ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাগুজে বই পড়ার দিন ফুরিয়ে আসছে- ট্যাব ল্যাপটপে আনন্দ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কাগুজে বই পড়ার দিন ফুরিয়ে আসছে- ট্যাব ল্যাপটপে আনন্দ

সমুদ্র হক ॥ কাগজে ছাপা বই পড়ার দিন ফুরিয়ে আসছে। দ্রুত ধেয়ে আসছে ই- বুক। উন্নত বিশ্বে ই-বুক পাঠকের সংখ্যা জ্যামিতিক হার বাড়ছে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। ইতোমধ্যে জনপ্রিয় লেখকদের ই-বুক বা ডিজিটাল বুক ইন্টারনেটে পৌঁছে গেছে। দেশ-বিদেশের যে কোন স্থানের পাঠক তা পড়তে পারেন ল্যাপটপ, ট্যাব, ই-বুক রিডার, ডিজিটাল বুক রিডারে। এখন যে প্রশ্নটি উঠে এসেছে তা হলো : ই- বুক কি সরিয়ে দিতে পারবে গত কয়েক শতকে মানব হৃদয়ে আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কাগজে ছাপা বইকে! এই একটি প্রশ্ন একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিভক্ত হয়েছেন বিদগ্ধ পাঠকরা। যাদের মধ্যে কিশোর, যুবক, তরুণ থেকে শুরু করে বয়স্ক ও প্রবীণ ব্যক্তি আছেন। আরেকদিকে দেশের সৃজনশীল বই প্রকাশরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছেন। তাদের ভাবনা, ডিজিটাল বইয়ের প্রসারে কী অবস্থা হবে প্রকাশনা শিল্পের। ভাবনা কি শুধু এক বা দুটো! ভাবনা আছে আরও -কপিরাইট বা স্বত্ব সংরক্ষণের বিষয়টির কী হবে! উন্নত বিশ্বে প্রকাশনা সংস্থাগুলো মুদ্রণ ও ডিজিটাল উভয় সংস্করণ কপিরাইট করে নিচ্ছেন। আগামীর বইমেলায় কাগজে ছাপা বই ও ই-বুক দুই-ই রাখতে হবে। কপিরাইট সমস্যার একটা সমাধান হয়েছে। ডিজিটাল বইগুলো বিক্রি হচ্ছে যাদের ই-বুক রিডার, ডিজিটাল বুক রিডার আছে তাদের কাছে। যারা ল্যাপটপ বা ট্যাবে বই পড়বেন বা ডাউনলোড করবেন তাদের ই-পেমেন্ট দিতে হবে ইলেকট্রনিক বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে। আবার ইন্টারনেট লিংকে বা ওয়েবসাইটে মেগাবাইট কেটে নিয়ে পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকবে। এই অবস্থায় ছাপা কাগজের বই বিক্রির মতো নগদ টাকা হয়ত দৃশ্যমান হবে না। প্রেরক ও গ্রাহক দুজন অর্থ দেয়া-নেয়া করবেন ই-কমার্সের পেমেন্টে। ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়ে যাবে। পাঠকদের কী হবে! লেখকদেরই বা কী হবে! বলাবলি হয়, বিবর্তন যতই হোক কাগজের বইয়ের আবেদন ফুরোবে না কোনদিন। যে কাগজের বই পড়েছে সেই জানে এই বই পড়ার মজা কত! শুয়ে, বসে, যাত্রাপথে রয়েসয়ে পড়া যায়। তা ছাড়া নতুন বই কেনার পর প্রচ্ছদ বাঁধাই সবকিছু মিলিয়ে হৃদয়ে একটা আমেজ এনে দেয়। কখনও ইমোশনের পর্যায়েও পড়ে। প্রচ্ছদ দৃষ্টিনন্দন হলে চোখ-মন দুই-ই চলে যায় ওই বইয়ের মধ্যে। যিনি সেই বইয়ের লেখক তার আবেগ, অনুভূতি আরও বেশি। এই বই যেন তার কাছে সন্তানের মতো। মা যেমন তার গর্ভে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সন্তান ধারণ ও লালন করে, লেখক তেমনই হৃদয়ে কত ভাবনা ধারণ করে লিখে তার বিন্যাস ঘটিয়ে প্রকাশ করে পাঠকের সামনে আনেন। ছাপা বইয়ের স্বাদ-গন্ধই আলাদা। যা বইপ্রেমীদের মোহিত করে। ছাপা বইয়ের এমনও পাঠক আছেন যারা ‘কিট্স অব দ্য বুক’ বা বইয়ের পোকা। নতুন বই হাতে পড়লে শেষ না করা পর্যন্ত ওঠেন না। এ যেন পড়ুয়ার উন্মাদনা। ই-বুক কি সেই ইমেজ-ইমোশন আনতে পারেব! প্রজন্মের কথা: ই-বুকে খরচ বেশি নেই। কয়েক হাজার ই-বুক ছোট্ট ডিভাইসে সংরক্ষণ করা যায়। কাগজের বইয়ের চেয়ে বহুগুণ হালকা। সকল ধরনের পাঠক, ভ্রমণকারী, পর্যটক অনেক বই, ল্যাপটপ, ট্যাবে ই- বুক রিডারে, ডিজিটাল বুক রিডারে ভরিয়ে নিয়ে কাছেই রাখতে পারে। মনিটরে ই-বুক ওপেন করার পর একাধিক প্রচ্ছদ ‘আই পিসিং’ হয়ে মন ভরে দেয়। আগামীতে ই-বুক পড়তে কম্পিউটার যে থাকতইে হবে সে বাধ্যকতা থাকছে না। স্মার্ট ডিজিটাইল বুক রিডার (ডিবিআর) সেই কাজ করে দেবে। বছর কয়েক আগে পোর্টেবল ডকুমেন্ট ফর্মেটে (পিডিএফ) ই-বুক সংরক্ষিত থাকত বর্তমানে তা আরও উন্নত। পিডিএফের অসুবিধা এক সঙ্গে একটির বেশি পাতা পড়া যায় না। ছবি প্রকাশের তেমন সুবিধা নেই। বর্তমানে প্রযুক্তি পিডিএফের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে (এবং দিনে দিনে আরও উন্নত হচ্ছে)। ছাপা কাগজের বইয়ের মতো দুইয়ের বেশি পাতা মেলে ধরে পড়া যায়। প্রচ্ছদসহ সব পৃষ্ঠা এমনভাবে দেয়া থাকে মনে হবে কাগজে বাঁধাই করা বই যেন মনিটরে উঠে এসেছে। ই-বুকের দ্রুত প্রসারে বিশ্বের প্রকাশকরা বুঝতে পেরেছেন আগামীতে বইকে ইলেকট্রনিক বা ডিজটালে পরিবর্তন ছাড়া কোন গতি নেই। গত শতকের ১৯৩০ সালে বব ব্রাউন কল্পনায় ই-বুক রিডারের যে ধারণা দেন তা-ই আজ বাস্তব। আরেক কল্প বিজ্ঞানী আইজ্যাক আসিমভ এক লেখায় বলেছেন, একবিংশ শতকের মধ্যভাগেই কাগজের বই থাকবে না। প্রকাশনা চলে যাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে। বর্তমানে দেশের সংবাদপত্র অনলাইন ও ই-পেপারে পৌঁছে গেছে। মনিটরে ছাপা পত্রিকার মতোই ই-পেপার পড়া যায়। দ্রুত ই-বুক আপলোড হয়ে ওয়েবসাইটে যাচ্ছে। এক সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্তত দুই কোটি বই ডিজটালে রূপান্তরিত হয়েছে। এই সংখ্যা নিত্যদিন বাড়ছে। বাংলাদেশে ই-প্রযুক্তি যেভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তাতে সেদিন বেশি দূরে নেই - বইমেলায় ছাপা বইয়ের সঙ্গে ডিজিটাল বইগুলোও বিক্রি হবে। পাঠক ও লেখকরা তাদের ছাপা বই ও ই-বুক দুয়েরই স্বাদ পাবে। প্রযুক্তি ও ছাপা কাগজের মেলবন্ধনে যার যা পছন্দ তাই বেছে নেবে। এদিকে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা ই-বুককে স্বাগত জানিয়েছে। ই-বুকে কাগজের ওপর চাপ কমবে। পত্রিকাসহ নানা ধরনের মুদ্রণের জন্য প্রতিদিন বিশ্বে সাত কোটি টন মন্ডের দরকার হয়। এ জন্য বনভূমি উজার হয় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর। এই পরিমাণ বনভূমি তৈরিতে সময় নেয় ২৫ বছর। ই-বুক অনেক বনভূমি রক্ষা করবে।
×