ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দিনেশ মাহাতো

অদম্য ক’জন নারী ও অন্যান্য

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অদম্য ক’জন নারী ও অন্যান্য

(পূর্ব প্রকাশের পর) চাচার বন্ধুটি মারা গেছে বছর খানেক আগে (২০০৩) সালে। রত্ন আপা পড়ে রাজশাহী কলেজে অর্থনীতিতে ৪র্থ বর্ষে ২০০৪ সালে। আমি তখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আমি ও চাচা যখন তাদের বাড়িতে যাই তখন তিন বোনই রাজশাহীতে ছিল। রতœা রাজশাহী কলেজ, মেজটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানে ২য় বর্ষে পড়ত। ছোটটি রাজশাহী মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ত। তিন বোন এক সঙ্গে থাকত রাজশাহী ঘোষপাড়ার একটি রুম নিয়ে। বর্তমানে তাদের অবস্থান অনেক ভাল। বড় বোন রতœা একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। মেজ বোন একটি বেসরকারী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। ছোট বোন বেসরকারী কলেজের শিক্ষিকা। হয়তবা মনে হতে পারে এরা তো তেমন বড় কিছু করে না? কিন্তু নিজ পরিশ্রমে মেয়ে হয়ে শত বাধা অতিক্রম করে তাদের এ সাফল্য অনেকটা সাগর সেচে মুক্তা আনার মতোই। এদের মা একজন সার্থক মাতা। কেননা পাড়া প্রতিবেশীসহ আত্মীয়স্বজন বহুবার মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে চাপ দিয়েছিল। কিন্তু তিনি শুধু বলতেন আমি যতদিন বেঁচে আছি ভিক্ষা করে হলেও মেয়েদের পড়াশোনা শেষ করাব এবং শেষ পর্যন্ত তিনি তা করে দেখিয়েছেন। আজ এলাকার একজন সফল মাতা হিসেবে তিনি পরিচিত। কেননা মনের জোর ও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে সফলতা ধরা দেয়। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় নারীদের বাড়ির কাজের কোন মূল্য দেয়া হয় না। কাজ বলতে অনেকে শুধু চাকরিকেই মনে করে। তা আসলে ঠিক নয়। একজন গৃহিণী, যে চাকরি করে না তার স্বামী নির্দ্বিধায় বলে দেয় আমার স্ত্রী কিছু করে না। এ বিষয়ে বহু পুরনো সেই কৌতুকটি দিয়ে আমার এ লেখাটি শেষ করতে চাই। এক উচ্চপদস্থ চাকুরে। ধরা যাক তার নাম মি. ওয়াই। নয়টা-পাঁচটা চাকরি করে আর বাসায় ফিরে স্ত্রীকে দেখে ঈর্ষান্বিত হয়। কারণ স্ত্রী কোন কাজ করে না। কী আরামেই আছে! মি. ওয়াই ঈশ্বরের কাছে কান্নাকাটি করল ‘হে ঈশ্বর’ আমি কাজ করতে করতে ক্লান্ত। অন্তত দিন কয়েকের জন্য হলেও আমাকে আমার স্ত্রী করে দাও আর আমার স্ত্রীকে আমি। আমি একটু ঘরে বসে আরাম করতে চাই। আমার স্ত্রীও বুঝুক আমি কী রকম পরিশ্রম করি! তো ঈশ্বরের মায়া হলো। তিনি তাই করলেন। মি. ওয়াই সকালে উঠেই দেখতে পেল, বিধাতার বরে সে স্ত্রীতে পরিণত হয়েছে আর তার স্ত্রী হয়েছে তার স্বামী। মহাখুশি মি. ওয়াই বিছানায় শুয়ে শুয়ে চাদরে পা ঘষতে লাগল। ওহ্্ কী মুক্তি! সকালে উঠে দাড়ি কামানোর ঝামেলা নেই, অফিসে ছুটে চলা নেই- এই জীবনের কোন বিকল্প আছে? ভাবতে না-ভাবতেই স্বামীর নির্দেশ বাথরুমে গরম পানি দাও। নাস্তা শেষে স্বামীর পায়ের কাছে মোজাসহ জুতাজোড়া এগিয়ে দিতে হলো। হটপটে লাঞ্চের জন্য তিন চার পদের খাবার ভরে দিতে হলো। এরই মধ্যে ছোট ছেলে ঘুমের মধ্যে বিছানা ভিজিয়ে দিয়েছে। ওর ন্যাপি বদলাতে গিয়ে চশমা ঘড়ি হাতের কাছে না পাওয়ায় স্বামীর সে কি আস্ফালন! স্ত্রীকে বকা দিয়ে স্বামী বেরিয়ে গেল। বড় ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে প্রাতঃক্রিয়াদি সারিয়ে নাশতা খাইয়ে, টিফিন রেডি করে ঘুমন্ত ছোটটিকে ঘাড়ের ওপর নিয়ে ওকে স্কুলে পৌঁছে দিতে হলো। ছেলের স্কুল থেকে ফেরার পথে ছোট ছেলেকে কোলে নিয়েই কাঁচাবাজার সেরে ঘরে ফিরে মুখে চারটে গুঁজে সকালের এঁটো থালাবাসন মাজতে বসল। তারপর ঘর মোছা, কাপড় কাচা, রান্না করা তারপর আবার ছুটল বড় ছেলেকে স্কুল থেকে আনার জন্য। স্কুল থেকে এনে তাদের গোসল করিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিয়ে ব্যাংকে দৌড়াতে হলো গ্যাস বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে, ওই দিনই ছিল জমা দেয়ার শেষ তারিখ। মিনিট দশেকের মধ্যে স্বামী অফিস থেকে ফিরলে তার ছোটখাটো সেবাসহ চা নাশতা পরিবেশন করতে হলো। সন্ধ্যায় স্বামী টিভি দেখতে বসলে সে বাচ্চাদের পড়াতে বসাল। তারপর তাদের খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম পাড়িয়ে দেয়া। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বিছানায় পিঠ পড়তে না পড়তেই ঘুমের অতলে তলিয়ে যেতে লাগল স্ত্রীরূপী মি. ওয়াই। ভোর না হতেই ছোট বাচ্চাটির চিৎকারে যখন ঘুম ভাঙল তখন স্ত্রীরূপী মি. ওয়াই উর্ধলোকে দুহাত তুলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ‘হে ঈশ্বর, খুব শিক্ষা হয়েছে, আমি আমার ইচ্ছে ইউড্র করছি। প্রভু, আমাকে আমার আগের রূপে ফিরিয়ে দাও। জবাবে ঈশ্বরের দৃঢ় অথচ দয়াদ্র কণ্ঠ ভেসে এলো ‘বৎস্য, আমি খুব দুঃখিত। আগামী ১০মাসের আগে সেটা আমার পক্ষেও সম্ভব নয়। কারণ, তুমি গত রাতে গর্ভধারণ করেছ।’ পাঠক আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে কী? কাজ যেমনই হোক তা কাজ। অনৈতিক ও অসামাজিক কাজ ছাড়া সকল কাজই সম্মানের। ইমেল : [email protected]
×