ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

কেরির সফর ॥ হতাশ খালেদা-ফখরুলরা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কেরির সফর ॥ হতাশ খালেদা-ফখরুলরা

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (Secretary of state) জন কেরির বাংলাদেশ সফরে কার জিত, কার হার- এ নিয়ে গত ক’দিন বেশ জমকালো আড্ডা-আলোচনা চলছিল। এই সফর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অধোগমন না-কি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গত ৮ বছরের অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রতিফলন। যার ফলে কেরি বাবুদের বাংলাদেশে আসতে হলো, যাদের পূর্বসূরি হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিল- The Emergence of Bangladesh is my personal defeat. এখানেই ভদ্রলোক থেমে থাকেননি, বলেছেন ‘Bangladesh is a bottomless basket.’ কত কথা, কথা আড্ডা-আলোচনা! ‘কেরি সাহেব আসছেন আলবদর কমান্ডার জামায়াতের (শিবির-জঙ্গী) ধনকুবের খাজাঞ্চি মীর কাশেম আলীর ফাঁসির দ- মওকুফ করতে, কেরি সাহেব আসছেন রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র অঙ্কুরেই ঠেকা দিতে, আসছেন খালেদা জিয়ার গণতন্ত্র উদ্ধার করতে, তাকে সিংহাসনে বসাতে। এসবকে আমি পাগলের প্রলাপ বলি। প্রথমত. জন কেরি ঢাকায় অবতরণ করে প্রথমেই ধানম-ির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন জাদুঘরে গিয়ে বাংলাদেশের জাতিরাষ্ট্রের পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের নীতি জানান দিলেন। সর্বোপরি Visitors diary-তে বঙ্গবন্ধুকে সাহসী বিশ্বমাপের নেতা হিসেবে অভিহিত করে লিখেছেন- তাঁকে হত্যা একটি ‘কাপুরুষোচিত’ কাজ। কিন্তু তারপরও তাঁরই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্দেশিত পথেই বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।Message is clear. অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, তার সরকারের তাবত কার্যক্রম, এমনকি যুদ্ধাপরাধের বিচার সবকিছু সমর্থন করছেন কেরি। শেখ হাসিনার দাবির প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরও ফেরত পাঠাতে সম্মত। খালেদার গণতন্ত্রও পানি পেল না, সিংহাসন জায়গা মতো স্থাপন করা হলো না। এখন বসতে গেলে চিতপটাং হবার সম্ভাবনা বেশি। দ্বিতীয়ত. রামপাল তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের ব্যাপারটি সকল expert opinion নিয়ে করা হচ্ছে। এতে বিদ্যুত কেন্দ্র হলে ১৩২০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুত যেমন national greedএ যোগ হবে, তেমনি সবকিছুই করা হচ্ছে আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য সুন্দরবন ও সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে। খালেদা জিয়া ভেবেছিলেন এটি একটি জনপ্রিয় মোক্ষম ইস্যু, জনগণ রাস্তায় নেমে পড়বে, আন্দোলন হবে, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু তো ছেলে-ছোকরা! এক ধমকেই থুক্কু দেবে। কিন্তু না, নসরুল হামিদ বিপুরা ইয়ং এনার্জেটিক, তার ওপর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী গর্বিত বাবার গর্বিত সন্তান। মেধাবী, উচ্চ শিক্ষিত, সফল ব্যবসায়ী (অবশ্য উত্তরাধিকার সূত্রে), কোন হাওয়া ভবন-খোয়ার ভবনের ক্ষমতার দাপটি কমিশন ব্যবসায়ী স্বশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত কেউ নন। বিপুদের চোখ রাঙ্গিয়ে কোন লাভ নেই। ওরা জাতির পিতার আদর্শ লালন করে, ওরা বর্তমান বিশ্বের ২/৪ সাহসী সফল রাষ্ট্রনেতার অন্যতম শেখ হাসিনার কর্মী। অবশ্য প্রথমেই খালেদা জিয়া ধাক্কা খেলেন। আশা করেছিলেন সুলতানা কামাল, আনু মুহম্মদ, শহীদুল্লাহরা তেল-গ্যাস প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা কমিটির ব্যানার ফেলে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’... না, থুক্কু, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে খালেদার নৌকায় বসে পড়বে। তা হলো না। আনু মুহম্মদ বিবৃতি দিয়েছেন, তারা খালেদার সঙ্গে আন্দোলনে যাবেন না। গসিপ ছিল কেরি সাহেব আসছেন আলবদর কাশেম আলীকে ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে নামাতে। যারা এসব বলেন তারা আমেরিকানদের চেনেন না। আমেরিকানরা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করে যতদিন দরকার, দরকার ফুরালে ছুড়ে ফেলে দেয়। লাদেনের কথা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তৃতীয়ত. খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই’, ভাইজান গণতন্ত্র দেন।’ কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বাংলাদেশ নয়। এখন ভিন্ন এক বাংলাদেশ, যা বিশ্ববাসীর কাছে রোল মডেল। বাংলাদেশের গণতন্ত্র বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে, কোন কেরি বাবু নয়। এখন তারাই আমাদের সঙ্গে হাঁটবেন, আমরা না। ২০০১ সালের মতো জঘন্য ভোট লুট ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চিন্তা এখন বস্তাপচা। ওটি দিয়ে এখন যে আর কাজ হবে না তা কেরি সাহেবরা ভালই বোঝেন। ’৭৫-এর পর থেকে জিয়া-এরশাদের মিলিটারি শাসন ও খালেদা জিয়ার না-সিভিল, না-মিলিটারি শাসনে তরুণ প্রজন্মের একটি অংশকে বিভ্রান্ত করা গেছে এবং সেই বিভ্রান্ত অংশ শিবির থেকে জঙ্গীতে নাম লিখিয়েছে। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচন ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে তরুণ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে তাদের মধ্যকার সুপ্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলে ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ সেøাগান তুলে বাংলাদেশের মূলধারার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়ে বসে এবং হেইয়া-হো বলে নৌকা তীরে ভেড়ায়। এই তরুণ প্রজন্মই বঙ্গবন্ধু হত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, একাত্তরের গণহত্যা, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ মঞ্চ বানায়, রাজপথে মিছিল করে, ২০০৮-এ ব্যাপক ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে ম্যান্ডেট প্রদান করে। ঠা-া বা স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হলেও পুতিনের নেতৃত্বে মস্কো আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। ভারত-মস্কো বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, তদুপরি জাপানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চীনও এখন বাংলাদেশের বন্ধু হতে চায়। আবার বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের সঙ্গেও চীনের বন্ধুত্ব এখন সময়ের ব্যাপার। এ অবস্থায় বিএনপিকে ক্ষমতায় এনে আমেরিকার কি লাভ হবে। একটা নপুংশক সরকার দিয়ে আমেরিকা কেন সুদান-ইরিত্রিয়ারও কোন লাভ হবে না। তাছাড়া কে বাংলাদেশ চালাবে তা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের জনগণ এবং সেই জনগণ আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধির প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। রাজাকার-আলবদর যুদ্ধাপরাধী নিয়ে খালেদার ঐক্য নয়। যে সমৃদ্ধি এরই মধ্যে অর্জিত হয়েছে তা বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছে। ৭.০২% জিডিপি বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশেরও এখন স্বপ্ন। যে পাকিস্তান নিজের দেশের জনগণকে রুটি দিতে পারে না অথচ বাংলাদেশে জঙ্গীদের অর্থ-অস্ত্র সাহায্য দেয়, সেই পাকিস্তান সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ নোবেলজয়ী ড. অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নয়নের সকল সূচকে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে, এমনকি অনেক সূচকে ভারতকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে।’ এই প্রেক্ষিত-প্রেক্ষাপটে আমেরিকার ভড়ৎবরমহ ঢ়ড়ষরপু নতুন মাত্রা নেবে এটাই তো স্বাভাবিক। ডিফিটেড যুদ্ধ নেতা কারও সমর্থন পায় না। অবশ্য খালেদা জিয়ার এসব বোঝার মতো মনমানসিকতা আছে কিনা সেটাই প্রশ্ন। ‘আমেরিকা যার বন্ধু তার আর শত্রুর প্রয়োজন পড়ে না’Ñ কথাটি আমরা এখনও পুরোপুরি অবিশ্বাস করতে চাই না। মূলত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার বিরোধিতা এবং দেশে দেশে তাদের অপতৎপরতার অভিযোগ মোটেই অমূলক ছিল না। একের দোষে সবাই অপরাধী হয়ে যায় কখনও কখনও। মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার জনগণ, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা আমাদের সমর্থন করেছে। অনেকে আমাদের পক্ষে আন্দোলন করেছে। অপরাধ করেছে আমেরিকার প্রশাসন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী একাত্তরে নিউইয়র্কে তৎকালীন পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পর তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করেন। আমাদের মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং ওয়াশিংটনে কর্মরত ইকোনমিক কাউন্সিলর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে কাজ করেন। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ : মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলো’ শীর্ষক দৈনিক প্রথম আলোয় এক লেখায় উল্লেখ করেছেন- মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকে নিউইয়র্কের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বাংলাদেশের বিশেষ বন্ধু হিসেবে কাজ করেছেন। কাউন্সিল ফর পিস থ্রু রিলিজিয়ানসের মহাসচিব হোমার জ্যাক ছিলেন তাদের একজন। আরও ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব জুরিস্ট সদস্য জন সলসবার্গ, ইউএন করেসপন্ডেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. জয়ন্ত ভট্টাচার্য। হোমার জ্যাক আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক জয়ন্ত ভট্টাচার্যের অফিস দুটো হয়ে উঠেছিল জাতিসংঘকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সব কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী লিখেছেনÑ তখন মার্কিন পত্র-পত্রিকার বেশিরভাগই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছে। যেমন বাংলাদেশের প্রথম স্মারক নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস-এর ৮ আগস্ট সংস্করণের স্ট্যাম্প বিভাগের পুরো পাতাজুড়ে ছাপা হয়েছিল ‘স্ট্যাম্প : বাংলাদেশ : ট্রিড উইথ কশন’ শিরোনামে ডেভিড লিডম্যানের বিশেষ প্রতিবেদন। মাহমুদ আলী উল্লেখ করেন, ‘হোমার জ্যাকের উদ্যোগে আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একাত্তরের ২৩ নবেম্বর তারা জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি ও রিপাবলিকান পার্টির নেতা জর্জ ডব্লিউ বুশ সিনিয়রের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জর্জ বুশ সিনিয়র খুব আন্তরিক ছিলেন। বললেন, মার্কিন জনগণ তো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে।’ বস্তুত রিচার্ড নিক্সন বা হেনরি কিসিঞ্জারই কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নন। এরা যেমন পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছেন, কূটনৈতিক সাপোর্ট দিয়েছেন, যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছেন, এই গেল একদিক, আরেকদিকও আছে- মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ ‘সেভেন ফ্লিট’ যখন বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা করে তখন নিউইয়র্ক মেডিসন স্কোয়ারে চলছে বাংলাদেশ কনসার্ট। বুশ তাও স্মরণ করলেন। স্মরণ করলেন এ্যালেন গিন্সবার্গের সেই বিখ্যাত কবিতা ‘ঝবঢ়ঃবসনবৎ ড়হ ঔবংংড়ৎব ৎড়ধফ ’। আমরা জানি তখন আমেরিকায় বেশকিছু বাংলাদেশ কনসার্টের আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান নিউইয়র্ক প্রবাসী ভারতীয় সঙ্গীতজ্ঞ প-িত বরিশংকর (যার আদিনিবাস যশোরের কালিয়ায়) এবং জোয়ান ব্যেজ, জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলন প্রমুখ ছাড়াও এসব কনসার্টে প্রচুর মার্কিন প্রবাসী ছিলেন। কনসার্টে জোয়ান, ব্যেজ রচিত ও সুরারোপিত গানটি ছিল (বাংলা অনুবাদ) ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অস্তগামী সূর্যের শেষ রেশ লক্ষ মানুষ নিহত, এই তো বাংলাদেশ ... ... ... ... ... জাতি চায় আজ নতুন স্বদেশ মাতৃভূমির দাবিতে জীবনের সমাবেশ।’ জর্জ হ্যারিসনের গান ‘ ... ... ... ... ... এতো বড় এতো মর্মঘাতী বিপর্যয় না- আমি এই বিপর্যয়ের মানে বুঝি না না- এতো বিশাল বিপর্যয় জীবনে আমি দেখিনি বন্ধুগণ, সাহায্য করো, ফিরিয়ে দিও না- ... ... ... ... ... মুক্ত কর বাংলাদেশের জনগণকে... এ্যালেন গিন্সবার্গের গান ‘ঝবঢ়ঃবসনবৎ ড়হ ঔবংংড়ৎব ৎড়ধফ (বাংলা) কত শত মানুষের চোখ আকাশটা দেখে কত শত বুভুক্ষু মানুষ যশোর রোডের পাশে ঘর বাঁধে... মৌসুমী গাঙ্গুলি নামের একজন শিল্পী বাংলায় এই গানটি গেয়েছেন। হৃদয় বিদারক। এলেন গিন্সবার্গ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যশোর রোড ধরে বাংলাদেশের বনগাঁও পর্যন্ত এসেছিলেন। বাংলাদেশের অসহায় নির্যাতিত নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বৃষ্টিতে কাদা মাড়িয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছিল। খাবার নেই, আশ্রয় নেই, রোগে ওষুধ নেই- এসব দেখেই গিন্সবার্গের প্রাণ কেঁদেছিল। ডেমোক্রেট এ্যাডওয়ার্ড কেনেডি যখন এসেছিলেন তখন জন কেরিও তার সঙ্গে কাজ করেছেন বলে শুনেছি। বস্তুত জন কেরির সফরটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে আমেরিকার নীতিতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। এতদিন বাংলাদেশের বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা বিশ্বাস করতেন পাকিস্তান ও কেরি সাহেবরা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে ২০০১ সালের মতো বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে। দেখা গেল তিনি বাংলাদেশে এলেন। প্রথমেই উল্লেখ করেছি ধানম-ি বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তবেই অন্য কাজ করেন। মীর কাশেম আলীর ফাঁসিও ঠেকল না। এমনকি তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন না, বরং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ইউএস এম্বেসিতে গিয়ে দেখা করেন প্রোটোকল ব্রেক করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কাছে সব হতাশ। জন কেরির সফর বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ফলই দেবে। ঢাকা : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব নধষরংংযধভরয়@মসধরষ.পড়স
×