ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আজ জরুরী বৈঠক

কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম দিতে চাচ্ছেন না ট্যানারি মালিকরা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম দিতে চাচ্ছেন না ট্যানারি মালিকরা

এম শাহজাহান ॥ বিভিন্ন অজুহাতে ট্যানারি মালিকরা এবার কোরবানি পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম দিতে চাচ্ছেন না। আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং দানকৃত চামড়া সংগ্রহকারী এতিমদের হক আদায়ে সরকার সঠিক দাম নির্ধারণের পক্ষে। জাতীয় সম্পদ চামড়া নিয়ে কোন পক্ষ যাতে কারসাজি করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এই বাস্তবতায় কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ, সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে জরুরী বৈঠক আহ্বান করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চামড়াখাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারীভাবে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে উদ্যোক্তারা ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার জন্য কোর্টের নির্দেশে ট্যানারি মালিকদের এখন প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এই জরিমানা দিয়েও ব্যবসায়ীরা এবারের মতো হাজারীবাগে চামড়া কেনাবেচা করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু ইতোপূর্বে বার বার সময় চেয়ে কারখানা স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় উদ্যোক্তাদের এই দাবি এবার আমলে নিচ্ছে না সরকার। ফলে চামড়া নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের কারসাজির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে চামড়ার সঠিক দাম নিশ্চিত হবে না। একই সঙ্গে গরিব, এতিম, মিসকিন এবং মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য দানকৃত চামড়া নিয়ে বেশি নয়ছয় হতে পারে। এতে করে এ শিল্পের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। জানা গেছে, ঈদ-উল-আযহার আগে ট্যানারিগুলোকে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে সাভারে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চামড়া শিল্পনগরীতে বেশিরভাগ ট্যানারির অবকাঠামো নির্মাণ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ১৫৪টি ট্যানারির মাত্র ৩৫-৪০টি এবার কোরবানির চামড়া সাভারে প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। বাকি ট্যানারিগুলোকে হাজারীবাগে উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে দিতে হবে। অন্যথায় সেগুলো বন্ধ করা ছাড়া এ মুহূর্তে বিকল্প কোন পদ্ধতি দেখা যাচ্ছে না। যদিও চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) প্রস্তুতিও যথেষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, চামড়ার দাম নিয়ে কেউ যাতে কোন ধরনের কারসাজি বা ষড়যন্ত্র না করতে পারে সেজন্যই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। গত বছর ন্যায্য দাম নিশ্চিতে ব্যবসায়ীদের চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এবারও যাতে কোন পক্ষ না ঠকেন সেজন্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়া হবে। কোন পক্ষই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হোন সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। এদিকে, হাজারীবাগ থেকে কারখানা সাভারে স্থানান্তর সংক্রান্ত জটিলতায় ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়ার দামের ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সাভারে কারখানা প্রস্তুত হয়নি আর হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই বাস্তবতায় চামড়ার দাম নিয়ে এক ধরনের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাচ্ছে এ ধরনের শত অজুহাত দাঁড় করিয়ে ইতোমধ্যে চামড়ার মূল্য হ্রাস করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়ার দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের অপকৌশল বন্ধ না হলে এবারও ঠকবেন সাধারণ বিক্রেতারা। তাই আগেভাগে সরকারীভাবে ব্যবস্থা নিলে সিন্ডিকেট চক্রের তৎপরতা কিছুটা বন্ধ হতে পারে। এছাড়া চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া গেলে সমাজের এতিম, অসহায়, মসজিদ, মাদ্রাসা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর দান-খয়রাত ও আর্থিক সহায়তা পাওয়া নিশ্চিত হবে। এদিকে, বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) তথ্য মতে, গত কোরবানির ঈদে সারাদেশ থেকে প্রায় এক কোটি পিস পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৬০ লাখ পিস চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে পণ্য তৈরি ও রফতানি করা হয়েছে, কিন্তু এখনও গত বছরের প্রায় ৪০ লাখ পিস চামড়া মজুদ রয়েছে ট্যানারিগুলোতে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের বিপুলসংখ্যক পশুর চামড়া মজুদ থাকায় এবার ট্যানারি মালিকদের কাঁচা চামড়া কেনার আগ্রহও কম। এছাড়া হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরজনিত সমস্যাতো রয়েছে। এসব কারণে কোরবানির কাঁচা চামড়া পাচারেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, কোরবানির আগে হাজারীবাগ থেকে সাভারে সব ট্যানারি যেতে পারবে না। এজন্য আরও সময় লাগবে। তাই ওই সময় কোথায় কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও মজুত করা হবে সেটাই এখন বড় সঙ্কট হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় সম্পদ চামড়া রক্ষায় ব্যবসায়ীরা আন্তরিক। তবে বিভিন্ন অবকাঠামোজনিত সমস্যার কারণে এবার কাঁচা চামড়ার দাম কমে যেতে পারে। এ মুহূর্তে কোরবানির কাঁচা চামড়া সাভারে নিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণে সর্বোচ্চ ৪০টি কারখানা জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাকি কারখানাগুলো হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করবে। চামড়া শিল্পের সংগঠনগুলো থেকে আপাতত এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
×