ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভাল কোন মানুষ ওসমানী উদ্যানে বেড়াতে যান না

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ভাল কোন মানুষ ওসমানী উদ্যানে বেড়াতে যান না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা কারণে ‘স্বাভাবিকতা’ হারাচ্ছে রাজধানীর ওসমানী উদ্যান। হকার, ভিক্ষুক ও ক্ষুদ্র-ব্যবসায়ীদের উৎপাত তো দিনভর থাকেই; রাতে নিয়মিত উরসও হয় সেখানে। এমনকি উদ্যানের একটি অংশ দখল করে চলছে পশুপালনও। অভিযোগ আছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁদা দিয়ে এসব কর্মকা- চলে সেখানে। কর্তৃপক্ষ বলছে, উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েও কোন লাভ হয় না। অভিযানের পরের দিনই আগের চিত্র ধারণ করে উদ্যানটি। উদ্যানের গোলাপশাহ মসজিদ সংলগ্ন গেটে টং দোকান নিয়ে চা-সিগারেট বিক্রি করেন মিজান। তিনি বলেন, ‘আগে দোকান ছিল গুলিস্তানের ফুটপাথে। সেখানে ঘন ঘন উচ্ছেদ অভিযান চলায় ওসমানী উদ্যানে স্থায়ী হয়ে গেছি। আরও যেসব হকার ও দোকান দেখছেন তারাও আমার মতো ফুটপাথ থেকে এসেছে।’ স্থানীয় নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে দোকান চালাচ্ছেন বলেও জানান মিজান। মিজানের দোকানের পেছনে একটি গণশৌচাগার (পাবলিক টয়লেট) ছিল। গত বছর সেটা ভেঙ্গে নতুন করে শৌচাগার নির্মাণের কাজ শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক ঠিকাদার। কিন্তু একতলা ভবনটির কাজ আজও শেষ হয়নি। ঠিকাদার বর্তমানে নির্মাণাধীন শৌচাগারটি টিন দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। সন্ধ্যার পর ওই বেড়ার ভেতর অসামাজিক কার্যকলাপ চলে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েক হকার। গোলাপশাহ মাজারের পেছনে উদ্যানের ভেতর প্রতি বৃহস্পতিবার উরস হয়। এ জন্য স্থায়ী চুলা বানিয়ে সেগুলোর ওপর বড় বড় ডেক বসানো হয়েছে। তোলা হয়েছে ছাউনি। উদ্যানের পূর্ব-সীমানা ঘেঁষে যে লেক আছে, সেটির অবস্থাও ভাল নয়। লেকের পূর্বপাশে হাঁটার রাস্তার পাশে একটি খালি জায়গায় ছাউনি তুলেছেন বহিরাগতরা। এর পাশে লেকের পারে বানানো হয়েছে আরেকটি ঘর। ওই ঘরে হাঁস পালন করা হয়। ছাগল পালনের ঘরও তোলা হয়েছে সেখানে। উদ্যানের দক্ষিণ দিকে সীমানা দেয়াল ঘেঁষে দোকান খুলে বসেছে অন্তত ছয় হকার। গোলাম হোসেন নামে এক দোকানকর্মী বলেন, ‘গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়ার কোন ফুটপাথেই জায়গা পাওয়া যায় না। জায়গা পেলেও লাইনম্যানরা টাকা বেশি নেয়। তাই, বাধ্য হয়ে আমার মহাজন এখানে চলে এসেছে।’ উদ্যানে ব্যবসা করতে দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে জানান তিনি। তবে কারা এই চ৭াদা নেয়, তা তিনি বলতে রাজি হননি। উদ্যানের ভেতরে প্রকাশ্যে মাদকসেবনও চলে। দলে দলে ভাগ হয়ে বিছানা পেতে তারা মাদক সেবন করছে। রমনা ভবনের ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম বলেন, ‘এই দুরবস্থার কারণে ভাল কোন মানুষ এই উদ্যানে বেড়াতে আসে বলে মনে হয় না। আমরা তো যাই-ই না।’ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ বলেন, ‘এ পর্যন্ত অনেকবার উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে ওসমানী উদ্যানে। কিন্তু সমস্যা হলো, অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই তারা যথাস্থানে ফিরে আসেন।’ রাজধানীর নতুন ও পুরান অংশের সংযোগস্থল ফুলবাড়িয়ার ফনিক্স রোড এবং সচিবালয়ের সামনে আবদুল গনি রোডের মাঝখানে দেয়াল ঘেরা ওসমানী উদ্যান। এর আয়তন প্রায় ২৩ একর। এর দক্ষিণে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগরভবন, পশ্চিমে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, উত্তরে সচিবালয় এবং পূর্বদিকে গুলিস্তান।
×