ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে আবাসন ব্যবসায় চলছে মন্দা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যশোরে আবাসন ব্যবসায় চলছে মন্দা

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়ায় যশোরে আবাসন ব্যবসায় চলছে মন্দা। এতে চরম সঙ্কটে পড়েছেন যশোরের আবাসন ব্যবসায়ীরা। অধিক মুনাফার আশায় সম্ভাবনাময় এ খাতে বিনিয়োগ করে এখন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। ব্যবসায়ীরা জানান, সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে ফ্ল্যাট বিক্রি হয় যশোরে। তারপরও এ জেলায় ফ্ল্যাট কেনার তেমন ক্রেতা নেই, যা হতাশাজনক। ২০১০ সালে যশোরে প্রথম আবাসন ব্যবসা শুরু করা এসএইচ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম রফিকুল ইসলাম হিরক জানান, বর্তমানে এ ব্যবসায় মন্দা চলছে। এটা কাটিয়ে উঠতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। একটি বিল্ডিং থেকে সরকার ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। তিনি জানান, যশোরে আবাসন ব্যবসায় মন্দা কাটিয়ে উঠতে অবাধ ব্যাংক ঋণ সুবিধা দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া রাজধানী ঢাকা থেকে জেলা শহরের ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি খরচ কম করাও জরুরী। তিনি জানান, যশোরের বিভিন্ন অঞ্চলে এসএইচ বিল্ডার্সের আওতায় ১১টি প্রজেক্টে ফ্ল্যাট ১শ’ ৫০টি। কিন্তু মাত্র ৬২টি বুকিং হয়েছে। এসব প্রজেক্টে ৫২ কোটি টাকা ইনভেস্ট করা হয়েছে। সম্ভাবনা থাকলেও ব্যবসা নিয়ে বর্তমানে উদ্বিগ্ন রয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কাগজপত্র ও অবকাঠামো পর্যাপ্ত থাকলেও যশোর ওজোপাডিকো বিদ্যুত লাইন দিতে গড়িমসি করে। যার ফলে হতাশার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এ ব্যবসায় যশোরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫টি প্রজেক্ট আছে। এসব প্রজেক্টে প্রায় সাড়ে তিন শ’ ফ্ল্যাট রয়েছে; যার ৪০ ভাগও বুকিং হয়নি। এটা সত্যিই হতাশাজনক। তিনি হাউস লোন সহজ করার দাবি জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরে এসএইচ বিল্ডার্সের মতো ড্রিমস প্রপার্টি লিমিটেড, সালওয়া বিল্ডার্স এ্যান্ড প্রপার্টি লিমিটেড, আপন আবাসন, সেভকন বিল্ডার্স লিমিটেড, ইউনিভার্সাল লিমিটেড, নদী বাংলাসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এসব আবাসন ব্যবসায়ী শহরের বিভিন্ন স্থানে জমি কিনে বিল্ডিং নির্মাণ করে আবাসন ব্যবসা শুরু করেন। তবে তাদের অধিকাংশ ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়ায় অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন করে আর কোন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অনেকেই। আবাসন ব্যবসার কিছু সমস্যা তুলে ধরে ব্যবসায়ীরা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আবাসন ব্যবসায় ঋণ মাত্র ৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। এটা কমানো প্রয়োজন। এছাড়া ‘সহজ শর্তে’ বা স্বল্প সুদে ঋণ না পাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা বিনিয়োগ করতে পারছেন না। ব্যাংক এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে। তারা বলেন, এ খাতে ঋণ দিলে ব্যাংকের ঝুঁকি একেবারেই থাকে না। কারণ এক্ষেত্রে গ্রাহক ব্যর্থ হলে বন্ধক রাখা ফ্ল্যাট বা প্লট বিক্রি করে ঋণের টাকা আদায় করা সম্ভব।’ এছাড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ শ্রেণীকরণ (খেলাপি) না করা ও সেকেন্ডারি বাজার সৃষ্টি করার প্রয়োজন। তাহলেই এ ব্যবসায় মন্দা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সালওয়া বিল্ডার্স এ্যান্ড প্রপার্টি লিমিটেডের পরিচালক কামাল উদ্দীন আহমেদ জানান, আমাদের এ প্রকল্পে ৯ লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকায় দুই বেড রুমের ফ্ল্যাট এবং ১৮ লাখ টাকা থেকে ২২ লাখ টাকায় ৩ বেড রুমের ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। তিনি জানান, নির্মাণ করা সাতটি ভবনের মধ্যে পোস্ট অফিসপাড়ার সালওয়া চাঁন্দা ভিলা, এইচএমএম রোডের সালওয়া জেএস ভিলা, এইচএমএম রোডের সালওয়া সুরাতন মঞ্জিলের সব ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেলেও তেঁতুলতলা আরবিকে রোডের সালওয়া ফরিদা কটেজের ১৭টি ফ্ল্যাটের মধ্যে মাত্র ৪টি ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন গ্রাহকরা। শাহ আব্দুল করিম রোড এলাকার সালওয়া মাজেদা নীড়ের লিফটসহ সাততলা ভবনের ১৩টি ফ্ল্যাটের মাত্র ২টি ফ্ল্যাট বুকিং বাকি থাকলেও ৪ তলা পর্যন্ত ঢালাই হয়েছে। শাহ আব্দুল করিম রোড এলাকার সালওয়া রহমান টাওয়ারের লিফটসহ সাততলা ভবনের ১২টি ফ্ল্যাটের মাত্র ২টি ফ্ল্যাট বুকিং বাকি থাকলেও ৫ তলা পর্যন্ত ঢালাই হয়েছে। হরিণাথ দত্ত লেন ইসলামিয়া স্কুলের সামনে সালওয়া তানিম টাওয়ারের লিফটসহ সাততলা ভবনের ১৩টি ফ্ল্যাটের মাত্র ৭টি ফ্ল্যাট বুকিং বাকি রয়েছে। এ ভবনের মাত্র ২ তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে। তিনি জানান, এককালীন ও সহজ কিস্তিতে বুকিংয়ের ঘোষণা দিলেও ফ্ল্যাট ক্রয়ে গ্রাহকের খুব বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
×