ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণিল আয়োজনে এনামুল হকের জন্মদিন উদ্যাপন

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বর্ণিল আয়োজনে এনামুল হকের জন্মদিন উদ্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুমাত্রিক এক ব্যক্তিত্ব ড. এনামুল হক। একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ হিসেবে রেখেছেন জাদুঘর আন্দোলনের পথিকৃতের ভূমিকা। সংস্কৃতির ভুবনের মানুষটি স্বাধীন দেশের সূচনালগ্নে অবতীর্ণ হন প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে। মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে রেখেছেন ভাষাসংগ্রামীর পরিচয়। টেলিভিশনে উপস্থাপনার পাশাপাশি কবি, গীতিকার, সুরকার ও গীতিনৃত্যনাট্য রচয়িতা হিসেবেও কুড়িয়েছেন খ্যাতি। গত ১৫ আগস্ট ছিল জাতীয় জাদুঘরের এই প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালকের ৮০তম জন্মবার্ষিকী। তবে শোকের মাস হওয়ায় আগস্টের পরিবর্তে দোসরা সেপ্টেম্বর উদ্্যাপিত হলো তাঁর জন্মদিন। শনিবার বিকেলে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বকে ফুলেল শুভেচ্ছা, তাঁকে নিবেদিত বিশিষ্টজনদের আলোচনা এবং তাঁর রচিত কবিতাপাঠ ও গীতিনৃত্যনাট্যসহ বর্ণিল আয়োজনে জানানো হয় জন্মদিনের ভালবাসা ও অভিনন্দন। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র ও কবি তৃণা হক কবিতা প্রয়াস। জন্মদিন উদ্্যাপনের এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ দীপু মনির সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা কথনে অংশ নেন নৃত্যশিল্পী রাহিজা খানম ঝুনু, মীনু হক, শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, অধ্যাপক নিয়াজ জামান ও অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। আয়োজক দুই সংগঠনের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাহবুব আলম ও এ এফ আকরাম হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই একঝাঁক ক্ষুদে নৃত্যশিল্পী অভিবাদন জানিয়ে মঞ্চে নিয়ে আসেন এনামুল হককে। এরপর ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়’ নাচ করে শিশু শিল্পীরা। জন্মদিনের শুভেচ্ছাসিক্ত এনামুল হক বলেন, আমার জন্মদিনের আয়োজন বলেই বলছি না, আমাদের জাতির নানা ইতিহাস গবেষণার জন্য হলেও আমার কাজগুলো সম্পর্কে সকলের জানা উচিত। জাতীয় জাদুঘরের এই প্রতিষ্ঠাতা আক্ষেপ করে বলেন, ত্রিশ বছর আগে জাদুঘরের দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়েছি। অথচ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ তো আমাকে মনে করে না। ১০০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে দেশবিদেশ থেকে গুণীজনরা এসে বক্তৃতা দেন। সেখানে তো আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতার গল্পগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করলে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে এক বার্তা পৌঁছে দিলাম, বাঙালীরা হাজারো বছরের ঐতিহ্যের গর্বিত উত্তরাধিকারী। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, দেশ-সমাজের জন্য সারাজীবন ভর কাজ করে গেছেন তিনি। নানা গুণে গুণান্বিত এক অনন্য সাধারণ মানুষ। দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতির জন্য ড. এনামের মতো এত কাজ কেউ করেছেন বলে আমার জানা নেই। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে এনামুল হক সদর্পে বিচরণ করেছেন। আমরা যখন ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে ফেলছিলাম, তখনই তিনি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছিলেন। আলী ইমাম বলেন, এনামুল হক হচ্ছেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে শেকড় থেকে উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তবে তাঁর যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। তিন পর্বে সাজানো আয়োজনে এনামুল হককে নিবেদিত শুভেচ্ছা কথন ও আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। দ্বিতীয় পর্বে পাঠ করা হয় এনামুল হক রচিত কয়েকটি কবিতা। কবিতাগুলো আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী এনামুল হক বাবু ও শান্তা তৌহিদা। এনামুল হক রচিত সূর্যমুখী নদী শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গীতিনৃত্যনাট্য পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমি অব ফাইন আর্টস পরিবেশিত প্রযোজনাটিতে অংশ নেন সাদিয়া ইসলাম মৌ, আব্দুর রশীদ স্বপন, ফারহানা চৌধুরী বেবী প্রমুখ। কন্ঠশীলনের সনদ প্রদান আবৃত্তিসন্ধ্যা ॥ একই আয়োজনে শিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হলো আবৃত্তিসন্ধ্যা। শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তি মিলনায়তনে হয়ে গেল আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠশীলনের আবর্তন সমাপনী সনদপত্র প্রদান অনুষ্ঠান। দুই পর্বে বিভক্ত এ অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে ছিল আলোচনা ও সনদপত্র প্রদান। এ আয়োজনে কন্ঠশীলনের ৮২ থেকে ৮৫তম ব্যাচের সনদ প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় পর্বের সাংস্কৃতিক আয়োজনে ছিল আবৃত্তি পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে প্রদায়ক গুণীন ছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ফরাসউদ্দীন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করেন কণ্ঠশীলনের সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মিঞা। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, মানুষ দুইভাবে তার জীবনকে চালিত করতে পারে। একটি জীবনযাপন আরেকটি জীবনধারণ। জীবনযাপন করতে গেলে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না। কিন্তু জীবনধারণ করতে গেলে দেশের সঙ্গে সংস্কৃতির সঙ্গে মিশতে হয়। বাংলাদেশে জন্ম নিলেই কেউ বাঙালী হয়ে যায় না। সেটা আমরা দেখেছি। বাঙালী সত্যিকারের বাঙালী হয়ে উঠবে তখনই যখন সে দেশকে ভালবাসবে, নিজেকে ভালবসবে, মানুষকে ভালবাসবে। তাহলেই সকল দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারব আমরা। রামেন্দু মজুমদার বলেন, গুণী মানুষদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তারা সুন্দর মানুষ হতে বাধ্য। এখানে যারা সংস্কৃতির চর্চায় নিজেদের নিবেদিত করেছেন তারা তাদের জ্ঞানের আলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবেন। তার মধ্য দিয়েই সংস্কৃতির যে শক্তি রয়েছে তা অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে জয়লাভ করার পথ দেখাবে। এতে করে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশও বেগবান হবে। ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, সুকুমার প্রবৃত্তির চর্চার প্রয়োজন আজকে সবচেয়ে বেশি। কারণ বস্তুগত বিষয়সমূহ মানুষকে সত্য সুন্দরের পথকে বাধাগ্রস্ত করছে। যারা সত্য সুন্দরের পথের চর্চা করেন তারা বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ কম। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আবৃত্তি এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চর্চিত শিল্প। কবিতাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেন একজন আবৃত্তি শিল্পী। কন্ঠশীলন আবৃত্তি ছাড়াও যেসকল সাংস্কৃতিক চর্চায় ভূমিকা রাখছে তা আদতে আমাদের নতুন প্রজন্মকে সংস্কৃতিবান করে গড়ে তুলছে। আলোচনাপর্ব শেষে তিনটি আবৃত্তি প্রযোজনা করে কন্ঠশীলনের বাচিকশিল্পীরা। প্রযোজনা প্রযোজনাগুলো হলো ‘আগুন লেগেছে রক্তে মাটির গ্লোবে’, ‘বীরের এ রক্তস্রোত-মাতার এ অশ্রুধারা’ ও ‘অমৃতের জয় বলো ভাই’। ফটোপি বর্ষসেরা আলোকচিত্রী পুরস্কার প্রদান ॥ ফটোপি একাডেমি অব ফাইন-আর্ট ফটোগ্রাফি সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ আলোকচিত্রীকে ফটোপি বর্ষসেরা আলোকচিত্রী ২০১৫ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এ বছর এ পুরস্কার পেয়েছেন ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী কেএম আসাদ। পুরস্কর হিসেবে তিনি পেয়েছেন নগদ ১০ হাজার টাকা, একটি ক্রেস্ট ও সনদপত্র। শনিবার আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দৃক ও পাঠশালার কর্ণধার শহিদুল আলম, ফটোসাংবাদিক আবীর আবদুল্লাহ প্রমুখ। পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে এই আয়োজন।
×