ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বুদ্ধির বলিহারি!

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বুদ্ধির বলিহারি!

গ্রেফতার করা হয়েছে একটি বটগাছকে! খবরটি মিথ্যা নয়, শতভাগ সত্যি! যিনি খবরটি পড়েছেন বা ছবিটি দেছেন ওই বটগাছটির, তার চক্ষু সিঃসন্দেহে হয়েছে চড়কগাছ! কিন্তু একি ব্যাপার! গাছ গ্রেফতার! তাও আবার বটবৃক্ষ! গ্রেফতার হয় মানুষ। চুরি-ডাকাতি, খুন বা অন্যান্য অপরাধে। মানুষ ছাড়াও গ্রেফতার হয় অবলা প্রাণী- ছাগল, গরু, ভেড়া! কারও গাছ মুড়িয়ে খেলে, জমিতে ধান খেলে বা কারও ফসলের ক্ষেত নষ্ট করলে তাদের রাখা হয় খোঁয়াড়-হাজতে। কিন্তু গাছ কি অপরাধ করল সে তো কোন ডাকাতি করেনি বা কারও পাকা ধানে মই দেয়নি তাহলে তার অপরাধটা কী? খবরে অবশ্য জানা গেছে তার অপরাধের কথা। সে অপরাধ আবার ছোটখাটো নয়- এক সেনা কর্তার সঙ্গে গাছটি করেছে বেয়াদবি। সেই অভিযোগ খোদ সেই অফিসারের। তিনি আসছিলেন গাছটির পাশ দিয়ে একটু চোঁ চোঁ টেনে একটু বেহেড অবস্থা ছিল তার- সেই অবস্থায় দেখতে পেলেন গাছটি তার সঙ্গে সঙ্গে আসছে, পিছু নিয়েছে। কী বেয়াদবি! সঙ্গে সঙ্গে হুকুম লাগালেন কে আছে, ‘ওকে গ্রেফতার কর’! ছুটে এলো সান্ত্রী-সেপাই। গ্রেফতার করা হলো গাছটিকে। কোমরে দড়ি পরানোর মতো করে বাঁধা হলো গাছটিকে। থাক ব্যাটা এখানে আর যাবি কোথায়। ঘটনাটি ঘটেছে ১১৪ বছর আগে লান্ডি কোটালের ক্যান্টনমেন্টে। ঘটিয়েছেন একজন বীর ইংরেজ পুঙ্গব! ঘটনাটি অবাক করার মতো। কিন্তু আরও অবাক করার বিষয় হচ্ছে গাছটি সেই যে গ্রেফতার হয়েছিল আজও সে অবস্থায়ই রয়েছে। এখন সে শিকলে বাঁধা সেজে বন্দী সে কথা সেখানে লেখাও আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রবীণ এই বৃক্ষটি আজও রয়েছে মুক্তির প্রতীক্ষায়! কিন্তু কে তাকে মুক্তি দেবে! বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু জানিয়ে গেছেন- বৃক্ষেরাও প্রাণবন্ত। বিজ্ঞানী মহলে তার অকাট্য প্রমাণও মিলেছে। কিন্তু যদি বৃক্ষেরা কথা বলতে পারত তাহলে ওই বটগাছটি নিঃসন্দেহে দাবি করত ‘দাও ফিরিয়ে আমার ১১৪টি বছর’! কিন্তু তা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। যখন সে বন্দী হয়েছিল তখন উপমহাদেশ ছিল এক। তখন ছিল ফিরিঙ্গি শাসন। ফিরিঙ্গি সেনা কর্মকর্তা জেমস স্কোইড ১৮৯৮ সালে ঘটিয়েছিলেন এই ঘটনা। তার পর থেকে ইতিহাসের চাকা এগিয়ে গেছে অনেকখানি। উপমহাদেশ ভাগ হয়েছে। লান্ডি কোটাল পড়েছে পাকিস্তানে। ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগের সময় যেমন বেচারা গাছটি মুক্তি পাইনি তেমনি পাকিস্তানের কর্তারা তাকে করেনি মুক্ত। শুধু ওই গাছটি বা কেন পাকিস্তানের দীর্ঘ ইতিহাসে মুক্ত চিন্তা, সুস্থ চিন্তা, স্বাভাবিক চিন্তা মুক্ত ছিল কবে! তাদের ইতিহাস শুধু আটক করার, বন্দী করার, শিকল দিয়ে বাঁধার। স্বাভাবিকতার বিরুদ্ধে তারা। তাদের নীতি যে কী তাতে আমরা হাড়ে হাড়ে এক সময় টের পেয়েছি। সুতরাং সে প্রসঙ্গে আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা মুক্ত বুদ্ধির যুগ, মুক্ত চেতনার যুগ, বেহেড মাতাল সেই ফিরিঙ্গি অফিসার গাছটিকে যে শাস্তি দিয়ে গেছেন তাতে তার বুদ্ধির বলিহারি যেতেই হয়! কিন্তু আজও লান্ডি কোটালের গাছটির দুরবস্থার দিকে সে দেশের কোন কর্তা বা কোটালের নজর যে পড়েনি সেটাও কম আশ্চর্যের নয়!
×