ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিড়িয়াখানার হাল-হকিকত

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

চিড়িয়াখানার হাল-হকিকত

দুই চিড়িয়াখানায় সিংহের স্থানান্তর ঘটানো হয়েছে। একটি চিড়িয়াখানা রংপুরের অন্যটি চট্টগ্রামের। একটি থেকে সিংহী গেছে অন্যটি থেকে সিংহ এসেছে। যাতে দুটির জোড়া মেলে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি সংবাদের সারমর্ম এটি। বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। চিড়িয়াখানায় রাখা হয় বন্যপ্রাণী মানুষকে দেখানোর জন্য। যাদের থাকার কথা জঙ্গলে মানুষ তাদের দেখে চিড়িয়াখানার খাঁচার মধ্যে। সেখানে তাদের লালন-পালন, সেখানেই তাদের জীবন ধারণ। সেখানে কোন প্রাণী নিঃসঙ্গ হয়ে গেলে তার সঙ্গী খুঁজে বের করা হয়। জোড়া মেলানো হয়। এই জোড়ার কারণেই তাদের বংশবিস্তার ঘটে। সিংহের উল্লিখিত স্থানান্তর করার পেছনে রয়েছে একই উদ্দেশ্য। এছাড়া আর একটি বড় কারণ হচ্ছে তাদের জন্য সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশের নিশ্চয়তা বিধান। তা না হলে খাঁচায় বন্দী প্রাণী এমনিতে হয়ে থাকে মনমরা তার ওপর নিঃসঙ্গতা তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। যার অনিবার্য পরিণতি তাদের অসুস্থতা, বার্ধক্য, অকাল মৃত্যু। সেদিক থেকে উল্লিখিত চিড়িয়াখানার দুটি সিংহ বিনিময়ের সংবাদটি মানুষকে আনন্দিত করেছে। চিড়িয়াখানার ব্যাপারে মানুষের আনন্দজনক আগ্রহ সব সময়ের। চিড়িয়াখানায় যাবার সুযোগ হলে ছোটে ছেলে বুড়ো সবাই। খাঁচায় ডাঙ্গায় জলে নানা কৌশলে চিড়িয়াখানায় রাখা হয় প্রাণীদের যার যেমন আবাস মোটামুটি সেই পরিবেশ সেখানে গড়ে তোলা হয়। মোটামুটি সব প্রাণী এক সঙ্গে দেখার সুযোগ কেবল চিড়িযাখানাতেই মেলে। প্রাণী জগত সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়- সেখানে গেলে তাতে জ্ঞান বাড়ে আনন্দও পাওয়া যায়। শিশু-কিশোর তথা ছাত্রছাত্রীর জন্য চিড়িয়াখানার গুরুত্ব অপরিসীম। সে জন্য সবাই প্রত্যাশা করে চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের যথাযথভাবে রাখা এবং দর্শনার্থীদের জন্য সবসময় স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা হোক। দুঃখের বিষয় এমন পরিবেশ সব সময় মেলে না। সেখানে গেলে দেখা যায় কোন প্রাণী অসুস্থ কিংবা খুব রোগা, সারাদিন ঝিমোচ্ছে, এককথায় করুণ শারীরিক পরিস্থিতি। কোথায় কোন্ প্রাণী নিঃসঙ্গ কোথাও আবাস আছে কিন্তু প্রাণী নেই। কোন স্থানের পরিবেশ দর্শনার্থীদের জন্য অনুকূল নয়। ঢাকায় দেশের সবচেয়ে বড় চিড়িযাখানা। রমনা পার্কসহ কয়েকটি স্থানে কিছু প্রাণী রাখা হতো এক সময়। এটাই ছিল এক সময়ের চিড়িযাখানা। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে মিরপুরের বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয় এই চিড়িয়াখানা। এখানেও বহু সময় দেখা গেছে, প্রাণীদের দুরবস্থার চিত্র, পরিবেশ সম্পর্কেও নানা সময় উঠেছে অভিযোগ। চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেন সেখানে রয়েছে দেখার এবং শেখার বহু কিছু কিন্তু সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে ওঠে নানা অভিযোগ। বহু অর্থ ব্যয়ে এবং ভাল উদ্দেশ্যে এসব গড়ে তোলা হলেও এগুলোর সুষ্ঠু পরিবেশ সুনিশ্চিত করা যায়নি। রক্ষণাবেক্ষণ সুষ্ঠুভাবে হলে কোন সমস্যার সৃষ্টি হবার কথা নয় এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, হাতিরঝিলের কথাও। বহু অর্থ ব্যয় এবং অনেক পরিশ্রমে অতি চমৎকার দর্শনীয় এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হয় এটি। এরও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরী দেশের সকল চিড়িয়াখানার প্রাণী যাতে সুস্থ থাকে সেটা যেমন নিশ্চিত করা জরুরী তেমনি জরুরী হচ্ছে সেগুলোর পরিবেশ সুন্দর ও ভদ্রজনোচিত এবং সবার জন্য নিরাপদ রাখা।
×