকেই গ্রাহ্য করা উচিত নয়। একে জাতিসংঘে সন্ত্রাসী হিসেবে জইশ-ই-মোহাম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারের নাম তালিকাভুক্ত করার প্রতি চীনের বিরোধিতার সমালোচনা বলে দেখা হয়। কয়েকটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্রমশ অবনত হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট শির মধ্যে ঐ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। এসব ইস্যুর মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসবাদ ও চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর। এদিকে, পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা চীনের সঙ্গে এক দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব অনুমোদন করে। রবিবার ইসলামাবাদ থেকে প্রকাশিত এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকায় একথা বলা হয়। এতে বলা হয়, লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সভাপতিত্বে ১৫ জুলাই লাহোরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ঐ অনুমোদন দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির এক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় এক সপ্তাহ পর চীন-পাকিস্তান চুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কিত খবরটি প্রকাশিত হলো। খবরে বলা হয়, বহুমুখী ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর ঐ চুক্তির এক খসড়া নিয়ে আলোচনা শুরু করার বিষয়ে এক সংক্ষিপ্তসার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিবেচনা করা হয়। মন্ত্রিসভা প্রস্তাবিত চুক্তিটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর এটি অনুমোদন করে। মন্ত্রিসভাকে জানানো হয় যে, খসড়া চুক্তিটি একে অপরের ভৌগোলিক অখ-তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক কল্যাণের জন্য সহযোগিতা, অস্ত্র ও প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সামরিক সুবিধার জন্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি তার বেজিং সফরকালে চীনের সঙ্গে এক প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চীনা নেতৃত্ব এরূপ কোন পদক্ষেপের বিরুদ্ধেই পরামর্শ দেয়। এতে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লীর সঙ্গে ইসলামাবদ ও বেজিংয়ের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে চীনা নেতৃত্বের আশঙ্কা ছিল।
×