ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩৭ নম্বর পিলারে টপ পাইল করা হয়েছে

দুটি ইকো সাউন্ডার মেশিন পদ্মা সেতু প্রকল্পে এসেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দুটি ইকো সাউন্ডার মেশিন পদ্মা সেতু প্রকল্পে এসেছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মার সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) পাইল স্থাপনের কাজ আবার শুরু হচ্ছে। ইকো সাউন্ডার মেশিন বিকল হওয়ায় এ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে বুধবার নতুন দুটি ইকো সাউন্ডার প্রকল্পে এসে পৌঁছেছে। তাই এখন পদ্মাতীরের জাজিরা প্রান্তে এ মূল পাইল পুরোদমে স্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। গত ৮ আগস্ট এ পাইল স্থাপন শুরু হয়ে তিনটি পাইল স্থাপন করা হয়। আরও দুটি স্থাপনের সময় প্রযুক্তির অধুনা সংযোজন ইকো সাউন্ডার বিকল হয়ে যায়। তাই জাপান থেকে একটি এবং চায়না থেকে আরেকটি মোট দুটি ইকো সাউন্ডার আনা হয়। যন্ত্রটি পাইল মাটির নিচে যথাযথভাবে প্রবেশ করছে কি-না তা নিশ্চিত করছে। এদিকে ৩৭ নম্বর পিলারের প্রথম টপ পাইল করা হয়েছে। এ পিলারের তিনটি বটম পাইল আগে করা হয়েছিল। এর উপরই টপ পাইল স্থাপন হয়েছে। এখন পাইলটির বাকি তিনটি পাইল স্থাপানের প্রক্রিয়া চলছে। এ ৩৭ ও পাশে ৩৮ নম্বর পিলারেই প্রথম সুপার স্ট্রাকচার স্থাপন করা হবে। এদিকে চীন থেকে আসা সুপার স্ট্রাকচার ফিটিংয়ের কাজ নিয়ে মাওয়ার কুমারভোগের বিশেষ ওয়ার্কশপে এখন ব্যস্ততা। রাতদিন ভারি ভারি এ লৌহখ- জোড়া লাগানোর কাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে পিলারের উপর এ অবকাঠামো স্থাপনের টার্গেট সামনে রেখে এগিয়ে চলছে নানামুখী কাজ। গত ৮ আগস্ট থেকে এ সুপার স্ট্রাকচার এ ইয়ার্ডে আসতে শুরু করে। প্রথম চালানের সব মালামাল আসার পর চীন থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের টেকনিশিয়ান দল আসে গত ২৫ আগস্ট। এরপরই এ কাজের অগ্রগতি বেড়ে যায়। চীনে প্রায় ৮০ মিলিমিটার পুরু স্ট্রিলের প্লেট কেটে ওয়েল্ডিং করে তৈরি করা হয়েছে এ সেতুর উপরের অংশের এ অবকাঠামো। মাওয়ায় ল্যাব টেস্ট করার পর ক্রমান্বয়ে ১২৯টি স্প্যানকে জোড়া দিয়ে তৈরি করা হবে প্রায় তিন হাজার টন ওজনের একেকটি সুপার স্ট্রাকচার, যা দুটি পিলারের মধ্যে বসিয়ে তৈরি করা হবে সংযোগ। আর গার্ডারসহ দ্বিতল সুপার স্ট্রাকচার বসিয়ে দেয়া হলে এর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন ও উপর দিয়ে অন্য যানবাহন। মাওয়া ও জাজিরা এ দুই প্রান্তের নয়টি পিলারের মধ্যে তিনটি করে পদ্মা নদীতে এখন পর্যন্ত ২৭টি পাইল বসানো হয়েছে। এর ২৪টি বটম পাইল। বাকি তিনটিতে টপ পাইলও হয়েছে। সেতুর পাইলিংয়ের কাজে গতি আনতে আরেকটি হ্যামার যোগ করা হচ্ছে শীঘ্রই, যেটি এখন সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আসছে। মূল সেতুর কাজ করছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। পদ্মায় যেমন চলছে বড় আকারের এ কাজ, তেমনি পদ্মার তীরেও চলছে মূল সেতুর আরেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সংযোগ সেতু (ভায়াডাক্ট)। এর ২২ নম্বর পিলারে তিনটি পাইল ইতোমধ্যেই স্থাপন হয়ে গেছে। ভায়াডাক্টের ২০ নম্বর পিলারে আরও দুটি পাইল স্থাপনের কাজ দিয়েই আবার হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের জনকণ্ঠকে জানান, ইকো সাউন্ডার মাটির ভেতরের পাইলের অবস্থান জানান দেবে। পাইলের ভার্টিক্যাল ঠিক হচ্ছে কি-না সে তথ্য দেবে। আব্দুল কাদের জানান, বৈচিত্র্যময় পদ্মায় স্রোত, পানি বৃদ্ধি-হ্রাস, ঝড়-বৃষ্টি, রোদ-আঁধার সব মোকাবেলা করে ক্রমেই এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতু নির্মাণ। এখানে বিশ্বের আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিদেশীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন নতুন কাজে সক্ষমতা অর্জন করছে বাঙালীরা। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, পদ্মায় সেতুটির কাজ বিশ্বমানের নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইকো সাউন্ডার ছাড়াও ভায়াডাক্টের পাইল স্থাপন সম্ভব ছিল। কিন্তু কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিউজিল্যান্ডের মি. রাবার্ড ইকো সাউন্ডার ছাড়া পাইল স্থাপন বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী দ্রুত এ ইকো সাউন্ডার আনা হয়। এ প্রকৌশলী জানান, যন্ত্রটি আসার অপেক্ষার এ সময়ে ভায়াডাক্টের আরও ১০টি পাইল স্থাপন সম্ভব ছিল। কিন্তু কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করতেই এটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঠিকাদারকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে বিশ্বমানের কাজ নিশ্চিত করতে সব রকমের যন্ত্রপাতি রাখা। কোন যন্ত্র বিকল হলে বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাই জাপান থেকে একটি ইকো সাউন্ডার অর্ডার করা হলেও বিকল্প হিসেবে চীন থেকেও আরেকটি ইকো সাউন্ডার আমদানি করা হয়।
×