ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক উন্নতির মানদ- হলো, অবকাঠামো উন্নয়ন, জীবনমান, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ভৌত অবকাঠামো।১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত ধারণা সূচক অনুসারে তৎকালীন সামাজিক উন্নয়ন সূচক যেমন, শিশু মৃত্যু/মাতৃমৃত্যুর হার, খাদ্য নিরাপত্তার বৈশ্বিক মাপকাঠি, মাথাপিছু আয় ১৩০ মার্কিন ডলার থেকে ৩০০ মর্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মান তৎকালীন সময়ের দ্বিগুণ অবস্থানে আনার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫০ বছর। কিন্তু বিগত ৬ বছরে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের চেয়েও ১২২ গুণ বেশি অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছিল ১৬.০০-১৮.০০ বিলিয়ন ডলার। ২০০৮-২০১৬ মেয়াদে এই রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২.০০-২৬.০০ বিলিয়ন ডলার।২০০১-২০০৬ মেয়াদে দেশে রেমিট্যান্স আয় হয়েছিল ৬.০০-৮.০০ বিলিয়ন ডলার। ২০০৮-২০১৬ মেয়াদে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২.০০-১৬.০০ বিলিয়ন ডলারে।দারিদ্র্যে নিরসনে এই সরকারের সাফল্যও বিরাট। ১৯৯০-২০০৬ সময়ে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ। ২০০৮-২০১৬ সময়ে তা নেমে আসে।নানা বাধা অতিক্রম করে অর্থনৈতিক গতি সঞ্চারে সরকারের গতিশীল এবং উদ্ভাবনী নীতিমালা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথকে ত্বরান্বিত করেছে। যেমন পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপে অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি ক্ষেত্রে বেসরকারী বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ, আইপিপি নীতিমালা দ্বারা বিদ্যুতক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন অন্যতম। বিস্ময়কর সাফল্য আসে টেলিকমিউনিকেশন খাতেও, যার বৈদেশিক বিনিয়োগের শেয়ার দাঁড়ায় ৪৩ শতাংশ। ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্যাপকভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়ন অথনৈতিক উন্নতির গতিকে ত্বরান্বিত করেছে ব্যাপকতর। এ সময়ের মধ্যে ৬০০০ কিলোমিটার গ্রামীণ নতুন পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ চারলেন রাস্তা, ঢাকা মেট্রো, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সমুদ্রসীমা অর্জন এবং তার সঠিক ব্যবহারের জন্য সমুদ্র উন্নয়ন কৌশলপত্র সমীক্ষা বাস্তবায়ন। ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি সরকার জাতীয় খাদ্যনীতি এবং কার্যক্রম ২০০৮-২০১৫, গৃহনির্মাণ আইন-২০০৮, জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশল-২০০৯, জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০০৯, পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহণ আইন-২০০৯, জ্বালানি রূপান্তর আইন-২০১০, গ্যাসনীতি-২০১০, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০, সংশোধিত রূপান্তরিত জ্বালানি আইন-২০১১, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস প্রকল্প আইন-২০১১, শিল্পনীতি-২০১১, টেকসই এবং রূপান্তরিত জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১২, জাতীয় পানি আইন-২০১৩, হাওর মাস্টারপ্ল্যান ২০১২-২০৩২, সমুদ্রসীমা উন্নয়ন কৌশল,ড্যাপ (ডিটেল এরিয়া প্ল্যান), দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র ২০০৯-২০১১, তথ্য অধিকার আইন-২০০৯, জনপ্রশাসন সংস্কার কৌশলপত্র ২০১০-২০১৪ এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১১-২০১৫ ইত্যাদি গ্রহণ করেছে। এই আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দৃশ্যমান অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জিডিপি বৃদ্ধির হার।এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা এবং বৈরী রাজনৈতিক সহিংসতা সত্ত্বেও। মনে রাখা প্রয়োজন, এই অগ্রগতি অর্জনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান জিডিপির উচ্চ বৃদ্ধিহারসম্পন্ন দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম যেমন ভিজিএফ, বয়স্কভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতা, স্বনির্ভর খাদ্য কর্মসূচী, গ্রামীণ শব্দ ‘অভাব’-কে দূর করেছে। শিক্ষায় গত ৬ বছরে নিরক্ষরতার হার দূর করার সম্ভব হয়েছে নারীর ২৮ শতাংশ, পুরুষের ৫০.৪০ শতাংশ, প্রাপ্তবয়স্কদের ৩৫.৩ শতাংশ এবং সার্বিকভাবে ৪৪.৩০ শতাংশ। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।খাদ্য নিরাপত্তার জন্য পটুয়াখালীতে তৈরি করা হয়েছে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম বীজাগার। এস. এম শাহীনুজ্জামান
×