ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নবেম্বরের মাঝামাঝি ঢাকায় সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন

জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচারে আসছেন মক্কা-মদিনার দুই প্রধান ইমাম

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচারে আসছেন মক্কা-মদিনার দুই প্রধান ইমাম

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচারের অংশ হিসেবে ঢাকায় আসছেন পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরীফের ইমাম। আগামী নবেম্বরের মাঝামাঝি ঢাকায় জঙ্গীবাদবিরোধী সমাবেশে তারা বক্তব্য রাখবেন। এই দুই ইমামকে ঢাকায় আনার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যেই এই দুই প্রধান ইমাম ঢাকায় আসার জন্য প্রাথমিক সম্মতিও প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পরে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচারে জোর দিয়েছে সরকার। দেশের আলেম-ওলামাদেরকেও জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচারে যুক্ত করেছে সরকার। তবে মক্কা ও মদিনার প্রধান দুই ইমাম ঢাকায় এসে জঙ্গীবাদবিরোধী বক্তব্য প্রদান করলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে সরকার। সে কারণে দুই ইমামকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারাম শরীফের ইমাম ড. শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসি ও মদিনার মসজিদে নববীর ইমাম আবদুর রহমান আল হুতাইফিকে ঢাকায় আনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচারের অংশ হিসেবে মক্কা ও মদিনার প্রধান দুই ইমামকে বাংলাদেশে আনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে দুই ইমামকে আনার জন্য কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আগামী নবেম্বর মাসে তারা যেন বাংলাদেশে আসতে পারেন, সে জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হবে। পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারাম শরীফ ও মসজিদে নববী সৌদি আরব সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত। সে কারণে তাদেরকে ঢাকায় আনতে হলে সৌদি সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। সৌদি সরকারের অনুমোদন ছাড়া তাদেরকে ঢাকায় আনা সম্ভব হবে না। সে কারণে সৌদি সরকারের অনুমোদনের প্রচেষ্টা চলছে। একটি সূত্র জানায়, এই দুই মসজিদে প্রধান ইমাম ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত ইমাম রয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধান দুই ইমামকে আনার চেষ্টা চলছে। তবে কোন কারণে সেটা সম্ভব না হলে বিকল্প হিসেবে অতিরিক্ত ইমামদের আনা হবে। অবশ্য ঢাকা থেকে ওই দুই মসজিদের প্রধান ইমামের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা ঢাকায় আসার জন্য প্রাথমিক সম্মতিও জানিয়েছেন। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে আনার চেষ্টা চলছে। সূত্র জানায়, মক্কা ও মদিনার মসজিদের দুই ইমামকে বাংলাদেশে আনা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। কেননা এই দুই ইমাম বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করে থাকেন। এর মধ্যে পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারাম শরীফের ইমাম ড. শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসি বেশ কয়েক বার বাংলাদেশে এসেছেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ইসলামী সম্মেলনেও আস সুদাইসি অংশ নিয়েছেন। এছাড়া সম্প্রতি ভারতেও একাধিক ইসলামী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন আবদুর রহমান আস সুদাইসি। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে এখন জনসচেতনতা বাড়াতে চায় সরকার। বিশেষ করে জঙ্গীবাদ যে ইসলামবিরোধী একটি কাজ, এর সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কোন সম্পৃক্ততা নেই। জঙ্গীবাদের সঙ্গে যেন কোনভাবেই কেউ সম্পৃক্ত না হন, সে জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মক্কা ও মদিনা শরীফের দুই ইমামকে ঢাকায় এনে জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচার করালে সমাজে প্রভাব পড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচারে দেশের ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম সমাজকেও সম্পৃক্ত করার জন্য সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে এক লাখ এক হাজার ৭৫০ ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম এবং মুফতির ফতোয়া প্রকাশ করা হয়েছে। এই ফতোয়ায় নয় হাজার ২০ জন নারী আলেমও স্বাক্ষর করেছেন। শুধু তাই নয়, মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক থেকে শুরু করে হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন শীর্ষ নেতাও এই ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন। ফতোয়ায় জঙ্গীবাদ, আত্মঘাতী হামলা এবং ইসলামের নামে মানুষ হত্যাকে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। জঙ্গীবাদ মোকাবেলার কৌশলের অংশ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই ঢাকায় একটি সর্বধর্মীয় সম্মেলন হয়েছে। সেখানে ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ধর্মীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধর্মীয় নেতাদের অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের মধ্যে এমন ধারণা ছড়িয়ে দেন যে, কোন ধর্মেই জঙ্গীবাদের স্থান নেই।
×