ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দীপন হত্যার হোতা আনসারুল্লাহর সবুর আটক, রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দীপন হত্যার হোতা আনসারুল্লাহর সবুর আটক,  রিমান্ডে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রকাশক দীপন হত্যা ও আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল হত্যাচেষ্টা মাস্টারমাইন্ড বাংলা টিমের আনসারুল্লাহ সদস্য আবদুস সবুর ওরফে সামাদ, ওরফে সুজন, ওরফে রাজু ওরফে সাদকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ দিনের হেফাজতে পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এই সবুরকে দীপন হত্যা মামলায় গ্রেফতারের জন্য ২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। টুটুল হত্যাচেষ্টায় জড়িত আনাসারুল্লাহ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া, ঘটনাস্থল রেকি এবং হামলা পরিকল্পনা তৈরি করা ছাড়াও ওই ঘটনার সার্বিক দায়িত্বে ছিল আটক সবুর। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ঢালুয়া ইউনিয়নের ইদ্রিস পাটোয়ারির ছেলে সবুর ওরফে সামাদ, ওরফে সুজন, ওরফে রাজু ওরফে সাদ। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সবুরকে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকা-ের ও ‘অন্যতম’ হোতা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শনিবার সকালে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন থেকে সবুরকে গ্রেফতার করে বলে রবিবার পুলিশের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। গ্রেফতারের পর তাকে আদালতে হাজির করে প্রকাশনা সংস্থা ‘শুদ্ধস্বরের’ কর্ণধার টুটুলকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোঃ বাহাউদ্দিন ফারুকী। ঢাকার ৪ নম্বর অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম রবিবার পুলিশের রিমান্ড আবেদন শুনে এই ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেন। শুনানি শেষে হাকিম ছয় দিনের হেফাজতে নিয়ে সবুরকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বলে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই নিজামউদ্দিন ফকির জানান। আদালতে সবুরের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না এবং জামিন আবেদনও হয়নি বলে জানা গেছে। কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আবদুস সবুর ওরফে আবদুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সাদ আনসারুল্ল্াহ বাংলা টিমের সদস্য ও পুরস্কার ঘোষিত আসামি। এর আগে তাঁর ছবি প্রকাশ করে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সবুর এবিটির সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ করত। জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো তরুণদের নিশানা করে এবং অপেক্ষাকৃত কম বুদ্ধিসম্পন্নদের হত্যাকা-ে ব্যবহার করে। সবুর ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিত রায়? হত্যাকা-, জাগৃতি প্রকাশনীর দীপন হত্যাকা- ও শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর টুটুল হত্যার পরিকল্পনা করা থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব পর্যায়েই তার সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। সবুরের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি যাত্রাবাড়ীর ফরিদাবাদ মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। গত বছর ৩১ অক্টোবর লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে টুটুল এবং তার সঙ্গে থাকা ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকে কুপিয়ে জখম করে হামলাকারীরা। একই দিনে হামলা হয় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে। লালমাটিয়ার ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শাহবাগে জাগৃতির কার্যালয়ে এর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। এ দুটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে লেখক অভিজিত রায়ের কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে, যিনি নিজেও গত বছর ফেব্রুয়ারিতে একইভাবে খুন হন। হামলার একদিন পর মোহাম্মদপুর থানায় টুটুলকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করে তার পরিবার। সে সময় থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে ঘিরে। লেখক, প্রকাশক হত্যায় জড়িত ছয়জনকে চিহ্নিত করে তাদের ধরিয়ে দিতে গত মে মাসে ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ, যাদের মধ্যে সবুরও একজন। সবুরের নামে পুরস্কারের অংক ছিল ২ লাখ টাকা। গোয়েন্দা সূত্র জানান, গত বছরের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন শুদ্ধস্বরের টুটুলসহ তিনজনের ওপর হামলা চালায় জঙ্গীরা। দীপন হত্যার মূল আসামিকে গ্রেফতারের দাবি করেছে পুলিশ। তাঁর নাম মইনুল হাসান শামীম। তাঁকে গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় টঙ্গীর চেরাগ আলী মার্কেটের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে দীপনকে হত্যার কথা শামীম স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য। টুটুলকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সুমন পাটোয়ারি নামের সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গত ১৫ জুন বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সুমন পাটোয়ারি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।
×