ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মীর কাশেমের মামলা নিয়ে প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে মন্তব্যকারী দুই মন্ত্রীর বিষয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য

‘শপথ ভঙ্গ হয়নি, পদত্যাগ করার বাধ্যবাধকতা নেই’

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘শপথ ভঙ্গ হয়নি, পদত্যাগ করার বাধ্যবাধকতা নেই’

তপন বিশ্বাস ॥ দুই মন্ত্রীর শপথ ভঙ্গ হয়েছে মর্মে আদালতের দেয়া পর্যবেক্ষণে মন্ত্রীর পদ শূন্য হওয়া বা পদত্যাগ করার আইনগত কোন অবকাশ নেই। আদালত কর্তৃক জরিমানা হলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী চাকরিচ্যুত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এতে কোন মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য পদ শূন্য হওয়ার বিধানও নেই নজিরও নেই। এ প্রসঙ্গে আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, তাদের মন্ত্রিত্ব থাকার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, নৈতিকতার বিষয়টি ভিন্ন, সংবিধানে নৈতিকতার বিষয়টি বলা হয়েছে সংসদ সদস্য পদের জন্য। ফৌজদারি অপরাধে নৈতিক পদস্খলনজনিত কারণে দুই বছর সাজাপ্রাপ্ত হলে কেউ সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকতে পারবেন না। আমি মনে করি, দুই মন্ত্রী যে সাজা পেয়েছেন, এতে তাদের মন্ত্রিত্ব যাবে না। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আদালতের দেয়া পর্যবেক্ষণে মন্ত্রিত্ব অবসানের সুস্পষ্ট কোন বিধান নেই। সংবিধানের ৬৬(২) ধারায় বলা আছে, ‘কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবে না, যদি (ক) কোন উপযুক্ত আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্ত বলে ঘোষণা করেন; (খ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করে থাকেন; (গ) তিনি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনতি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদ-ে দ-িত হন এবং তার মুক্তি লাভের পর পাঁচ বছর কাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে; (ঙ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দ-িত হয়ে থাকেন; (চ) আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন; অথবা (ছ) তিনি কোন আইনের দ্বারা বা অধীন অনুরূপ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হন। সংবিধানের আলোকে কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য পদ হারাবেন যদি তিনি এ জাতীয় কোন অপরাধ করেন। কিন্তু আদালত অবমাননার দায়ে সংসদ সদস্য পদ হারানোর কোন বিধান আইনে নেই। সূত্র জানায়, কেউ সংসদ সদস্য পদ হারালেও তার মন্ত্রিত্ব থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় ১০ শতাংশ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। মূলত কেউ মন্ত্রিত্ব হারাবে কী হারাবে না, তা নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ওপর। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে রাষ্ট্রপতি শপথ পাঠ করিয়ে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হক ‘নৈতিকভাবে মন্ত্রী পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন’ বলে আইনজীবীদের একটি অংশ দাবি করলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, এখানে পদত্যাগ করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। মার্চের শুরুতে যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেমের আপীল মামলার রায় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতিকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল। ওই বক্তব্যের কারণে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে আপীল বিভাগ। দুইজনকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদ-, অনাদায়ে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদ-ের রায় ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, আদালত অবমাননার বিষয়ে দেশের জনগণকে একটি বার্তা পৌঁছে দিতেই দুই মন্ত্রীকে এ দ-। পরে অবশ্য দুই মন্ত্রী জরিমানা প্রদানও করেন। এ সাজার পর কামরুল ও মোজাম্মেল মন্ত্রী পদে থাকতে পারেন কিনা, সেই প্রশ্ন উঠলে আইনজীবীদের একপক্ষে বলা হয়, এ রায়ের কারণে মন্ত্রিত্ব না থাকার কোন বিধান সংবিধানে নেই। অন্যপক্ষের দাবি, ‘শপথ ভঙ্গের’ কারণে তারা মন্ত্রী থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। কামরুল ও মোজাম্মেল আর মন্ত্রী পদে থাকতে পারেন কিনাÑ এ প্রশ্নে আনিসুল হক তখন বলেন, ‘এখানে এটা একদমই পরিষ্কার, এখানে কিন্তু সংবিধান ক্ষুণœ হওয়ার কোন ব্যাপার নাই। এখানে পদত্যাগ করার কোন বাধ্যবাধকতা নাই। এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত বিবেচনার ব্যাপার।’ আদালত নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যে মন্ত্রীদের শপথ ভঙ্গ হয়েছে কিনাÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না, শপথভঙ্গ হয়নি। কিন্তু আদালত মীর কাশেম আলীর পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে দুই মন্ত্রীর শপথ ভঙ্গ হয়েছে বলে অভিহিত করেন। অপর এক আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, যদি শপথ ভঙ্গ হয়েই থাকে, তবে প্রয়োজনে আবারও শপথ নিতে পারেন। এ নিয়ে কোন সমস্যা তো দেখি না। এদিকে আদালত নিয়ে মন্তব্য করে অবমাননার দায়ে দ-িত দুই মন্ত্রী তাদের ‘সংবিধান রক্ষার শপথ ভেঙেছেন’ বলে সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ আসার পর তারা ‘কোন কর্তৃত্ববলে’ পদে রয়েছেন, তা জানতে চেয়ে উকিল নোটিস দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের একজন আইনজীবী। ইউনুছ আলী আকন্দ নামের ওই আইনজীবী বলেন, শনিবার একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দুই মন্ত্রীর কার্যালয়ে তার ওই নোটিস পাঠানো হয়েছে। নোটিস পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তা না হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে নোটিসে জানিয়েছেন ইউনুছ আলী।
×