ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর কাউন্সিল সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু

জঙ্গী ইস্যুর বন্ধুর পথ পেরিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যস্ত কাউন্সিলে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জঙ্গী ইস্যুর বন্ধুর পথ পেরিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যস্ত কাউন্সিলে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গুলশান-শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার ঘটনার পর প্রায় দুটি মাস বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। এই দু’মাস সংগঠনের দিকে নজরই দিতে পারেনি দলটি। কঠোরহস্তে জঙ্গী দমন এবং জঙ্গীবাদবিরোধী দেশব্যাপী ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির পর এখন অনেকটাই নির্ভার ক্ষমতাসীন দলটি। তাই এবার জাতীয় কাউন্সিল শেষ করার দিকেই মনোযোগী দলটি। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনে নতুন করে প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয়েছে দলটিতে। গত ১০ ও ১১ জুলাই এ সম্মেলন করার কথা ছিল। সেভাবেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের সরকারী বন্ধের মাত্র দুদিন পর এ সম্মেলন অনুষ্ঠান ঘিরে দেখা দিয়েছিল শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের তারিখ তৃতীয়বারের মতো পিছিয়ে ২২ ও ২৩ অক্টোবর নির্ধারিত হয়। এ কারণে থমকেও যায় প্রস্তুতিপর্ব। কিন্তু গত পহেলা জুলাই গুলশানে বর্বরোচিত জঙ্গী হামলার ঘটনার পর সবকিছুই ওলোটপালোট হয়ে যায়। এই ভয়াবহ জঙ্গী হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় আরেকটি জঙ্গী হামলার ঘটনায় দেশের পরিস্থিতিই পাল্টে যায়। সম্মেলনের প্রস্তুতির বদলে পুরো জুলাই-আগস্ট এই দু’মাসই জঙ্গীবাদবিরোধী সভা-সমাবেশ, জনসচেতনতা সৃষ্টি, সারাদেশে জঙ্গীবাদবিরোধী কমিটি গঠনেই ব্যস্ত থাকতে হয় আওয়ামী লীগকে। ফলে এই দুই মাসে সাংগঠনিক কোন কর্মকা-ই করতে পারেনি দলটি। শোকের মাসব্যাপী কর্মসূচীতেও ঘুরেফিরেই আসে জঙ্গীবাদ ইস্যুটিই। সাংগঠনিক কর্মকা-ের বদলে শোকের মাসেও দলটির নেতাদের ব্যস্ত থাকতে হয়েছে দেশব্যাপী জঙ্গীবাদবিরোধী জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজেই। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের। পুরো বিশ্বই জঙ্গীবাদ ইস্যুতে সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই শঙ্কা কাটিয়ে কিছুটা হলেও এখন নির্ভার ক্ষমতাসীন দলটি। দেশের পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এখন দলকে চাঙ্গা করে তুলতে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের দিকেই মনোযোগী হয়েছে দলটির হাইকমান্ড। আর কোনভাবেই কাউন্সিলের তারিখ পেছানো হবে না বলে ইতোমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই ২২ ও ২৩ অক্টোবর দলের কাউন্সিল সফলভাবে অনুষ্ঠানেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের। জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর দলের যৌথসভা ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওদিন সন্ধ্যা সাতটায় তার সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক-সদস্যসচিবদের নিয়ে যৌথসভা করবেন তিনি। জানা গেছে, এই বৈঠকেই ২০তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনের আগেই জেলা কমিটির সম্মেলন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের টার্গেট ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু গুলশানের ঘটনায় গত দু’মাস এদিকে নজরই দিতে পারেননি দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্মেলন সামনে রেখে দলটির সকল সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্মেলন শেষ হলেও ৭৫ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এ নিয়ে দলটির হাইকমান্ড অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দেয়ার জন্য জেলা-মহানগর নেতাদের নির্দেশও দেয়া হয়েছে। সাত বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে তা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুনরায় জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু হওয়ায় ফের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে দলটিতে। আশায়-আতঙ্কে দিন কাটছে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের। একটি অংশ দিন গুনছেন পদোন্নতির আশায়, আরেকটি অংশ আতঙ্কে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ার। ছাত্রলীগের সাবেক একঝাঁক তরুণ নেতা প্রত্যাশায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়ার। অন্যদিকে ছাত্রলীগ-মহিলা লীগ-যুব মহিলা লীগের সাবেক ও বর্তমান অসংখ্য নেত্রীও কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেতে নতুন করে তদ্বির-ধর্ণা দিচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারক নেতাদের কাছে। কেমন নেতৃত্ব আসবে আসন্ন সম্মেলনে ॥ এ নিয়ে দলটির সব পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে চলছে জোর গুঞ্জন, আলোচনা। নীতিনির্ধারক নেতাদের মতে, এবারের সম্মেলনের মূল ‘স্পিরিট’ থাকবে আগামী ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন। তাই এ সম্মেলনকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন তারা। ফলে এ সম্মেলনে নেতা বানানোর প্রক্রিয়া এবার একটু ভিন্ন ভাবেই হবে। এখানে সততা, মেধা, যোগ্যতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতাকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। নীতিনির্ধারণী নেতাদের মতে, সেক্ষেত্রে বর্তমান কমিটির নেতারাই প্রাধান্য পাবেন বেশি। কারণ তারা অভিজ্ঞতার দিক থেকে এগিয়ে। তবে কিছু নতুন মুখও থাকবে নতুন এই কমিটিতে। কমিটিতে বড় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও বর্তমান কমিটিতে থাকা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা বাদ পড়ার যেমন সম্ভাবনা ক্ষীণ তেমনি একঝাঁক তরুণ নেতৃত্ব আসবেন এমন সম্ভাবনাও কম। কমিটিতে রয়েছেন এমন নেতারাই ঘুরেফিরে বেশি থাকবেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। তবে কোন কোন নেতার পদের রদবদল হবে। কারও পদোন্নতি হবে, কারও ‘ডিমোশন’ হবে। আর সাংগঠনিক ব্যর্থতায় বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েক নেতা যে বাদ পড়ছেন, তা অনেকটাই নিশ্চিত করেছেন তারা। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এবারের জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কলেবর বাড়ানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতিম-লীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক নেতার সংখ্যা বাড়বে। বর্তমান ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সংখ্যা বাড়িয়ে তা ৮০ কিংবা ৮২ করা হতে পারে। এ ব্যাপারে গঠনতন্ত্র উপপরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়তে পারে। কয়েকটা নতুন বিভাগ হয়েছে। যেহেতু দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বিভাগে একজন করে সাংগঠনিক সম্পাদক থাকবে, সেক্ষেত্রে এই পদের সংখ্যা বাড়বে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিম-লীর সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হতে পারে।
×