ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত বিজয়ীরা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত বিজয়ীরা

জাহিদুল আলম জয় ॥ ‘মেয়েরা যা পারছে, ছেলেরা পারছে না। মেয়েরা ১০ গোল দেয়, ছেলেরা ৫ গোল খায়। তবে তার মানে এই নয় যে ছেলেরা পারবে না। তারা ভবিষ্যতে পারবে।’ বাংলাদেশের ফুটবলের বাস্তব এ চিত্র তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক দিক তুলে ধরে খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিন বছর পর এবার জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেয়া হলো। একসঙ্গে ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালের বিজয়ীদের পুরস্কৃৃত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শহীদ শেখ কামাল (মরণোত্তর) ও দেশের ক্রিকেট তথা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানসহ মোট ৩২ ক্রীড়াব্যক্তিত্বকে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১০ ও ২০১১ সালের জন্য ১০ জন করে ২০ জন এবং ২০১২ সালের জন্য ১২ জনকে পুরস্কৃৃত করা হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের ২৫ হাজার টাকার চেক ও স্বর্ণপদক দেয়া হয়। বিজয়ীরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক ও চেক গ্রহণ করেন। মরণোত্তর পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্য ও নিকটজনেরা পুরস্কার নেন। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ। তিনি পদক বিতরণ পর্বও পরিচালনা করেন। দেশের বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের সম্মানিত করতে ১৯৭৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার চালু করা হয়। এ পর্যন্ত মোট ১৮৮ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এ পদক পেয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ ক্রিকেটার। সাকিবের আগে আইসিসি ট্রফি বিজয়ী সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ১৯৯৮ সালে ও দেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ের নায়ক মোহাম্মদ রফিক ২০০৬ সালে এই পুরস্কার পান। অবশ্য সম্মানজনক এই পুরস্কার ১৯৮২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মোট ১৪ বছর বন্ধ ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পুনরায় জাতীয় পুরস্কার প্রদান শুরু করে। এটি জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছে বলে জানান জাহিদ আহসান রাসেল। দেশের স্বাধীনতাত্তোর ক্রীড়াঙ্গণের উজ্জ্বল নক্ষত্র, আবাহনী ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পদক (মরণোত্তর) পেলেন দীর্ঘ চার দশক পর। ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেরিতে হলেও এ স্বীকৃতিকে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল। বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের রূপকার হিসেবে খ্যাত শেখ কামাল জীবদ্দশায় দেশের খেলাধুলার উন্নায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। শেখ কামাল ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ২০১১ সালের পুরস্কার পান। শেখ কামালের পক্ষে তার বন্ধু বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) ও ঢাকা ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ শাহেদ রেজা পুরস্কার গ্রহণ করেন। শহীদ শেখ কামাল একাধারে একজন ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তিনিও নির্মমভাবে শহীদ হন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে শহীদ হওয়ার ৪১ বছর পর ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই শেখ কামাল। তিনি একাধারে ক্রিকেট, বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন এ্যাথলেট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অর্জন, অনুর্ধ ১৬ মহিলা দলের আসাধারণ সাফল্য, বিশেষ অলিম্পিকে প্রতিবন্ধীদের সাফল্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। ক্রিকেটের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার হিসেবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা আত্মপ্রকাশ করেছে। পৃথিবীর সব দেশ রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের এখন হিসেব করে চলে। ইনশাল্লাহ আমরা একদিন বিশ্বকাপ জয় করতে পারব। সাকিব, তামিম, মাশরাফি, মুশফিক, মুস্তাফিজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে বিরাট সম্মান এনে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তি প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যখন টেস্ট ক্রিকেট খেলার স্বীকৃতি পেলাম তখন অনেকেই টিটকারী করেছিল। বলেছিল, বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ম্যানেজ করে পেয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা প্রমাণ করেছে তাদের যোগ্যতাবলেই টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতির জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশে জাতীয় ক্রীড়া দিবস উদযাপনের অনুরোধ জানান শেখ হাসিনাকে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, জাতীসংঘ ৬ এপ্রিল স্পোর্টস ডে পালন করে। বাংলাদেশেও এ দিনে স্পোর্টস ডে পালন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ফুটবলকে জাগিয়ে তোলার জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট। মেয়েদের সাফল্য এরই ফসল। সরকার সারাদেশে ৪৯০ উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানান তিনি। প্রথম পর্যায়ে ১৩১ উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া পূর্বাচলে আধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের যুব সমাজকে সঠিক পথে রাখতে, জঙ্গীবাদ থেকে মুক্ত করতে খেলাধুলার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। ক্রীড়াক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিজয়ীরা। ক্রিকেটে ২০১১ সালের সেরা হওয়া সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, খুব ভাল লাগছে। প্রথমবার এ পুরস্কার পেলাম। এটা অনেক গৌরবের। তবে পুরস্কারটি নিয়মিত দিলে ভাল হয়। একসঙ্গে অনেক পুরস্কার দিলে আবেদন কমে যায়। সাবেক জাতীয় ফুটবলার মোঃ মহসিন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ভাল লাগছে। দেরিতে হলেও এ পুরস্কার পেয়ে আমি খুশি। তবে আয়োজনটি নিয়মিত করতে পারলে ভাল হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ঘটেছিল ক্রীড়াঙ্গনের রথী-মহারথীদের তারার মেলা। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একঝাঁক তারকা এসেছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে ওসমানী মিলনায়তন চত্বরে ফুটবল নিয়ে কারু কাজ করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তাসকিন আহমেদ, এনামুল হক বিজয় প্রমুখ।
×