ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাবনাময় জীবনের জয়গানই বাঞ্ছনীয়

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সম্ভাবনাময় জীবনের জয়গানই বাঞ্ছনীয়

দেশে যেভাবে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের আশঙ্কা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে তা যেমনই ভয়াবহ তেমনিই উদ্বেগজনক। এই ফাঁদ পাতা ভুবনে পা রাখছে তরুণ প্রজন্মের নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে। কারণ বেশ কিছুদিন থেকে নারী জঙ্গীর আস্তানাসহ প্রাসঙ্গিক অনেক কিছুই জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক সময় মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের যেভাবে জঙ্গীপনায় উদ্বুদ্ধ করা হতো, সেখানে এখন মোড় পরিবর্তন করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলাই যায়, অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তির উন্নত ব্যবহার ছাড়া দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যথাযথভাবে সমন্বয় সাধন করা যাচ্ছে না। সুতরাং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ এবং মেধাতালিকায় যারা যোগ্যতম তাদেরকেই এখন এসব মৌলবাদী এবং জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এর আগে যেসব নারী জঙ্গী ধরা পড়েছে তারা সাধারণ গৃহবধূ এবং স্বল্প কিংবা অশিক্ষিত নারীরা। এবার ঢাকা ও গাজীপুর থেকে যেসব জঙ্গী নারীরা ধরা পড়ে তারা শুধুমাত্র উচ্চ শিক্ষিতই নয় তথ্য-প্রযুক্তিতেও তারা ভীষণভাবে দক্ষ। দেশী এবং আন্তর্জাতিক সমমনা সংস্থাগুলোর সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখত উন্নত তথ্য-প্রযুক্তির সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে। ঢাকা থেকে আটক নারী ইসতিসনা আক্তার ঐশী ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিস চিকিৎসক। যে কিনা তথ্যপ্রযুক্তির সামাজিক মাধ্যমের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রক্ষা করে যেতো এবং নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের ও একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। অন্যদিকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক (সম্মান) পড়ুয়া তিনি ছাত্রীও এই জঙ্গী সংগঠনের অপতৎপরতার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন। সেখানেও আধুনিক উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির একটি বড় ধরনের যোগসাজশ রয়েছে। তাদের কাছ থেকে ল্যাবটপসহ বহু জিহাদী কাগজপত্র ও বই জব্দ হয়। ঘটনাগুলো যেমন চমকপ্রদ, তেমনই ভীতিকর। কারণ যে লক্ষ্মী প্রতিমার মতো নারীরা সংসার গড়ে, রক্ষা করে এমনকি সামাজিক বন্ধনকে সুসংহত করে তারা আজ কোন সর্বনশের শেষ প্রান্তে গিয়ে দাঁড়াল। যদিও এদের সংখ্যা খুবই কম, হাতেগোনার মতো। যে কোন দেশের মেয়েরা লেখাপড়া ফাঁকে ফাঁকে নিজেকে তৈরি করে সমাজ সংসবের জন্য। স্বপ্ন দেখে নিজের প্রতিষ্ঠা, বাবা-মাকে খুশীর করার এক অদম্য ইচ্ছা সর্বোপরি দেশের প্রতি কিছুটা হলেও দায়বদ্ধতা। উদ্দীপ্ত তরুণদের মহামূল্যবান সময়ের অপচয় করে নিজেকে স্বাবলম্বী এবং উপযুক্ত করার বিপরীতে বাসা বেঁধেছে স্বাবলম্বী এবং উপযুক্ত করার বিপরীতে বাসা বেঁধেছে এক নতুন ধর্মীয় উন্মাদনার নৃশংস অভিযাত্রায়। আর ইহকাল এবং পরকাল কোনটাই নেই। রবন্দ্রনাথের মতে, নারী দ্বৈতসত্তার একটি মায়া, মমতা আর স্নেহে নারী মাতা আর অন্যটি প্রেমে পূজায় নিবেদনে নারী প্রিয়া। নারীর এই চিরন্তন দীপ্ত শিখাকে এক নৃশংস উন্মুক্ততার বিকারগ্রস্ত করে নিজেকে বলিদানের মধ্যে কি আসলেই সেটা কেউই জানে না। এক অচেনা, অজানা উম্মাদনার শিকার হয়ে স্নেহশীলা নারীরা যেভাবে নির্মাণ আর নিষ্ঠুরতার মধ্যে নিজেদের সঁপে দিচ্ছে সেটা কখনো কোন মতেই কারও ও কোন অভীষ্ট লক্ষ্য হতে পারে না। বরং সুস্থ স্বাভাবিক পথে নিজের শ্রম, মেধা এবং সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেকেসহ পুরো সমাজকে বিকাশ করার নিরলস প্রচেষ্টার মধ্যেই সবার মঙ্গল এবং কল্যাণ নিহিত। ধ্বংসের পথে নয়, সম্ভাবনামর জীবনের পথে মানব কল্যাণের ব্রত নিয়েই এগিয়ে যাওয়াতেই সত্যিকারের মুক্তি। যে মুক্তি নিজেকে সমৃদ্ধ করবে, সমাজ-বিকাশের পথ ত্বরান্বিত করবে সর্বোপরি সবার আশা-আকাক্সক্ষার সফল মিলন ঘটবে। নিজের ধর্মকে যথার্থ জানা এবং বোঝা প্রতিটি মানুষের নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব। কোন ধর্মই রক্তাক্ত পথ নির্দেশ করে না। কারণ মানুষের কল্যাণেই ধর্ম যা কোনভাবেই জাগতিক সমৃদ্ধকে বাদ দিয়ে নয়। অর্থাৎ এ পৃথিবীতে সুস্থ এবং সুষ্ঠুভাবে নিজেকে বিকাশ এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সত্যিকারের ধর্ম। সততা, নিষ্ঠা এবং মানবিকতার সঙ্গে নিজের জীবনযুদ্ধে জয়ী হলেই সত্যিকারের ইবাদত করা হবে। কোন রক্তাক্ত, নৃশংসা উম্মাদনার আত্মাহুতি দিয়ে জীবনের জয়মাল্য আসে না।
×