ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তলিয়ে গেছে এক হাজার হেক্টর জমির আমন

খাল দখল করে মাছের ঘের

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

খাল দখল করে মাছের ঘের

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ কেশবপুরে খালের মুখ দখল করে নেয়ায় জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে সাত গ্রামের মানুষ। কপোতাক্ষ নদের এই খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করেছেন ঘের মালিক। ফলে টানাবর্ষণের পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় তলিয়ে গেছে অন্তত এক হাজার হেক্টর জমির আমন ধান। পানি ঢুকেছে তিন শতাধিক বাড়িতে। খাল দখলের এ ঘটনাটি ঘটেছে কেশবপুর উপজেলার বিল বোয়ালিয়ায়। আর এই দখলের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার রঘুরামপুর, ঘোপসেনা, বাঁশবাড়িয়া, সোহরাবপুর, মির্জানগর, গোপালপুর ও বরণডালি এই সাত গ্রামের মানুষ। দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরতে ঘোপসেনা গ্রামের বৃদ্ধা সফলজান বেগম বলেন, ‘ঘরবাড়ি সব বুইড়ে (ডুবে) গেছে, এহন তো মরলিও কবর দিয়ার জাইগা নেই। লাশ ভাসায়ে দিতি অবেনে।’ সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ওজিয়ার রহমান জানালেন, কপোতাক্ষের খালের মুখে দখল করে ঘের নির্মাণ করায় ফি বছরই তারা জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন। ফসলের ক্ষেত ভেসে যাচ্ছে, বাড়িতে পানি উঠছে। তাদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। অথচ যদি খালের মুখটি ছেড়ে মাছের ঘের করা হতো, তাহলে এ জলাবদ্ধতার পানি নেমে যেত; দুর্ভোগও থাকত না। সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেশবপুর উপজেলার ত্রিমোহিনী ও সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের বিল বোয়ালিয়ায় প্রায় পাঁচ শ’ একর জমি নিয়ে কয়েক বছর আগে একটি মাছের ঘের করা হয়। এরপর গত বছর আরও পাঁচ শ’ একর জমি নিয়ে আরেকটি মাছের ঘের করা হয়েছে। উপজেলার বরণডালি ও মির্জানগর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদের খালের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এই বিলের। ঘেরের মধ্যেই পড়েছে এ খালের সংযোগমুখ। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি স্লুইস গেট রয়েছে। এই গেটের সামনেই ঘের মালিকরা আরও একটি স্লুইস গেট করে বিল এবং বিলসংলগ্ন এলাকার পানি নিষ্কাশন পুরো বন্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গত দুই-তিন মাস এ মাছের ঘেরের চারটি ডিপটিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) দিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পানি উঠানো হয়েছে। ফলে ঘের ও বিল এলাকায় পানিতে ভরে গেছে। কিন্তু এরপরই টানাবর্ষণ ওই সাত গ্রামের মানুষের ললাটে লিখে দিয়েছে দুর্ভোগ। খালের মুখ বন্ধ থাকায় অব্যাহত বৃষ্টির এই পানি বিল উপচে ফসলের ক্ষেত তলিয়ে ঢুকে পড়েছে বাড়ি-ঘরে। বিল বোয়ালিয়ার ওই ঘেরের বাইরে অন্তত এক হাজার একর জমি এখন ওই ঘের উপচানো পানির নিচে। রঘুরামপুর গ্রামের শামসুর রহমান অভিযোগ করেন, বিল বোয়ালিয়ায় গায়ের জোরে ঘের করা হয়েছে। ঘেরের মধ্যে তাদের ২০ বিঘা জমি রয়েছে। চারপাশের জমি ঘের মালিক নিয়ে নেয়ায় তাদের জমিও ঘেরের মধ্যে চলে গেছে। ঘেরের জন্য তারা কোন টাকা নেননি, কিন্তু তাদের জমিও ঘেরের পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘেরের বাইরেও দশ বিঘা জমির আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। রঘুরামপুর গ্রামের মামুন হোসেন জানালেন, ঘেরের পানি এখন তাদের উঠানে। আরেকটু বৃষ্টি হলেই পানি ঘরে ঢুকে পড়বে। সোহরাপুর গ্রামের শামসুদ্দিন সরদার জানান, তার ৩ বিঘা আমনের ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাড়ির উঠোন ছুঁই ছুঁই করছে। পানি ঢুকে গেছে রঘুরামপুর গ্রামের নূর আলী খাঁর বাড়িতে। তিনি জানালেন, প্রায় এক মাস ধরে তারা এ দুর্ভোগের মধ্যে আছেন। আগেই ডুবে গেছে পাঁচ বিঘা আমনের ক্ষেত। পরে বাড়িতেও পানি ঢুকেছে।
×