ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নব্য জেএমবির মুরাদ ওরফে জাহাঙ্গীরের পরিচয় চিহ্নিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নব্য জেএমবির মুরাদ ওরফে জাহাঙ্গীরের পরিচয় চিহ্নিত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত নব্য জেএমবির সামরিক প্রশিক্ষক মুরাদ ওরফে মেজর মুরাদ ওরফে জাহাঙ্গীরের প্রকৃত পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। পরিচয় নিশ্চিত হতে মুরাদের হাতের আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হয়েছে। সেই ছাপের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও নিহত জঙ্গীর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার মাথার চুল, প্রস্রাব ও পায়ের মাংস সংরক্ষণ করা হয়েছে। সুরতহালে নিহত জঙ্গীর শরীরে নয়টি গুলি লাগার চিহ্ন রয়েছে। এদিকে মেজর মুরাদ নামে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত কোন মেজরের সন্ধান মেলেনি। মেজর পদবীটি মুরাদের সাংগঠনিক পদবী হতে পারে বলে তদন্তকারী সংস্থার ধারণা। বাড়িওয়ালার সহযোগিতায় সন্ধান মিলে নিহত জঙ্গী মুরাদের। শুক্রবার রাত দশটার দিকে রূপনগর আবাসিক এলাকার ৩৩ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর ছয়তলা বাড়ির ছয়তলায় জঙ্গী মুরাদকে ধরতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে জঙ্গী মেজর মুরাদ ওরফে জাহাঙ্গীর নিহত হয়। আহত হন রূপনগর থানার ওসি শহীদ আলম ও পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন ফকিরসহ চার পুলিশ সদস্য। ওসির কোমরে এবং শাহীনের কাঁধ ও মাথায় ধারালো ছুরির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পিস্তল ও একটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়। বাড়ির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত ১ জুলাই ওই বাসায় ভাড়ায় এসেছিল মুরাদ। পাঁচতলার ওই ফ্ল্যাটে দুটি বেড, ড্রয়িং ও ডাইনিং রুম রয়েছে। বাসার ভেতরে খাট ও ডাইনিং টেবিল ছাড়াও ছিল সোফাসেটসহ আনুষঙ্গিক আসবাবপত্র। আসার পর থেকেই তার গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল। তার স্ত্রী ও ছোট ছোট দুটি মেয়ে রয়েছে। বাড়িওয়ালাকে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার কথা আগাম জানিয়েছিল মুরাদ। সে অনুযায়ী গত ২৮ আগস্ট স্ত্রী ও মেয়েদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়। নিহত জঙ্গী মূলত বাড়ি থেকে ফার্নিচার নিতেই সেদিন বাসায় গিয়েছিল। বাসায় উঠার পর থেকেই তার গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল। প্রায়ই বাসায় থাকত না। ফিরত রাতে। বিষয়টি বাড়িওয়ালার সন্দেহ হয়। তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ ওই ব্যক্তি বাসায় যাওয়ামাত্র তাদের জানাতে বলে। শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে মুরাদ বাসায় ফিরে। মুরাদ যথারীতি ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর বাড়িওয়ালার দুই ছেলেসহ বাসিন্দারা মুরাদের ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। তারপর বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যথারীতি পুলিশ গিয়ে তালা খুলে মুরাদকে ডাকতে থাকে। একপর্যায়ে মুরাদের সন্দেহ হয়। সে দরজা খুলেই সামনে পুলিশ দেখে গুলি চালাতে থাকে। আর হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি পুলিশ সদস্যদের আঘাত করতে করতে দৌড়ে সিঁড়ির নিচে নামে। এতে আহত হন চার পুলিশ সদস্য। এরপর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে মুরাদ বাড়ি থেকে মাত্র দশ থেকে পনেরো গজ সামনে গিয়ে রাস্তার উপর ঢলে পড়ে। সেখানেই মুরাদের মৃত্যু হয়। রাত আড়াইটার দিকে লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। দুপুর পৌনে দুইটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত নিহত জঙ্গীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এই চিকিৎসক জানান, নিহতের মাথায় তিনটি এবং শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছয়টি ক্ষত রয়েছে। ক্ষতগুলো বুলেটের। বুলেটগুলো বিদ্ধ হওয়ার পর বেরিয়ে গেছে। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, মুরাদের প্রকৃত পরিচয় জানতে তার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তা জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, অস্ত্রোপচারের পর রূপনগর থানার ওসি ও পরিদর্শক তদন্ত শঙ্কামুক্ত। তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, নিহত মুরাদ নব্য জেমএমবির শীর্ষনেতা তামিম আহমেদ চৌধুরীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিল। গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানকালে গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন জঙ্গী নিহত হলেও মুরাদ ওরফে জাহাঙ্গীর পালিয়ে ছিল। নব্য জেএমবিতে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় মুরাদকে মেজর মুরাদ নামে ডাকত জেএমবি সদস্যরা। সংগঠনেও সে মেজর মুরাদ হিসেবে পরিচিত ছিল। একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মুরাদ নামে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত বা বরখাস্ত হওয়া কোন মেজরের সন্ধান মেলেনি। তবে সেনাবাহিনী থেকে মুরাদ নামে কোন মেজর অবসর নিয়েছিল কিনা, তাও জানা যায়নি। বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে।
×