ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্ত ব্যাংকের যাত্রা

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সীমান্ত ব্যাংকের যাত্রা

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীকে থাকতে হয় সদা সর্বদা সচেষ্ট। দেশের সীমান্তবর্তী প্রতি ইঞ্চি মাটি ও ধূলিকণা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করার মহান অভিপ্রায়ে নিবেদিত প্রাণ তারা। শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে কর্ম সম্পাদন যাদের কর্তব্য, তাদের সুবিধা-অসুবিধার ক্ষেত্রগুলোও পর্যবেক্ষণ করা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব। দুই শ’ একুশ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই বাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশীদার হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তথা বিজিবিকে সকল দায়িত্ব গভীর দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হয়। বেসামরিক প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা প্রদান; প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা ও দেশ গঠনমূলক বিভিন্ন কর্মকা-ে বিজিবির ভূমিকা ও পেশাদারিত্বে সর্বমহলে প্রশংসা গৌরবান্বিত করছে দেশকে। সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থানের ফলে চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী-শিশু পাচার ও সীমান্ত অপরাধ হ্রাস পেতে বাধ্য। সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নে তাদের নিবেদন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ছিল পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর; সেই পাকিস্তানকালে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর ভূমিকা ছিল অনন্য। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পঁচিশে মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় পিলখানায় ইপিআর ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাল্টা গুলিও চলে। প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল হানাদাররা। মুক্তিযুদ্ধের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অসংখ্য যোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। বারো হাজার সদস্য যুদ্ধে অংশ নেন। এর মধ্যে আট শ’ সতেরো জন শহীদ হন। বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন এই বাহিনীর এক শ’ বিশজন সদস্য। স্বাধীনতার পর বাহিনীর নামকরণ হয় বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআর। কিন্তু ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক বেদনাদায়ক ঘটনায় এ বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা শহীদ হয়েছেন। বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলায় বিপত্তি দেখা দিয়েছিল। সেই নারকীয় ঘটনার বিচারে অনেকের সাজা হয়েছে। এই ঘটনার পর বাহিনীকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার জন্য নাম, লোগো, পোশাক পরিবর্তন করা হয়। নামকরণ হয় বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ। ২০১০ সালে সংসদে আইন পাস হয়। বিজিবির নিজস্ব এয়ার উইংও গঠন করা হয়েছে। যা এর অপারেশন সামর্থ্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে। একই সঙ্গে বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে গঠিত বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে চার শ’ ঊনাশি কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে নয়া ৫৫টি বিওপি। একটি চৌকস বাহিনী হিসেবে ইতোমধ্যে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। তারই আলোকে বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারের কল্যাণের লক্ষ্যে সীমান্ত ব্যাংক চালু করা হয়েছে?। গত পহেলা সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির যাত্রা শুরু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত এই বেসরকারী ব্যাংকটি চালুর মাধ্যমে বিজিবি সদস্যদের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলা যায়। প্রধানমন্ত্রী প্রথম গ্রাহক হিসেবে নিজের নামে এ্যাকাউন্টও খুলেছেন। বলেছেনও তিনি সরকারের পক্ষ থেকে এটি বিজিবি সদস্যদের জন্য ঈদ উপহার। স্বনির্ভর অর্জনে প্রতিটি বাহিনীকে সহায়তা করার অংশ হিসেবে চালু ব্যাংকটি মূলত বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের একটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, পেনশন স্কিম, গৃহনির্মাণ ঋণ, দুরারোগ্য রোগের জন্য দেশে-বিদেশে চিকিৎসা সহায়তা প্রদানে ঋণ, কৃষি ঋণ, নানা প্রকল্পের মতো বহুবিধ খাতে ঋণ সহায়তা দেবে। সীমান্ত এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তাও দেবে। চার শ’ কোটি টাকা অনুমোদিত এবং এক শ’ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে গঠিত তফসিলী ব্যাংক হিসেবে এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করবে এই ব্যাংক। বিজিবির মুক্তিযোদ্ধা সদস্য, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং তাদের পরিবারের কল্যাণে ব্যয় হবে এ ব্যাংকের আয়। বিজিবি সদস্যদের যোগ্য সন্তানরা ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। সীমান্ত ব্যাংক চালু মূলত বর্তমান সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন হবে, তেমনি সঞ্চয় বাড়বে। দেশ এগিয়ে যাবে। ব্যাংকটির শুভ যাত্রাপথে জানাই আগাম অভিনন্দন।
×