ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব

বাংলাদেশের বাধা আজ চাইনিজ তাইপে

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশের বাধা আজ চাইনিজ তাইপে

রুমেল খান ॥ ‘ইচ্ছা করলে উপায় হয়’, ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’, ‘যদি চাওয়াটা হয় আন্তরিক, তাহলে পাওয়াটা হবে নিখুঁত’ ... এই প্রবাদগুলো এখন অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবার অপেক্ষায় আছে। কার জন্য? উত্তরÑ বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের জন্য। ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব’ আসরে খেলছে তারা (গ্রুপ ‘সি’তে)। মূলপর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য আর বাকি মাত্র দুটি জয়। তাহলেই প্রথমবারের মতো এএফসি আয়োজিত যে কোন পর্যায়ের আসরের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইতিহাস গড়বে তারা। তবে এ জন্য স্বাগতিক বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে চাইনিজ তাইপে। তাদের বিরুদ্ধেই আজ সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অগ্নি-দ্বৈরথে অবতীর্ণ হবে ‘বেঙ্গল টাইগ্রেস’ দল। এ আসরে তারা বাংলাদেশ দলের মূল প্রতিপক্ষ। তাদের হারাতে পারলে মূলপর্বে নাম লেখানোর উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করতে পারবে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যারা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও চাইনিজ তাইপে দু’দলই ৩ ম্যাচ খেলে জয় কুড়িয়ে নিয়েছে প্রতিটিতেই। তাদের সংগ্রহ ৯ পয়েন্ট। তবে বাংলাদেশের চেয়ে ৩ গোল বেশি করে এবং গোল তফাতে এগিয়ে থাকায় চাইনিজ তাইপে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। তাইপের গোল ২১টি, বাংলাদেশের গোল ১৮টি। বাংলাদেশই এই গ্রুপের একমাত্র দল, যারা এখনও কোন গোল হজম করেনি! সেক্ষেত্রে চাইনিজ তাইপে ১টি গোল খেয়েছে। তাই তাদের গোল পার্থক্য +২০, আর বাংলাদেশের +১৮। এই ম্যাচের আগে দু’দিন বিশ্রাম পেয়েছে উভয় দল। ড্র নয়, উভয় দলই জয় পেতে মরিয়া, চালিয়ে যাচ্ছে কঠোর অনুশীলন। অনেকের মতেই চাইনিজ তাইপের সঙ্গে এই ম্যাচটি বাংলাদেশ দলের জন্য ‘ফাইনাল’ ম্যাচ। যেহেতু এই গ্রুপ থেকে মাত্র একটি দল যাবে মূলপর্বে এবং সে লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে চাইনিজ তাইপে, কাজেই তাদের না হারাতে পারলে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না স্বাগতিক দলের জন্য। যদি বাংলাদেশ চাইনিজ তাইপের সঙ্গে ড্র করে এবং শেষ ম্যাচে আমিরাতকে হারায়, এদিকে নিজেদের শেষ ম্যাচে যদি তাইপে ইরানকে হারায়, তাহলে বাংলাদেশ-তাইপে উভয় দলের পয়েন্ট সমান হলেও গোল তফাতে এগিয়ে থাকার সুবাদে তাইপে দলেরই মূলপর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। তবে এখানে কিছু সমীকরণও আছে বাংলাদেশের পক্ষে। যেমন তারা যদি তাইপের সঙ্গে ড্র করে এবং আমিরাতকে হারায় ও তাইপে যদি তাদের শেষ ম্যাচে ইরানের সঙ্গে ড্র করে বা হারে, তাহলে কপাল খুলতে পারে বাংলাদেশের। তবে এ বিষয়টি যেহেতু বাংলাদেশের হাতে নেই, তাই তারা এখন সরাসরিই চাইনিজ তাইপেকে হারাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। চলমান আসরে বাংলাদেশ হারায় যথাক্রমে ইরানকে ৩-০, সিঙ্গাপুরকে ৫-০ এবং কিরগিজস্তানকে ১০-০ গোলে। কিরগিজদের হারানোর স্কোরলাইনটা হচ্ছে এই আসরে যে কোন দলের এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল করার কৃতিত্ব। দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকারের। সে করেছে ৫ গোল। দলের একমাত্র হ্যাটট্রিকটিও তারই। পক্ষান্তরে চাইনিজ তাইপে হারিয়েছে যথাক্রমে কিরগিজস্তানকে ৭-১, আরব আমিরাতকে ৫-০ এবং সিঙ্গাপুরকে ৯-০ গোলে। দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল (৫টি) ঝেং ইয়া-জিহ্ এবং সু-ইউ সুয়ানের। ‘আমরা কখনও ড্রয়ের মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামিনি। সেটি যে দলই হোক। কেননা এখানে প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েরা ম্যাচ বাই ম্যাচ উন্নতি করেছে। আমরা চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে শনিবারের ম্যাচে জেতার জন্য নিজেদের সেরাটাই নিংড়ে দেব। ইনশাল্লাহ্ জয় আমাদেরই হবে।’ বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের মন্তব্য। তিনি প্রতিপক্ষ দল সম্পর্কে বলেন, ‘আমি চাইনিজ তাইপের তিনটি ম্যাচই দেখেছি। কোন সন্দেহ নেই, তারা ভাল ও শক্তিশালী দল। তাদের সমীহ করেই খেলব। এটা নিশ্চিত যে ম্যাচটি যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। দর্শকরা হয়তো ম্যাচটি দেখে ফাইনালের আমেজ পেতে পারেন।’ দলের মোট ১৮ গোল করেছে আট ফুটবলার। এটাকে ইতিবাচক মনে করেন ছোটন, ‘আমরা গোল করার জন্য নির্দিষ্ট কারুর ওপর নির্ভরশীল নই।’ তবে গোলরক্ষক মাহমুদাকে এখনও কোন শক্ত পরীক্ষাতে পড়তে হয়নি। চাইনিজ তাইপের সঙ্গে তো পড়তে হবে, সেটা কিভাবে সামাল দেয়া যাবে? ছোটনের ব্যাখ্যা, ‘মাহমুদার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আশাকরি সে ভাল খেলবে। প্রতিপক্ষের চাপ মোকাবেলা করতে এ দু’দিনে গোলরক্ষকদের মানসিক, শারীরিকÑ সবরকমের স্পেশাল ট্রেনিং করিয়েছি।’ মূলপর্বে যাবার রাস্তায় স্বাগতিকদের সব থেকে বড় বাধা এই চাইনিজ তাইপে। আজকের ম্যাচে না জিতলে দাঁড়াতে হবে নতুন ও কঠিন সমীকরণের সামনে। তাই কোন ঝুঁকি না নিয়ে ম্যাচ জিতে সমীকরণের মারপ্যাঁচটা আজই শেষ করে দিতে চায় ছোটনের শিষ্যারা। পারবে কি তারা?
×