ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সদরঘাটে লঞ্চের টিকেট নেই, জমে ওঠেনি বিআরটিসির টিকেট বিক্রি

এবার ঘরে ফেরার পালা কমলাপুরে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এবার ঘরে ফেরার পালা কমলাপুরে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ হলো পাঁচদিনব্যাপী ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। এবার ঘরে ফেরার পালা। সাত সেপ্টেম্বর থেকে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরবে মানুষ। শুক্রবার ছুটির দিনে যাত্রী কম হলেও টিকেট নিতে সবার মধ্যেই ছিল প্রতিযোগিতা। সকালে প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে লাইনের পরিধি যায় রাস্তা পর্যন্ত। এদিকে লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকেট কিনতে সকাল থেকে ঢাকা সদরঘাট টার্মিনালে ছিল মানুষের ভিড়। বৃহস্পতিবার বেশিরভাগ টিকেট শেষ হওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দ্বিতীয় দিনেও জমেনি বিআরটিসির টিকেট বিক্রি কার্যক্রম। বেশিরভাগ কাউন্টার ছিল ফাঁকা। কোরবানির ঈদের ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রির শেষদিন অনেকটাই পাল্টে যায় কমলাপুর রেলস্টেশনের চিত্র। আগাম টিকেটের জন্য গত চারদিনের মতো ভিড় দেখা যায়নি শুক্রবার। কাক্সিক্ষত টিকেট পেতে কোন সমস্যা না হওয়ায় ছিল না কোন আক্ষেপ-অভিযোগও। শুক্রবার সকাল আটটায় শুরু হয় টিকেট বিক্রি। এদিন দেয়া হয় ১১ সেপ্টেম্বর ঈদযাত্রার আগাম টিকেট। শুক্রবার চাঁদ দেখা গেলে বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ হবে ১২ সেপ্টেম্বর। বিষয়টি মাথায় রেখেই পাঁচদিন ধরে ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি করেছে রেলওয়ে। শুক্রবার সকাল নয়টার মধ্যে চট্টগ্রামের তূর্ণা নিশীথা, মহানগর এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস ও নোয়াখালীর উপকূল এক্সপ্রেসের কাউন্টার একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। এদিন ৭ নম্বর কাউন্টারে সুবর্ণ, সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ও মহানগর প্রভাতী ট্রেনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে। সেখানে যাত্রীর কিছুটা ভিড় থাকলেও গত কয়েকদিনের মতো নয়। রেলওয়ে জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় প্রতিদিন কমলাপুর থেকে ৬৯ ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। কমলাপুর ছাড়াও বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, যশোর ঈশ্বরদী, রাজশাহী, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটসহ বড় স্টেশন ও জংশনগুলো থেকেও অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। সোমবার সকাল আটটা থেকে কমলাপুরের ২৩ কাউন্টার থেকে শুরু হয় অগ্রিম টিকেট বিক্রি। ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের টিকেটের জন্য বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটায় কাউন্টারে আসেন বেসরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন। তার ধারণা ছিল, দুপুর বারোটার আগে টিকেট কিনতে পারবেন না। তবে সকাল পৌনে দশটার মধ্যেই কাক্সিক্ষত টিকেট পেয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ভাবছিলাম টিকিট পেতে বারোটা বাজবে। এত আগে পাব, ভাবিনি! খুব খুশি লাগছে, একটু অবাকও লাগছে! সকাল নয়টার পর সিলেটগামী ট্রেনের কাউন্টারে কোন টিকেট প্রত্যাশীকে দেখা যায়নি। প্রায় একই অবস্থা ছিল খুলনা, মোহনগঞ্জগামী টিকেট কাউন্টারেও। কিশোরগঞ্জের টিকেট কাউন্টারও ছিল প্রায় ফাঁকা। সকাল সোয়া ১০টায় নারীদের জন্য নির্ধারিত কাউন্টারের লাইনে ছিলেন মাত্র দুজন। মোহনগঞ্জ কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা আল আমিন বলেন, আজ একেবারেই ভিড় নেই। প্রথম দু’ঘণ্টায় আমার কাউন্টারে ভিড় ছিল। এখন তো কেউ নেই। তাই বিকেলে এলেও অনেকে হয়ত টিকেট পাবেন। অবশ্য সকালে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চল এবং জামালপুরগামী ট্রেনের টিকেট কাউন্টারে কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। তাও গত চারদিনের মতো নয়। সরকারী কর্মকমিশনের কর্মকর্তা জামালপুরের মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্টেশনে এসেছিলেন সকাল সাতটায়। সকাল দশটার দিকে টিকেট পেয়ে যান তিনিও। জামালপুরের একটি ট্রেনের টিকেটের জন্য নারায়ণগঞ্জের একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা আনিসুর রহমান শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার মধ্যে টিকেট পেয়ে সন্তুষ্ট তিনি। ৯, ১০ তারিখের টিকেটের জন্য ভিড় বেশি থাকে জানা ছিল। এছাড়া অফিস ছুটিরও ব্যাপার আছে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম। অন্যদিনের তুলনায় তাও অনেক কম। রেলওয়ে সূত্র মতে, বহরে থাকা এক হাজার ছয়টি কোচের সঙ্গে আরও ১৪০ কোচ যোগ করা হয়েছে। নিয়মিতভাবে চলাচলকারী ২০২ ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ১৮ ইঞ্জিন। এবার ঈদে সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবেন তারা। ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত উপকূল এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাড়া অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক বিরতি থাকবে না। ঈদের তিন দিন আগ থেকে আগামী ৯, ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর এবং ঈদের পরের সাত দিন আগামী ১৪ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন জোড়া করে বিশেষ ট্রেন চলবে। ঈদ সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা রেল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রেল ভবনে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, সেখান থেকে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। নতুন সাজে চার ট্রেন ॥ ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের চারটি ট্রেন সেজেছে নতুন সাজে। পুরনো কোচের পরিবর্তে এসব ট্রেনে যুক্ত করা হয়েছে নতুন কোচ। শুক্রবার সকাল ছয়টা ৩৫ মিনিটে সিলেটের পারাবাত, সকাল সাড়ে সাতটায় দেওয়ানগঞ্জ রুটের তিস্তা এবং সকাল দশটায় ব্রডগেজ কোচসহ দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেসের চলাচল উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। সেখানে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় দিনাজপুরগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসে ব্রডগেজ কোচ সংযুক্ত করে চালু করা হবে। এছাড়া ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে। রেলমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিএনপি সরকারের আমলে রেলের কোন উন্নয়ন হয়নি। ট্রেনে ইঞ্জিন, কোচসহ কিছুই আমদানি করা হয়নি। রেল ছিল অবহেলিত। বর্তমান সরকারের সময় রেলওয়ের ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, এজন্য ৪৬ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে রেলের ইঞ্জিন সঙ্কট হবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নতুন কিছু ইঞ্জিন কেনার প্রক্রিয়া চলছে। কেনা হলে পুরনো ইঞ্জিনের জায়গায় নতুন ইঞ্জিন যোগ হবে। রেলের বহরে নতুন ৪৬ ইঞ্জিন এসেছে। আরও ৭০ ইঞ্জিন আনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত। এগুলো এলে ইঞ্জিনের কোন সমস্যা থাকবে না। লঞ্চের টিকেট নেই ॥ ঈদ-উল-আযহার অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরুর প্রথম দিনেই ৪১ নৌরুটের সব টিকেটই শেষ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনালে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও কয়েকদিন আগে থেকেই ফোনে টিকেট বিক্রি শুরু করে নৌযান কর্তৃপক্ষ। এ কারণে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরুর প্রথম দিনেই সব টিকেট শেষ হয়ে যায়। শুক্রবার সকালে সদরঘাট টার্মিনালের পশ্চিম পাশে নির্মাণাধীন নতুন ভবনের ৩৫ কাউন্টারই দেখা গেছে জনশূন্য। শুধু তাই নয় কাউন্টারের সামনে লোকজনকে ঘুমিয়ে থাকতেও দেখা যায়। অনেকেই আসেন টিকেটের খোঁজে। বেশিরভাগ মানুষ টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। এছাড়া অনেক যাত্রী অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করতে এসে পড়েছেন বিপাকে। শত শত যাত্রীর ভাষ্য, তারা কেউই জানেন না লঞ্চের অগ্রিম টিকেট শেষ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে অফিসিয়ালি লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও সেটা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। আর এখন সব টিকেট ফোনে ফোনে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কেউ চাইলে তো আমরা না করতে পারি না। এছাড়া আগে যারা যোগাযোগ করেছেন তারা টিকিট পেয়েছেন আর যারা যোগাযোগ করেননি তারা টিকেট পাবেন না। এটাই তো স্বাভাবিক! বিআইডবিউটিএ সদরঘাটের নৌ নিরাপত্তা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন বলেন, গত ঈদ থেকে নৌপথে যাত্রীদের জন্য অগ্রিম টিকেট সার্ভিস চালু করা হয়েছে। লঞ্চে উঠতে যাত্রীদের আগে অবশ্যই টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। তবে অগ্রিম টিকেট কিভাবে একদিনে শেষ হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। সদরঘাট থেকে দিনে নিয়মিত ১৮০ লঞ্চ চলাচল করলেও ঈদের সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণ।
×