ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতারে অভিযান চলছে ॥ ডিএমপি কর্মকর্তা

গুলশান হামলায় গ্রেনেড দিয়েছিল সোহেল, রেকি করে মারজান

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গুলশান হামলায় গ্রেনেড দিয়েছিল সোহেল, রেকি করে মারজান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তুরাঁ ও বেকারিতে জঙ্গী হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল জঙ্গী সোহেল মাহফুজ। সোহেল মাহফুজ জেএমবির অন্যতম নেতা। আর হামলার টার্গেট হিসেবে আর্টিজানকে বেছে নিয়ে রেকি করেছিল পলাতক জঙ্গী মারজান। এ দুজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। শুক্রবার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, সোহেল মাহফুজ আর্টিজানে জঙ্গী হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। সোহেল মাহফুজ একই সঙ্গে জেএমবির পুরনো ও নতুন ধারার সঙ্গে জড়িত। নতুন জেএমবির সঙ্গে সোহেল মাহফুজের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন শূরা সদস্য সোহেল মাহফুজ। ২০১০ সালে জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর সোহেল মাহফুজ নিজেকে আমির হিসেবে ঘোষণা করে। কারাগারে থেকেও মাওলানা সাইদুর রহমান আমিরের পদ ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধের জের ধরেই জেএমবি ভাগ হয়ে যায়। পরে সোহেল মাহফুজ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে আত্মগোপনে থেকে জেএমবির নতুন একটি গ্রুপ তৈরি করার চেষ্টা করে। সোহেল মাহফুজ বোমা তৈরিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বোমা তৈরি করতে গিয়ে তার বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সে এক হাত দিয়েই আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পারে। তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। সে গুলশান হামলার অপারেশনাল কমান্ডার পলাতক নুরুল ইসলাম মারজানের নিকটাত্মীয়। ছাত্রজীবনে সোহেল মাহফুজ ছাত্র শিবিরের সদস্য ছিল। জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা শায়খ আব্দুর রহমানের হাত ধরে সে জেএমবিতে যোগ দেয়। সূত্র বলছে, সোহেল মাহফুজ দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে থাকলেও বছর দুয়েক আগে দেশে ফিরে নতুন ধারার জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। এরপর থেকে নব্য ধারার জেএমবির অস্ত্র ও বোমা-গ্রেনেড সরবরাহ ও তৈরির মূল ভূমিকা পালন করে আসছিল সে। নব্য জেএমবির সামরিক শাখার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীর ডান হাত হিসেবে পরিচিত নুরুল ইসলাম মারজান। গুলশান হামলার আগে বড় ধরনের একটি হামলার জন্য জঙ্গীরা গুলশানের একাধিক রেস্টুরেন্ট ও একটি পাঁচ তারকা হোটেলে হামলার টার্গেট করেছিল। গত ১২ আগস্ট মারজানকে গুলশান হামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত জঙ্গী হিসেবে উল্লেখ করে ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দিতে আহ্বান জানানো হয়। এরপর মারজানের পুরো পরিচয় বেরিয়ে আসে। তার গ্রামের বাড়ি পাবনার সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়ায়। পিতার নাম নিজাম উদ্দিন। মা সালমা খাতুন। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হামলার জন্য হলি আর্টিজানকে টার্গেট করে পলাতক জঙ্গী মারজান। এরপর কয়েক দফায় রেকিও করে সে। আর্টিজানে যাতায়াতকারী বিদেশীদের সংখ্যা সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছিল মারজান। তার দেয়া তথ্য মোতাবেক আর্টিজানে হামলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছিল গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী। প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গীরা। হামলায় বনানী থানার ওসি সালাহ উদ্দিন খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ছাড়াও ১৭ বিদেশী ও তিন বাংলাদেশী নিহত হন। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এ পাঁচ জঙ্গীসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়। কমান্ডোরা জীবিত উদ্ধার করেন তিন বিদেশীসহ ১৩ জিম্মিকে।
×