ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বরগুনায় সন্ত্রাসীর ভয়ে সাংবাদিক পরিবার গ্রামছাড়া

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বরগুনায় সন্ত্রাসীর ভয়ে সাংবাদিক পরিবার গ্রামছাড়া

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের বাজারখালী গ্রামে ইদি আমিন ও তার অপর তিন ভাইয়ের সন্ত্রাসী তা-ব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। তাদের অব্যাহত সশস্ত্র তা-বে দু’ভাই দৈনিক মানবকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার সিদ্দিকুর রহমান ও দৈনিক জনকণ্ঠের পটুয়াখালীর নিজস্ব সংবাদদাতা মোখলেছুর রহমান বাবা-মাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে এলাকা ছাড়া হতে বাধ্য হয়েছেন। এর আগে সাংবাদিক সহোদরদের বাজারখালী গ্রামের বসতঘরে ইদি আমিন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। পানের বরজ লবণ দিয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে। বাড়ির গাছপালা লুটতরাজ করে বিক্রি করে দিচ্ছে। জমি চাষে বাধা দিচ্ছে। আর এসব ঘটনার থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু এরপরেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না। কিছুতেই থামছে না সন্ত্রাসী তা-ব। উপরন্তু পুলিশের সামনে সাংবাদিক সহোদরদের বাবার মাথা কেটে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। এমন ভয়াবহ সন্ত্রাসী তা-বে অসহায় হয়ে পড়েছেন সাংবাদিক পরিবার। প্রতিনিয়ত তারা ভুগছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। সরেজমিন অনুসন্ধান ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগে বলা হয়েছে, সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান ও মোখলেছুর রহমানের বাবা মোঃ আঃ বারী হাওলাদার সন্তানদের পড়াশোনার সুবিধার্থে প্রায় ৪০ বছর আগে বাজারখালী গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সপরিবারে পটুয়াখালী জেলা শহরে চলে আসেন। আঃ বারী হাওলাদারের অনুপস্থিতির সুযোগে তার মৃত বড় ভাই আঃ রশিদ হাওলাদারের বেকার চার ছেলে ইদি আমিন, ইয়ামিন, আল আমিন ও ইমরান সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে গোটা বাড়িঘর মগের মুল্লুকে পরিণত করে। অপর তিন ভাই ছাড়াও এলাকার যত মাদকাসক্ত, দাগী মাস্তান, ছিচকে চোরসহ সমাজবিরোধী রয়েছে, তারা সকলেই ইদি আমিনের নেতৃত্বাধীন এ সন্ত্রাসী বাহিনীতে রয়েছে। বাজারখালী গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এ বাহিনীর হাতে জিম্মি। সাংবাদিক পরিবার যাতে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে না পারে এবং বাড়িঘর ও যাবতীয় সহায়-সম্পদ দখলের উদ্দেশ্যে ইদি আমিনের (৩০) নেতৃত্বাধীন এ বাহিনী এমন কোন অপকর্ম নেই, যা তারা করেনি। এরই অংশ হিসেবে ইদি আমিন বাহিনী চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি সাংবাদিক বাজারখালী গ্রামের অন্তত ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৭৫ বছরের পুরনো পৈত্রিক বসতঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় বরগুনা জেলার আমতলী থানায় ১৩ জানুয়ারি সাংবাদিকদ্বয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বাড়ি ভস্মীভূতের খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ আমতলী থানার পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। ওই মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে ওই মামলাটি তুলে নিতে এবং যাতে কেউ সাক্ষ্য না দেয় এ জন্য ইদি আমিন বাহিনী বাদী ও সাক্ষীদের একের পর এক হুমকি দিচ্ছে। একপর্যায়ে সাংবাদিকদ্বয়ের পৈত্রিক জমিতে ধান চাষে বাধা দেয় তারা। এ ঘটনাতেও গত ২৮ জুন আমতলী থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। আমতলী থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ রফিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পান এবং জমি চাষে বাধা না দেয়ার জন্য আসামিদের নির্দেশ দেন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা ওই নির্দেশের তোয়াক্কা না করে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ইদি আমিন সাংবাদিক পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা পরিশোধ না করায় গত ২৬ জুলাই ইদি আমিন বাহিনী পানের বরজের শ্রমিকদের মারধর করে এবং বরজের ব্যাপক ক্ষতি করে। এ ঘটনার পরে আমতলী থানায় আবারও অভিযোগ দেয়া হয়। আমতলী পুলিশ এ ঘটনায় তদন্তে গেলে সন্ত্রাসী বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার ইয়ামিন সবার উপস্থিতিতে আবদুল বারী হাওলাদারের মাথা কেটে ওসির টেবিলে রেখে আসার হুমকি দেয়। পুলিশ বাধ্য হয়ে ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসী ইয়ামিনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে আমতলী থানায় ২৯ জুলাই একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলার পর সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদী ও সাক্ষীদের অব্যাহত হুমকি দিচ্ছে। আঃ বারী হাওলাদার অভিযোগ করেন, প্রকৃতপক্ষে তার সঙ্গে ইদি আমিনদের জমি-জমা নিয়ে কোন ঝামেলা বা বিরোধ নেই। মূলত পৈত্রিক ভিটেমাটি থেকে পরিবারসহ তাকে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে একের পর এক হয়রানি করা হচ্ছে। বর্তমানে তিনি এবং তার সন্তানরা কেউ বাজারখালী গ্রামে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। এলাকা ছাড়া রয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসীদের নেপথ্যে একটি প্রভাবশালী মহল ইন্ধন দিচ্ছে। যে কারণে সন্ত্রাসীরা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এ বিষয়ে ইদি আমিনের বক্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
×