ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীর্ষ বদর নেতার ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

শীর্ষ বদর নেতার ফাঁসি

মানবতাবিরোধী অপরাধে শীর্ষ বদর নেতা মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। শনিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রশিতে ঝুলিয়ে এই রায় কার্যকর করা হয়। একাত্তরে চট্টগ্রামে সংঘটিত ঘৃণ্য ও পৈশাচিক নানা অপকর্মের খলনায়ক এই কাশেম আলী। তার ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে একাত্তরের অন্ধকার যুগের একটি বড় অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো। প্রচার আছে ফাঁসি ঠেকাতে দেশে-বিদেশে লবিস্ট নিয়োগসহ নানা মহলকে প্রভাবিত করতে ২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয় মীর কাশেমের পক্ষ থেকে। এই রায় প্রমাণ করেছে অপরাধ কখনও তামাদি হয় না। অপরাধীকে তার কৃতকর্মের শাস্তি পেতে হয়। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার মীর কাশেমের ফাঁসি বহাল রেখে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। রাষ্ট্রপতির কাছে সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা না করায় তার মৃত্যুদ- কার্যকর করতে কোন বাধা ছিল না। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহায়ক হিসেবে চট্টগ্রামে হত্যা, লুটপাটসহ নারকীয় বিভিন্ন কর্মকা-ে জড়িত ছিল এই আলবদর নেতা। যেখানেই মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী বাঙালী, সেখানেই মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হতো মীর কাশেম। এই নরহত্যাকারী ছিল হানাদার সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক। একই সঙ্গে আলবদরের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান। সে শুধু অপরাধমূলক কর্মকা-ে অংশই নিত না, তার সশস্ত্র সহযোগীদেরও অপরাধ সংঘটনে নির্দেশ দিত। সেসময় মীর কাশেমের নির্দেশে চট্টগ্রামের মহামায়া হোটেলকে ডালিম হোটেলে রূপান্তরিত করে টর্চার সেলে পরিণত করা হয়। ওই সময় চট্টগ্রামে হেন অপরাধ নেই যা মীর কাশেমের নির্দেশে তার বাহিনী করেনি। স্বাধীনতার পর আত্মগোপনে থাকা মীর কাশেম জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশ্যে আসে এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়। ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হয় সে। আলবদর থেকে পরিণত হয় ধনকুবেরে, জামায়াতের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করার কাজে সে ছিল সক্রিয়। মামলা চলাকালে প্রসিকিউশন মীর কাশেমকে পাকিস্তানী খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালী খান’ হিসেবে অভিহিত করেছিল। মীর কাশেমের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের জামায়াত নেতাদের একটা স্তরের নিশ্চিত হলো। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হলো। মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ এবং তিন লাখের বেশি মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কিছুটা দায়মুক্ত হলো। সবচেয়ে বড় কথা হলো দীর্ঘ চার দশক পর হলেও একাত্তরের নরপশুরা বিচারের সম্মুখীন হয়েছে, তা অবশ্যই জাতিকে দায়মুক্তভাবে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। বর্তমান সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতার সঙ্গে সকল প্রতিকূলতা, বিরোধিতা, প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রেখেছেন। দেশ ও জাতি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। কেউ ভাবতে পারেননি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এদেশের মাটিতে হবে। সেই অসাধ্যই সাধন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। জামায়াত-বিএনপি জোট বিচার ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা সময়ে নানা কূটকৌশল অবলম্বন করেছিল। প্রচুর অর্থ ব্যয় করে দেশে-বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেও সুবিধা করতে পারেনি। বিচার কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে তারা দেশজুড়ে গুপ্তহত্যা পেট্রোলবোমা মেরে বাসযাত্রী হত্যাসহ নানারকম অপতৎপরতা চালিয়েছে, চালাচ্ছে একাত্তরের সেই নৃশংস পথ ধরেই। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মনোবল ও অদম্য নীতিবোধ সকল প্রতিবন্ধকতাকে রুখে দিয়েছে। নানা মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠে আসছে। জামায়াত এখনও পাকিস্তানভিত্তিক রাজনৈতিক দল। এর কেন্দ্রীয় অফিস করাচীতে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাসহ মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ সমর্থকদের অর্থে এরা পরিচালিত। বিষয়টি আমাদের প্রধানমন্ত্রীও অবহিত। শেখ হাসিনা এই দেশের মানুষের স্পন্দন বোঝেন, প্রজন্মের প্রত্যাশাকে অনুধাবন করতে পারেন। এবার জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি নিয়েও আইনগতভাবে তিনি ভাববেন এটা আমরা বিশ্বাস করি। এই রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে একাত্তরের নির্যাতিত ও শোকার্ত পরিবার, বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। তরুণ প্রজন্ম ও নব প্রজন্ম উজ্জীবিত হয়েছে। দেশবাসী চায় আগামীর বাংলাদেশ হোক যুদ্ধাপরাধী মুক্ত।
×